ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সৌদি আরব

সৌদি আরবে ইয়েমেন যুদ্ধে পঙ্গু এনামুলের মানবেতর জীবন

মোহাম্মদ আল-আমীন, সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
সৌদি আরবে ইয়েমেন যুদ্ধে পঙ্গু এনামুলের মানবেতর জীবন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নিজে নয় পুরো পরিবারকে নিয়ে সুখে থাকতেই আপনজনদের মায়া-ভালোবাসা ত্যাগ করে ২০০৭ সালে সৌদি আরবে পাড়ি-জমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার তেরকান্দা গ্রামের আব্দুল সোবহানের দ্বিতীয় ছেলে এনামুল হক। নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে দরিদ্র সংসারে ফিরে আসে স্বচ্ছলতা।

রিয়াদ: নিজে নয় পুরো পরিবারকে নিয়ে সুখে থাকতেই আপনজনদের মায়া-ভালোবাসা ত্যাগ করে ২০০৭ সালে সৌদি আরবে পাড়ি-জমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার তেরকান্দা গ্রামের আব্দুল সোবহানের দ্বিতীয় ছেলে এনামুল হক। নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে দরিদ্র সংসারে ফিরে আসে স্বচ্ছলতা।

কিন্তু কে জানতো এনামুলের জীবনে নেমে আসবে ভয়াবহ বিপর্যয়। হারাতে হবে নিজের মহামূল্যবান সম্পদ দুটি পা’কে।
 
এনামুল আল ফাহাদ ক্লিনিং কোম্পানির পরিচ্ছন্ন-কর্মী ছিলেন। অন্যান্য দিনের মতো এ বছরের ৩১ মার্চ সকালে সহকর্মীদের সঙ্গে কাজে বের হন তিনি। কর্মরত অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ করেই শুনতে পান বিকট শব্দ। এর পর আর কিছুই মনে নেই এনামুলের।

জ্ঞান ফেরার এনামুল জানতে পারেন সৌদি-ইয়েমেন যুদ্ধে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি বোমায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তার এক এক সহকর্মী। আর তাকে বাঁচিয়ে রাখতে কেটে ফেলা হয়েছে তার দু’টি পা।

সরকারি খরচে চিকিৎসা চললেও মেলেনি কোনো আর্থিক সাহায্য। তাই এনামুল তার সহোদর ভাই আমিনুলকে নিয়ে কখনো মদিনা, কখনো মক্কা আবার কখনো জেদ্দা শহরে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় এনামুলের। তিনি বলেন, শুনেছি দুর্ঘটনার পর সৌদি সরকার এবং বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজও পর্যন্ত এক পয়সাও কেউ দেয়নি। এমনকি নিয়োগদাতা কোম্পানিও কোনো টাকা দেয়নি। সংসারে থাকা স্ত্রী আর এক সন্তানের খরচ যোগাতে ভিক্ষার বিকল্প না পেয়ে এ পথেই পা বাড়িয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে চিকিৎসাকালীন ছুটিতে আছি। কিন্তু ছুটির পর কোম্পানিতে গিয়ে কোনো কাজ করতে পারবো বলে মনে হয় না।

এনামুল কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, দুটি পা কেটে ফেলা হয়েছে, গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে গেছে, ডান কানে কিছুই শুনতে পাই না। এখন কিভাবে আমি কাজ করবো? আমার কোনো অপরাধ ছিলো না। ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। কিন্তু সরকার কি পারে না কিছুটা আর্থিক সাহায্য করতে, যা দিয়ে আমি আমার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাতে পারি?

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেদ্দা কনস্যুলেটের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এনামুলের বিষয়টি জানিয়ে সহযোগিতার জন্য সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর আসেনি। ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য এনামুলের কোম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
ওএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সৌদি আরব এর সর্বশেষ