ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

আলুর দানা বীজ উদ্ভাবন করেছেন ত্রিপুরার কৃষি গবেষকরা

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১
আলুর দানা বীজ উদ্ভাবন করেছেন ত্রিপুরার কৃষি গবেষকরা ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): মাত্র ১০০ গ্রাম বীজ দিয়ে এক হেক্টর অর্থাৎ সাড়ে ছয় বিঘা জমিতে আলু চাষ করা সম্ভব। শুনতে অবাক লাগলেও ত্রিপুরার কৃষি গবেষকরা এমন আলু বীজ আবিস্কার করেছেন।

এই বীজের উৎপাদন পদ্ধতিও অদ্ভুত। সূর্য্যালোকের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় বৈদ্যুতিক বাতির।

আগরতলার নাগিছড়া এলাকার অবস্থিত কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা আলুর ফল থেকে দানা বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং এখন বাণিজ্যিকভাবে এই বীজ উৎপাদন করছেন। নতুন উদ্ভাবিত এই বীজের নাম ট্রু পটেটো সিড, যা সংক্ষেপে টিপিএস বলা হয়।

উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টর ড. রাজীব ঘোষ বলেন, আমরা সাধারণত আলু উৎপাদনের জন্য ছোট আকারের যে বীজ ব্যবহার করি তা আসলে গাছের পরিবর্তিত একটি কান্ড, কিন্তু প্রকৃত বীজ বা বোটানিক্যাল সিড হচ্ছে টিপিএস। এই বীজ দিয়ে আলু চাষ করা কৃষকদের জন্য খুব সুবিধাজনক, কারণ এক হেক্টর জমিতে আলু চাষের জন্য মাত্র ১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। অথচ প্রচলিত কান্ডের বীজ দিয়ে এক হেক্টর জমিতে চাষ করতে হলে প্রয়োজন হয় ১ হাজার ৮০০ থেকে প্রায় ২০০ কেজি।

তিনি আরও বলেন, টিপিএস আলু বীজের কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সম্পন্ন এবং উৎপাদন অনেক বেশি হয়, আকারও অনেক ভালো হয়। আলু চাষের অন্যতম একটি সমস্যা হচ্ছে ধ্বসা রোগ, টিপিএস বীজ দিয়ে চাষ করলে এই সমস্যা প্রায় হয় না। সাধারণত আলু গাছে ফুল আসে না। তাই এই টিপিএস আলু বীজ উৎপাদনের জন্য কিছু বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।  

তিনি জানান, আলু গাছে ফুল আসার জন্য নূন্যতম ১১ থেকে ১২ ঘন্টা সূর্য্যালোকের প্রয়োজন হয়, কিন্তু শীতকালে আমাদের এখানে এত সময় ধরে সূর্য্যের আলো পাওয়া যায় না, মাত্র ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সূর্য্যের আলো পাওয়া যায়। ফলে টিপিএস আলু বীজ উৎপাদনের জন্য আলু গাছে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হয় ফুল আসার জন্য। তাই নাগিছড়ার উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রে আলুর দানা বীজ উৎপাদনের প্লটে বৈদ্যুতিক সোডিয়াম ভ্যাপার লাইটের সাহায্যে বাকি সময়ের জন্য আলোর বন্দোবস্ত করা হয়। এখন সন্ধ্যার পর আলু বীজের প্লটে জ্বালানো শত শত বাতি গোটা এলাকাটিকে আলোকিত করে রাখে। এতে প্রতিটি গাছে ফুল আসে ও ফল ধরে। এই ফলগুলি পেকে গেলে বীজ সংগ্রহ করা হয়। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে রাজ্যের একমাত্র উদ্যান ও বাগিচা গবেষণা কেন্দ্রে প্রতি বছর ১০০ থেকে ১১০ কেজি টিপিএস আলু বীজ উৎপাদন করা হয়।  

ত্রিপুরার উৎপাদিত এই দানা আলুবীজের কদর রাজ্যসহ সারা ভারতে রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে ও এই বীজ দিয়ে আলু চাষ হচ্ছে। প্রতিবছর এই বীজের চাহিদা বাড়ছে বিদেশে। প্রতি কেজি টিপিএস বীজের দাম ৩০ হাজার রুপি।  

এই বীজের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি ও কৃষক কন্যান দপ্তর উত্তরপূর্বাঞ্চল উন্নয় পর্ষদের আর্থিক সহায়তায় দ্বিগুণ পরিমাণ এই বীজের উৎপাদন করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। তাছাড়া কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েও টিপিএস বীজ উৎপাদন করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ড. রাজীব ঘোষ।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২১
এসসিএন/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।