ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

শুক্রবারের বিশেষ প্রতিবেদন

পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৬
পানি নেই মিনি কক্সবাজারে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খোলাবাড়িয়া, বিল হালতি, নাটোর থেকে: চারদিকে কচি পাতার সবুজ আলো। কোথাও কোথাও কালচে সবুজের হাতছানি।

মাঝে মধ্যে দু’একটি বড় আকারের পুকুর, কুনি। পুকুরে ভাসছে সুদৃশ্য নৌকা। দু’চোখ যতদূর যায় সবুজ মিশেছে আকাশসীমায়।

এটা শুকনো মৌসুমের রূপ। বর্ষায় থাকে এর ভরা যৌবন। চারদিকে অথৈ পানি। তখন এর নাম থাকে ‘মিনি কক্সবাজার’। নামটি শুনে এসেছি নাটোর থেকে। এদিকে আসবো শুনেই সবার মুখে এক কথা, মিনি কক্সবাজার যাবেন? একটু অবাক হওয়াই স্বাভাবিক। চলনবিল অঞ্চলে আবার কক্সবাজার আসবে কোত্থেকে!

নাটোর শহর থেকে প্রায় ৮-৯ কিলোমিটার দূরে সিংড়া উপজেলার পাটুল আসতেই অটোরিকশাওয়ালা বললেন, ভাই মিনি কক্সবাজার এসে গেছে। বললাম কক্সবাজার সৈকতে পানি কই? তখন বললেন, পানি তো এখন পাবেন না। এটা শুধু বর্ষার ক’মাস থাকে। এসে একটু হতাশই হলাম। আগে কেউ বলেনি এখন পানি নেই।

কংক্রিটের ডুবো সড়ক ধরে একটু এগোতেই চোখে পড়লো দু’পাশের বিশালতা। আধা ঘণ্টার কিছু বেশি সময় পর পৌঁছুলাম খোল‍াবাড়িয়া গ্রামে। অদ্ভুত সুন্দর গ্রাম। সব ক্লান্তি, কষ্ট দূর হয়ে গেলো মুহূর্তে।

হালতি বিলের দ্বীপগ্রাম। জানা যায়, প্রায় ৪০ হাজার একর জমি নিয়ে বিলটি। ব্রিটিশ আমলে হালতি পাখির আবাস ছিলো, সেখান থেকেই নাম হালতি। চলনবিলের অংশ এটা। বিলের মাঝখানে চারটি গ্রাম একে দিয়েছে অসামান্য সৌন্দর্য।

খোলাবাড়িয়া, হালতি, দিঘিরপাড় ও একডালা। এদের প্রাণ আবার খোলাবাড়িয়া। সবগুলোই দ্বীপগ্রাম। বর্ষায় ১০-১২ফুট পানি যখন জমে তখন প্রতিটি গ্রামই হয় একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ওই সময় গ্রামের মানুষের নিদারুণ কষ্টে কাটলেও পর্যটকদের কাছে তখন এটি মিনি কক্সবাজার সৈকত। ঠিক সৈকত না থাকলেও টইটুম্বুর পানিতে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোকে কক্সবাজারে বেড়ানোর সঙ্গে তুলনা করতেই পছন্দ করেন তারা।

বর্ষায় মাছ শিকার ও নৌকা চালানো এসব গ্রামের অধিকাংশ মানুষের প্রধান পেশা হয়ে দাঁড়ায়। বিলের অধিকাংশ জমিই ব্যক্তি মালিকানাধীন। প্রত্যেকের জমি একেবারে কম নয়। এক ফসলি জমির আয় দিয়েই চলেন তারা। তবে বর্ষায় হাজার হাজার পর্যটক এদিকে আসায় নতুন আশা দেখছেন গ্রামবাসী।

তাদের কক্সবাজারে এখন পানি না থাকলেও পরিকল্পনা থেমে নেই। সরকার যখন ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছে, তখন তারাও নতুন আশায় বুক বাঁধছে।

বাজারে কথা হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য একাব্বর বলেন, পাটুল থেকে মিনি কক্সবাজার বললেও সবাই আসে আমাদের গ্রামে। কিন্তু কোনো অবকাঠামো না থাকায় তারা অবস্থান করতে পারেন না। ভরসা কেবল স্কুলঘর। এখানে এক প্লটে ২৭ বিঘা জমি আছে গ্রামের। সরকার থেকে এখানে যদি থাকাসহ বিভিন্ন সুযোগ করে দেয় তাহলে বছরের পাঁচমাস এলাকাবাসীর ভালো আয় হবে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশিসহ বড় বড় মানুষরা এখানে বেড়াতে আসেন কেবল বর্ষা মৌসুমে। কিন্তু অন্য সময় এখানে যে কেউ আসতে পারে নিরিবিলি সময় কাটাতে। শুধু দরকার সুব্যবস্থা।

পাশে থাকা মাদ্রাসার সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এটি মানুষ আইসলে যত্নের কুনো ত্রুটি থাকে না। এলাকার লোক থাকবার, খাবার দিবার পারে। তারপরও সোরকারি ব্যবস্থা থাইকলে ভালো হয়’।

যে নৌকাচালক সাধারণত আগে দিনে ৫০-১০০ টাকা আয় করতো এখন বর্ষায় তারা আয় ৫শ’-হাজার টাকা। পর্যটকরা নৌকা রিজার্ভ করে ঘুরতে বের হয়। সাধারণত জুন-জুলাই থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত পানি থাকে হালতিতে। গ্রামবাসীর আশা পর্যটন বর্ষ সামনে রেখে সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে যাতে তাদের প্রিয় এলাকাও হয়ে উঠবে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিনের মতো।

নাটোর শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে মাহিন্দ্র অথবা অটোরিকশায় পাটুল আসতে ভাড়া নেবে ২০ টাকা। খোলাবাড়িয়া আসতে আরও ১৫ টাকা। আপাতত থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে স্থানীয়রা ব্যবস্থা করবে থাকতে চাইলে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৬
এসএস/এএ/এটি

** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ