ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

দ্রুত এগিয়ে চলছে আগরতলা-আখাউড়া রেলপথের নির্মাণ কাজ

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
দ্রুত এগিয়ে চলছে আগরতলা-আখাউড়া রেলপথের নির্মাণ কাজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ত্রিপুরার আগরতলা থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতেই এগিয়ে চলছে বলে জানান ত্রিপুরা সরকারের পরিবহন দফতরের মন্ত্রী প্রাণজিৎ সিংহ রায়।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা জানান।

আন্তর্জাতিক এই রেল প্রকল্পের কাজের সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভারতীয় মোট পাঁচ কিলোমিটার অংশের পাঁচ মিটার ছাড়া বাকি অংশের জমির অধিগ্রহণ ও মাটি কাটার কাজ শেষ।

আগরতলা রেলস্টেশন থেকে শুরু হয়ে প্রায় ৫শ’ মিটার পার হয়ে ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক অতিক্রম করে যাবে এই রেললাইনটি। স্টেশন থেকে জাতীয় সড়ক পর্যন্ত অংশের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। তবে জাতীয় সড়ক থেকে নিশ্চিন্তপুরের যে অংশ দিয়ে রেললাইন বাংলাদেশে প্রবেশ করবে, সেই অংশ পর্যন্ত মাটি কাটার কাজ শেষ হয়েছে।  

ভারতীয় অংশের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আগরতলা রেলস্টেশন থেকে শুরু করে রেললাইনটি সাড়ে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ালপুলের উপর দিয়ে যাবে। এজন্য উড়ালপুলে পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি পিলারের পাইলিং সম্পন্নও হয়েছে। কাজগুলো করতে ঘটনাস্থলে রয়েছে- ভারী মেশিন, উঁচু ক্রেন, মাটি কাটা ও সমান করার নানা ধরনের ড্রেজার, মাটি চাপানোর জন্য রোড রোলার, পাইলিংয়ের জন্য লোহার শিট বাঁকা করে পাইপের মতো করার মেশিন এবং পাইপ মাটির নিচে ঢুকানোর জন্য অত্যাধুনিক মাটি খোঁড়ার যন্ত্র। এছাড়া নির্মাণ শ্রমিকরাও রেললাইনের মাটি কাটা অংশের পাশেই অস্থায়ী শেড তৈরি করে থাকছেন।  

নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে খুব বেশি কিছু বলতে আগ্রহী নয় শ্রমিকরা। তারা বাংলানিউজকে জানান, বৃষ্টি হলে কাজের গতি কিছুটা কমে যায়। আর বাকি সময় পুরো দমেই কাজ চলছে। এখানে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় সবাই পশ্চিমবঙ্গসহ অন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন।

নির্মিয়মান রেলপথের আশেপাশের এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা বাংলানিউজকে জানান, এই রেলপথ নিয়ে তারা খুব উৎসাহী। দ্রুত কাজ শেষ হয়ে উভয় দেশের মধ্যে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হোক- এটাই তারা চান। এটা একদিকে যেমন আবেগের, অন্যদিকে এটি চালু হলে নতুন করে রোজগারের পথও খুলবে অনেকের। কারণ নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ট্রেনে পণ্য উঠানো ও নামানোর জন্য অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত রেলওয়ে ইয়ার্ড স্থাপনের জায়গাও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ট্রেনের কন্টেনারে করে যেসব পণ্য আসবে, এগুলো এই ইয়ার্ডেই নামানো হবে। এরপর সড়ক পথে বা অন্য ট্রেনে করে এগুলো রাজ্যের ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাবে। এতে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রথম এই রেলপথের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ত্রিপুরার অংশে এই রেলপথ তৈরি করছে ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নির্মাণ সংস্থা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (ইরকন)। অন্যদিকে বাংলাদেশ অংশে রেলপথ নির্মাণ করছে বাংলাদেশি স্থানীয় সংস্থা। তবে বাংলাদেশি সংস্থাকেও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিচ্ছে ইরকন। আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিশ্চিন্তপুর সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ তৈরি করা হবে ব্রডগেজে। আর নিশ্চিন্তপুর থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন করা হবে ডুয়েল গেজে।  

২০২০ সালের জানুয়ারিতে এই রেলপথে ট্রেন চালু করা যাবে বলে ভারতীয় রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এই মেগা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে আদৌ শেষ করা সম্ভব হবে কিনা, তাই এখন দেখার বিষয়।  

সরেজমিনে দেখার পর ধারণা করা হচ্ছে, এটি চালু হতে আরও সময় লাগবে। সবচেয়ে বেশি সময় লাগবে উড়ালপুল নির্মাণে। কারণ সেখানে ১৫৭টি পিলারের মধ্যে মাত্র কয়েকটির পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে ২০২০ সালের মধ্যে এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কিনা, তাই এখন প্রশ্ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
এসসিএন/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।