ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

ত্রিপুরার উষ্ণ নিম্নভূমিতে আপেল ফলিয়ে তাক লাগালেন মিঠুন

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, মে ৪, ২০২০
ত্রিপুরার উষ্ণ নিম্নভূমিতে আপেল ফলিয়ে তাক লাগালেন মিঠুন গাছে আপেল। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): ভারতের আপেল মানেই প্রথমেই আসে বরফঢাকা পাহাড়ি অঞ্চল কাশ্মীরের নাম। শীতপ্রধান অন্য অঞ্চলেও হয় কিছু কিছু। কিন্তু উষ্ণ অঞ্চলে কমলা ফললেও আপেল ফলার কথা শোনাই যায় না। তবে ত্রিপুরার মতো উষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলে আপেল বাগান করে এবং তাতে ফল ধরিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ত্রিপুরার উদ্যমী কৃষক মিঠুন সরকার (২৭)।

কিন্তু কীভাবে সম্ভব করলেন এ অসাধ্য। সেটা জানতে বেরিয়ে এলো তাকে উৎসাহ দিয়েছে বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞাপন।

লোকে তাকে পাগল বলবে বলে এতদিন ছিলেন লোকচক্ষুর অগোচরে। এবার গাছে ফল আসায় ফিরে পেয়েছেন নিজের মনোবল।

বিস্তারিত জানতে ত্রিপুরার পশ্চিম জেলা অন্তর্গত বামুটিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের গ্রামের লালটিলা এলাকা বাসিন্দা মিঠুনের বাগানে যাওয়া। আপেল গাছ।  ছবি: বাংলানিউজবাংলানিউজকে মিঠুন জানান, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একটি টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনে টুকটুকে লাল রঙের আপেল দেখে হঠাৎ করে এই ফল চাষের ইচ্ছে জাগে মনে। সেই মতো তিনি বাজার থেকে আনা আপেল থেকে বীজ সংগ্রহ করে  চারা তৈরি করেন। কিন্তু পরে গাছ মারা যায়।

পরবর্তীসময়ে ২০১৮ সালে হিমাচলপ্রদেশ থেকে ২০০টি আপেলের চারা অনলাইনে আনান। কিন্তু তার হাতে এসে পৌঁছায় ১৯২টি। বর্তমানে ১৭৩টি গাছ রয়েছে তার বাগিচায়। প্রতিটি চারা কিনেছিলেন ৭৫ রুপি করে। মোট এক বিঘা জমিতে এই গাছগুলি লাগান।

উষ্ণ অঞ্চলে আপেল ফললো কীভাবে? উত্তরে তিনি বলেন, হিমাচল প্রদেশ আপেলের এই বিশেষ জাত এমনভাবে তৈরি করেছে যে নিচু ভূমি ও উষ্ণ আবহাওয়ায়ও ফল দেবে। তবু সমতলের লোকের মধ্যে আপেল চাষের আগ্রহ জন্মেনি। হয়তো ভয় পেতো।  আমার গাছগুলোতে মাত্র দুই বছরে ফল এসেছে। তবে অল্প কিছু রেখে বাকি গাছের মুকুল ভেঙে ফেলেছি। ছোট গাছে ফল ধরলে গাছ বেশিদিন বাঁচে না। ফলগুলো পরিপক্ব হবে জুন, জুলাই মাসে। গাছের বয়স ৪-৫ বছর হলে তখন ফল বেশি হবে। আপেল গাছ।  ছবি: বাংলানিউজআপেলের চারা গাছ আনানো, জমি তৈরিসহ বাগান তৈরি করতে সবকিছু মিলিয়ে মোট খরচ হয় প্রায় তিন লাখ রুপি। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সব খরচ করেন। সরকারিভাবে তেমন কোনো সহায়তা পাননি। প্রাথমিক অবস্থায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করলেও এখন তিনি গোবর ও জৈব সার ব্যবহার করছেন অর্গ্যানিক ফলনের বিষয়টি মাথায় রেখে। পাশাপাশি পোকামাকড়ের হাত থেকে ফল রক্ষা করতে তিনি ফোরম্যান ট্র্যাপ ব্যবহার করছেন। এবছরই তার বাগানে প্রথম ফলন এসেছে। লাল এবং সবুজ দু’ধরনের আপেল গাছই রয়েছে তার বাগানে। আপেল বাগানে পরিদর্শনে স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস।  ছবি: বাংলানিউজএতদিন কাউকে তার আপেল বাগান সম্পর্কে বলেননি কারণ আশপাশের এলাকার যে শুনেছে আপেল চাষের চেষ্টা করছেন সে তাকে পাগল আখ্যায়িত করেছে। হাসাহাসি করে বলেছে মাথা খারাপ হয়েছে তাই ত্রিপুরার মতো উষ্ণ অঞ্চলে শীতের ফল চাষের চেষ্টা করছে। বাংলানিউজের কাছে প্রথম তিনি আপেল চাষ সংক্রান্ত বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করছেন বলেও জানান। পাশাপাশি তার মনেও কিছুটা সন্দেহ হয়েছিল। এখন গাছে ফলন আসায় তিনি নিজেও ভরসা পেয়েছেন। আপেল বাগানে চাষি।  ছবি: বাংলানিউজবাগানে আপেল ধরছে শুনে সরেজমিনে পরিদর্শনে যান স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস। পরিদর্শনকালে তিনি বাংলানিউজের কাছে তার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য, ত্রিপুরার মতো রাজ্যে আপেল চাষ করে মিঠুন নজির গড়েছেন। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে চেষ্টা ও মনের ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।

একজন তরুণ বিধায়ক হিসেবে আরও একজন উদ্যমী তরুণ যুবকের এই কাজকে তিনি সাদরে গ্রহণ করেছেন। তিনি জানান অন্য যুবকরাও যাতে মিঠুনকে দেখে নতুন কিছু কাজ করার জন্য উদ্যোগী হয় এবং ত্রিপুরাকে শ্রেষ্ঠ জায়গা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের ফল চাষের ইতিহাসে একটি নতুন পরিচিতি এনে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০২০
এসসিএন/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।