ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আগরতলা

ত্রিপুরাকে সবুজ ও দূষণমুক্ত করার জন্য কাজ করছেন সৌমিত্র

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২১
ত্রিপুরাকে সবুজ ও দূষণমুক্ত করার জন্য কাজ করছেন সৌমিত্র সৌমিত্র কাজ করছেন। ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা, (ত্রিপুরা): ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা থেকে খোয়াই জেলা সড়ক ধরে গেলে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে ধলাই জেলার কমলপুর শহর। রাজধানী থেকে উত্তর-পূর্ব দিকের এই শহরে বাস করেন বছর ৩২ বয়সী যুবক সৌমিত্র গোপ।

 তিনি ত্রিপুরাকে সবুজ, স্বচ্ছ, নির্মল ও দূষণমুক্ত করার জন্য কাজ নীরবে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন।  

বাংলানিউজের সঙ্গে তিনি প্রথম এই বিষয়ে কথা বলেন।  

তিনি জানান, ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি এটা নিয়ে প্রথম গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন। প্রথম চারাগাছ লাগান কমলপুরের বাসিন্দা জীতেন্দ্র চ্যটার্জীর বাড়িতে। এখন সপ্তাহের প্রতি বুধবার সবুজ যেকোনো মানুষের বাড়িতে না জানিয়ে উপস্থিত হন চারা গাছ হাতে এবং তাদের বাড়িতে গাছ লাগিয়ে দেন। বিশেষ করে বারোমাসি আম, লিচু ও কাঁঠল, কমলাসহ নানান সব ফলের চারা লাগান। স্বচ্ছ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই প্রথম স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করেছেন।  ওইদিন সুজিত নমঃশুদ্র নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে তার বাড়ির চারপাশে পরিষ্কার করেন। তারপর থেকে প্রতি শনিবার সরকারি অফিসের শৌচালয়, রাস্তার পাশের পাবলিক টয়লেট স্বেচ্ছায় পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিমাসে মাসের একদিন করে কমলপুর হাসপাতাল পরিষ্কার করে দিচ্ছেন।  

এই কাজ করার কারণ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সমাজে সাফাই করার কাজে যুক্ত কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্যে, কারণ ওরাও এই সমাজের মানুষ এবং তারা যে কাজ করছেন তা সামান্য কাজ নয় এই বার্তা দিতে তার এই উদ্যোগ।

এখনো বেশির ভাগ সময় কমলপুরেই এই কাজগুলি করে যাচ্ছেন। তবে সময় ও সুযোগ হলে তিনি অন্যান্য জায়গায় তার এই কাজ করেন। রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষর আগরতলার যোগেন্দ্রনগর এলাকার বাড়িতে গাছের চারা লাগিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের হাতেও চারা গাছ দিয়েছেন।  

ছামনু এলাকার বাসিন্দা উত্তম বনিকের বাড়িতেও চারা লাগিয়েছেন। আগামী দিনে গোটা রাজ্যজুড়ে এই কাজ চালাতে চান তিনি। তার এই কাজের অনুপ্রেরণা ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেও জানান।  এই কাজ করতে গিয়ে কোন ধরনের বাধার শিকার হয়েছেন কী? এর উত্তরে তিনি বলেন, কোন বাধার সম্মুখীন হননি, কিন্তু সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। অনেকে এই কাজ নিয়ে হাসিঠাট্টা করতো এই সব সমালোচকরা ধীরে ধীরে চুপ হয়ে আসছে। তবে, সমাজের সচেতন মহলের মানুষ সবসময়ই তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে যেন এই কাজ থেকে থেমে না যান তার জন্য। এমনকি প্রথমে পরিবারের তরফেও তেমন সহযোগিতা করা হতো না। খারাপ চোখে দেখতো, বলতো পাগলামি করছি। তবে এখন পরিবারের সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান।  

এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোন সহযোগিতা পাননি। সম্পূর্ণ নিজের পকেটের খরচে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো সাধারণ মানুষের বাড়িতে ই লাগাচ্ছেন তিনি। সরকারি জায়গাতে গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেননি। কারণ সরকারি জায়গায় লাগলেও যত্নের অভাবে অনেক গাছেই মারা যেতো। কিন্তু মানুষের বাড়িতে লাগানোর কারণে গাছগুলোতে তারা নিজেরাই যত্ন করেন তাই বেচেঁ আছে।  

সবুজ ত্রিপুরা স্বচ্ছ ত্রিপুরা গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রীর এই স্লোগানকে সফল করাই তার প্রধান লক্ষ্য।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০২১
এসসিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।