ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

দারিদ্র্যপীড়িত জীবন কবে পাবেন সরকারি সুবিধা?

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৯
দারিদ্র্যপীড়িত জীবন কবে পাবেন সরকারি সুবিধা?

আগরতলা (ত্রিপুরা): জরাজীর্ণ ঘর, বাঁশের মাচা, একটা পুরোনো স্যুটকেস, একটা টর্চলাইট, একটা লুণ্ঠন বাতি, মাছ ধরার জাল, কিছু হাড়ি-পাতিল, বস্তায় কিছু ধান আর দেয়ালে লক্ষ্মী দেবীর ছবি। এ নিয়েই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে কোনোমতে বেঁচে আছেন ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার আড়ালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের (জিপি) অন্তর্গত রাজীব কলোনির বাসিন্দা ৫১ বছর বয়সী জীবন চৌধুরী।

সিপাহীজলা জেলার চড়িলাম এলাকার বাজারে প্রবেশের মুখ থেকে পূর্ব দিকে চলে গেছে একটি সরু রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে ২ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই রাজীব কলোনি।

আর এই এলাকারই হতদরিদ্র বাসিন্দা জীবন চৌধুরী।  

ঘরের দেয়ালে লক্ষ্মী দেবীর ছবি থাকলেও, ঘরে যে কোনো লক্ষ্মী নেই সেটি জীবন চৌধুরীর ঘরে পা রাখতেই বোঝা যায়। টের পাওয়া যায় তার বর্তমান দুরাবস্থার। একটি ঘরের মাঝখানে বাঁশ দিয়ে দু’টি অংশে ভাগ করা হয়েছে। একটি অংশ শোয়ার, অপরটি রান্নার জন্যে। ঘরের কিছু অংশে ছাউনি থাকলেও, বেশিরভাগ অংশেই খোলা আকাশ। ঘরের জিনিস বলতে- বাঁশের মাচা, একটা পুরোনো স্যুটকেস, একটি টর্চলাইট, একটি লুণ্ঠন বাতি, বস্তায় রাখা কিছু ধান, মাছ ধরার জাল, কিছু হাড়ি-পাতিল, আর দেয়ালে লক্ষ্মী দেবীর ছবি।

জীবন চৌধুরীর ঘরের জরাজীর্ণ অবস্থা।

জীবন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। বিয়ে না করায় দীর্ঘ বছর যাবৎ একাই থাকি। ছোটভাই আছে একটা। সে সরকারি চাকরি করে। আগরতলাতেই থাকে। বছরে শুধু একবার এসে ধান নিয়ে যায়।   

‘এই জরাজীর্ণ ঘর, ছোট একটা ডোবা, আর চাষের জমি- সব মিলিয়ে এক বিঘার মতো জায়গা আছে। তবে সেটিও আমার নয়, মৃত বাবার নামে। জমির ধান আর ডোবার মাছ বিক্রি করে কোনোরকমে জীবন যাপন করি। ’

অবস্থা এমন শোচনীয় হলেও কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না বলেই বাংলানিউজকে জানান জীবন।  

সারা দেশেই দ্ররিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য বিলো পোভার্টি লেভেল (বিপিএল) রেশন কার্ড চালু করা হয়েছে। এছাড়া যাদেরকে এই কার্ড দেওয়া যায়নি তাদের চিহ্নিত করে বিপিএল তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সব মানুষ কম মূল্যে সরকারি ন্যায্য মূল্যের দোকান থেকে চাল, কেরোসিন, লবণসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পান। এমনকি সরকারি বাসগৃহ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা অগ্রাধিকার পান।  

কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে এ সুবিধার আওতায় নেই জীবন চৌধুরীর নাম। এ তালিকা তৈরির সময় যখন জরিপ করা হয়েছে, তখন কেউই তার কাছে আসেননি। এছাড়া মন্ত্রী কিংবা বিধায়ক তো দূরের কথা, গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিও কোনোদিন তার কাছে আসেননি।

তবে ভোট যে মৌলিক অধিকার, সেটি তিনি জানেন। নিয়মিত ভোটও দেন। তবে মিলছে না কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা।

তার ব্যাপারে কথা বলা হয় আড়ালিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সব শুনে তারা বাংলানিউজকে জানান, এমন লোক যে এলাকায় আছেন, সেটি তারা জানেন-ই না। তারা বিষয়টি নোট করে রাখছেন। সামনে যেহেতু পঞ্চায়েত নির্বাচন, তাই এখনই কিছু করা সম্ভব নয়। কারণ নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনের আগে কোনো ধরনের সহায়তামূলক কাজ করা যায়না। তার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হবে।

তবে কবে নাগাদ সরকারি সুবিধার আওতায় আসবেন দারিদ্র্যপীড়িত জীবন, সেটিই এখন দেখার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৯
এসসিএন/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।