ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

‘মইশখাইল্যা পানের খিলি তারে বানাই খাওইতাম’

অমিয় দত্ত ভৌমিক, ওয়েব ইনচার্জ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৬
‘মইশখাইল্যা পানের খিলি তারে বানাই খাওইতাম’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে: পান নিয়ে কত কথাই না প্রচলিত আছে। রয়েছে জনপ্রিয় গান।

এই যেমন, শিল্পি সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে ‘যদি সুন্দর একটা মুখ পাইতাম/ সদর ঘাটের পানের খিলি তারে বানাই খাওয়াইতাম’ প্রয়াত শেফালী ঘোষের কণ্ঠে ‘যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম/ মইশখাইল্যা পানের খিলি তারে বানাই খাওইতাম’।


যদিও সাবিনা ইয়াসমিনের গানে সদরঘাটের পান কোথা থেকে আসে তা বলা মুশকিল; কিন্তু শেফালী ঘোষের গানে পান যে মহেশখালীর (মইশখাইল্যা); তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

দিন বদলেছে আর তার সাথে সাথে বদলে গেছে সবকিছুই। কিন্তু পান খাওয়ার এই বনেদিয়ানা মোঘল আমল থেকে শুরু করে বাংলার সর্বশেষ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পর্যন্ত সবারই ছিলো। আজও আছে রসিয়ে পান খাওয়ার প্রচলন।


বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর পান যে এখনও তার বনেদিয়ানা ধরে রেখেছে তা বোঝা যায় কক্সবাজারে এলে। যদিও রাজধানী ঢাকা বা চট্টগ্রামে কিছু কিছু জায়গায় মহেশখালীর পান বিক্রি হতে দেখা যায়।


পর্যটন বর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজ-এর ‘বছরজুরে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে পর্যটন’ এর কাজে এসে একটি সাইনবোর্ড দেখে চোখ আটকে গেলো।

মনে পড়ে গেলো শেফালী ঘোষের সেই বিখ্যাত আঞ্চলিক গান। লোভ সামলাতে না পেরে পা বাড়ালাম ‘মা স্টোর’র দিকে।

দোকানের মালিক ছিলেন না, পান নিয়েই তার দুই ভাইয়ের সাথে জমে যায় মজার গল্প।

মা স্টোরে পানের খিলির দাম শুরু ২০ টাকা থেকে। যার নাম স্পেশাল। আরও আছে রয়েল, দাম ৫০ টাকা, প্রিমিয়াম ১শ’ টাকা, সবচেয়ে দামি পানের খিলি প্রিমিয়াম হানিমুন, দাম ২৫০ টাকা।

বাজারে ৫ টাকায় পান পাওয়া গেলেও তাদের পানের কি বিশেষত্ব, জানতে চাইলে মাকসুদ ও নিজামউদ্দিন নাইম জানান, তারা পানে বিশেষ কিছু মসলা ব্যবহার করে থাকেন। এগুলো আসে ভারত থেকে। সবচেয়ে কম দামি পানেই তারা প্রায় ২০ ধরনের মসলা ব্যবহার করেন। যেমন নারকেল, কিসমিস, বাদাম, ধনিয়া, মিষ্টি জিরা, তিল ইত্যাদি। অন্যান্য পানে ব্যবহার করা হয় আরও অনেক মসলা। যেমন পেস্তা, গোলাপের পাঁপড়ি, জ্যষ্টিমধু, কাজুবাদাম। আর ২৫০ টাকার পানে দেওয়া হয় ৪০ রকম মসলা। যার মধ্যে জাফরান ও কস্তুরী থাকে। পানের দাম যত বেশি, মসলা তত বেশি।


আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এসব পানে সুপারি ও চুন দেওয়া হয় না। আর এই পান মুখে দিলে সর্বোচ্চ দুই মিনিট থাকবে মুখে।

কথা হয় আরেক পান বিক্রেতা ‘ফিরোজা পান বিতান’ এর মালিক আবুল শামার সাথে। তার বাড়ি মহেশখালী। দীর্ঘদিন তিনি এই পান ব্যবসার সাথে যুক্ত। তার দোকানে প্রতি খিলি পানের দাম ৫ টাকা ও ১০ টাকা।


তিনি জানান, নিজের হাতেই মহেশখালী থেকে পান কিনে আনেন। আর সুপারি কেনেন কক্সবাজার থেকেই। পানে তিনি নারকেল, কিসমিস, বাদাম, ধনিয়া, মিষ্টি জিরা, তিলসহ ১০ থেকে ১২ ধরনের মসলা ব্যবহার করেন।


অনেক দোকানে পানের সাথে কেন সুপারি ব্যবহার করে নাম, আর দাম কেন এত বেশি- জবাবে তিনি বলেন, কথায় আছে না- পান খাইলে সুপারি লাগে আরও লাগে চুন। পানের সাথে সুপারি আর চুন না হলে পান খাওয়াই বৃথা। তবে দামের কথায় নিরুত্তর থাকেন আবুল শামা।

আরেক পান দোকান হিরামন স্টোর। দোকানের মালিক জানান, তাদের পানের খিলির দাম শুরু ২০ টাকা থেকে। যার নাম স্পেশাল। আরও আছে রয়েল, দাম ৫০ টাকা, প্রিমিয়াম ১শ’ টাকা, সবচেয়ে দামি পানের খিলি প্রিমিয়াম হানিমুন, দাম ২৫০ টাকা। তার দাবী, তারাই আগে এই ধরনের প্যাকেজ পানের খিলির প্রচলন করেছেন। এখন অনেকেই তাদের মতো প্যাকেজ বানিয়ে ব্যবসা করছেন।

কক্সবাজারে এরকম অনেক দোকান আছে যেখানে মজাদার মহেশখালীর রসালো পান বিক্রি হয়। তাই কক্সবাজারে এসে মহেশখালীর মিষ্টি পানের খিলি খেতে ভুল করবেন না।


বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৬
এডিবি/এটি

** সমুদ্র আর সৈকতই ভরসা পর্যটন নগরীর
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ