ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

‘পর্যটকরা চাইলেই মিলবে ট্রেনের টিকিট’

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
‘পর্যটকরা চাইলেই মিলবে ট্রেনের টিকিট’ ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পর্যটকদের জন্য রেলখাতে নতুন পদ্ধতি আনা হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানালেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আখতারুজ জামান খান কবির।
 
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে নিজ কার্যালয়ে বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পর্যটন বর্ষকে সফল করার নানা উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা জানিয়েছেন ট্যুরিজম বোর্ডের এ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।



দেশের সড়ক ব্যবস্থায় পর্যটকরা আকৃষ্ট হচ্ছেন না। এজন্য রেলপথে পর্যটকরা যেনো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করতে পারেন, তাই এ বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আখতারুজ জামান খান কবির।

আখতারুজ জামান বলেন, সাধারণত সপ্তাহখানেক আগে ট্রেনের টিকিট না কাটলে সিট পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে সড়কপথের তুলনায় রেলপথে ভ্রমণ আরামদায়ক। তাই পর্যটকরা যে কোনো সময় টিকিট চাইলে যেনো পান, এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। এ নিয়ে কাজ চলছে। যদি পর্যটকদের ট্রেনে ভ্রমণ বেশি হয় তাহলে প্রয়োজনে তাদের জন্য বিশেষ কম্পার্টমেন্ট করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে পর্যটকদের ক্ষেত্রে চাওয়া মাত্রই টিকেট দেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।

অন্যদিকে, চলতি বছর মুন্সীগঞ্জে বৌদ্ধ গুরু অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান দেখতেই কয়েক লাখ পর্যটক আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে তিনি জানান, গৌতম বুদ্ধের পরই বৌদ্ধ সমাজের প্রধান গুরু অতীশ দীপঙ্কর, যার জন্ম মুন্সীগঞ্জে। আর বৌদ্ধ ঐতিহাসিক স্থানগুলো দেখতেই বছরে ১০ লাখ পর্যটক বাংলাদেশে আসতে পারেন।

‘পর্যটকদের সুবিধার্থে স্বাস্থ্যসম্মত স্ট্রিট ফুডের আয়োজন করা হবে। গাইডদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে ট্যুরিস্টদের জন্য গাইড একটি বড় সমস্যা। তাই ট্যুরিজম বোর্ডের পক্ষ থেকে গাইডদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ট্যুরিস্টনির্ভর দেশগুলোতে স্ট্রিট ফুডের প্রচলন রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে জনবল তৈরি করছি। তাদের কাজই হবে স্বাস্থ্যসম্মত স্ট্রিট ফুড তৈরি করা। প্রথমত, আমরা এ প্রকল্পটি পুরান ঢাকা দিয়ে শুরু করবো বলে ভাবছি। ’

একই জায়গা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় বলে প্রসিদ্ধ কুয়াকাটা। এজন্য কুয়াকাটায় পর্যটকদের জন্য গঙ্গামতিতে যে সার্চ টাওয়ার হওয়ার কথা ছিলো তা সহসাই হচ্ছে না।

এ নিয়ে তিনি বলেন, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একই জায়গা থেকে দেখার জন্য প্রতি বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় জমে কুয়াকাটায়। এটি মাথায় রেখে কুয়াকাটার গঙ্গামতিতে সার্চ টাওয়ার করার প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, গঙ্গামতি সার্চ টাওয়ারের জন্য উপযুক্ত জায়গা নয়। তাই উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে সার্চ টাওয়ার তৈরির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।

এদিকে, কক্সবাজারের হোটেলগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায়, সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

আখতারুজ জামান বলেন, কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্ট ও আশেপাশের পয়েন্টগুলোকে ঘিরে হোটেলগুলো অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠায় সমুদ্র সৈকতের মূল সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। কিন্তু এসব এখন আর পরিবর্তন করাও সম্ভব নয়। এজন্য এখন ইনানী সমুদ্র সৈকতকে কেন্দ্র করে যাই গড়ে উঠুক না কেন, তা নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যে রাখতে হবে। তাহলে এই পয়েন্টকে কেন্দ্র করে বিপুল পর্যটক আসবে কক্সবাজারে। এছাড়া কক্সবাজারে একটি সিনেমা হল বানানোর বিষয়েও ভাবনা-চিন্তা চলছে।

সুন্দরবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও সুন্দরবন সংরক্ষণে কাজ করছে। তবে এসময় সুন্দরবনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া ‍উচিত। কারণ, বাংলাদেশে যেসব পর্যটক আসেন তাদের বড় অংশের মূল লক্ষ্য থাকে বিশ্বের দীর্ঘ্যতম সমুদ্র সৈকত ও সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট দেখা। আর পর্যটক আকর্ষণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো বিকল্প নেই।
 
দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে আরও উন্নত করা উচিত বলে মনে করছেন আখতারুজ জামান খান কবির।

তিনি বলেন, যেকোনো পর্যটক যখন কোনো দেশে প্রথমবার প্রবেশ করেন, তখন বিমানবন্দর দেখেই দেশটি সম্পর্কে একটি ধারণা করে নেন। যাকে বলে, ফার্স্ট ইমপ্রেশন ইজ দ্য লাস্ট ইমপ্রেশন। এজন্য বিমানবন্দরগুলোতে পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো উচিত। অন্য দেশের মতো আমরাও চাই, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর ছবি দিতে। যেনো একজন পর্যটক বিমানবন্দরে প্রবেশ করতেই বাংলাদেশের আকর্ষণীয় স্থানগুলো সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।

‘এ বিষয়ে আমরা অনুমতি চেয়েছি। তবে বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ পেয়েছি আমরা। যেখানে একটি বুথ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই বুথে পর্যটকদের জন্য প্রাথমিক সব তথ্য সরবরাহ করার জন্য থাকবেন আমাদের কর্মকর্তারা। ২৪ ঘণ্টা এই বুথ বিমানবন্দরে পর্যটকদের যেনো সেবা দিতে পারে, আমরা সেই বিষয়ে কাজ করছি। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৬
ইউএম/এসএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ