ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

কক্সবাজার সৈকত বদলে দিতে পারে একজন কাদেরের চিন্তা

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৬
কক্সবাজার সৈকত বদলে দিতে পারে একজন কাদেরের চিন্তা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কক্সবাজার থেকে: দেশ ছেড়ে বিদেশে টাকা কামানোর কোনো ইচ্ছে তার ছিলো না। কক্সবাজার সৈকত তার ছোটকালের ভালোবাসা।

দেশের প্রতিও তাই। তবু পরিবারের চাপেই পাড়ি জমিয়েছিলেন দুবাই। ভালো লাগলো না বেশি দিন। চলে এলেন আপন আলয়ে, যেখানে অগণিত বালুকারাশি আর নোনাজলের ঢেউয়ের গর্জন সারাক্ষণ কিলবিল করে মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরায়।

বয়স খুব বেশি না হলেও ২৬ বছর ধরে নিজের দোকান পরিচালনা করছেন আব্দুল কাদের। মাঝে একবার শুধু দুবাই যাওয়া। ভালো না লাগায় চলে এলেও স্বল্প দিনে শিখেছেন অনেককিছু। সমুদ্রসৈকতের আলো বাতাসেই বেড়ে ওঠা, তাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে গিয়েও ছুটেছেন সৈকতে। সেখানে সৈকতকেন্দ্রিক বিনোদন, সুযোগ-সুবিধা দেখে দেশে এসে শুধু আফসোসই বাড়িয়েছেন। কে শুনবে তার যুক্তি-মতামত!
 
শুক্রবার ছুটির দিনেও সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অলস সময় কাটাতে দেখে আলাপ শুরু তার সঙ্গে। দেশের পর্যটন নিয়ে কথা হচ্ছিলো। হাতে ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে’ লিফলেট দেখে কথা বলার আগ্রহটা বেড়ে গেলো যেনো। স্টিকারটি কোথায় লাগালে ছিঁড়বে না তা বলে নিজেই লাগিয়ে দিলেন যত্নে।
 
সৈকতকে পরিচ্ছন্ন রাখা, পর্যটক বাড়ানো, সব শ্রেণীর মানুষের আগমন নিশ্চিত করা, বিনোদনের ব্যবস্থা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশ্ন করতেই বেরিয়ে এলো তার সুচিন্তিত মতামত। ব্যবসায়ী হিসেবে সৈকতকে খুব কাছাকাছি দেখেন, ভাবেন, নিজের সম্পদের মতো ব্যাপার তার কাছে।
 
প্রথমেই ক্ষোভ ঝাড়লেন সরকারিভাবে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করা নিয়ে। বলেন, সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। পরিকল্পনা করে এগোলে কোটি কোটি টাকা সরকার এখান থেকেই আয় করতে পারে। শুধু আমরা না, এতে গোটা দেশ ভালো থাকবে।
 
কাদের বলেন, দুবাইয়ের আসমান বিচে গিয়ে দেখেছি কীভাবে তারা টাকা উপার্জন করে আবার সেবা দেয়। আমাদের সুযোগ ওদের চেয়ে বেশি, কিন্তু কাজে লাগাই না।
 
শিশুদের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আমাদের সৈকতে শিশুদের জন্য তো কোনো ব্যবস্থা নেই। বাবা-মা বাচ্চাদের এনে বিপদে থাকেন। তাদের পানিতে নামা, সময় কাটানো, তাদের রেখে বাবা-মা অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের সমুদ্র উপভোগ- প্রভৃতি নিয়ে সমস্যার শেষ নেই। কিন্তু আমাদের সৈকতে যদি শিশুদের জন্য একটি জোন করে দিয়ে বেলুন,ঘুড়ি, এয়ারব্যাগসহ বিভিন্নভাবে বিনোদনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে শিশুদের এনে নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারতেন। বাচ্চাদের খেলার মতো পর্যাপ্ত খেলনাও পাওয়া যায় না এখানে।
 
সব শ্রেণীর মানুষই সৈকতে আসেন বেড়াতে। যারা গাড়ি নিয়ে আসেন তারা পড়েন বিপদে। কাদের বলেন, বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে এ সমস্যা বাড়ে। আমাদের বিচের আশপাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে অনেকে আসতেই চান না।
ছাতা বা কিটকট বসানো নিয়ে তার বক্তব্য, ছাতাগুলো ছড়ানো ছিঁটানো। কোনো সৌন্দর্য নেই। যে যেভাবে পারছে বসাচ্ছে। এতো বেশি ছাতা যে পানিও দেখা যায় না দূর থেকে। এটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
 
কাদেরের মতে, পর্যটনের জন্য বিশাল জায়গার প্রয়োজন নেই। যা আছে সেগুলো যদি সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর করে রাখা যায় তাহলে সেখান থেকেই একটি দেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
 
পর্যটনে সুযোগ বাড়ানো মানে সমাগম বেশি হওয়া। আর বেশি মানুষ এলো তাদের মতো ব্যবসায়ীরা আরও ভালো থাকবে বলেই মনে করেন শামুক-ঝিনুক ব্যবসায়ী।
 
নিরাপত্তার বিষয়টিও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। সব শেষে বলেন,আমার দেশটাই আমার ভালো লাগে। আমাদের সরকারও পর্যটন থেকে অনেক টাকা কামাতে পারে। সে ব্যবস্থা করলে কোনো দেশের কাছে আর হাত পাততে হবে না।
 
কাদেরের মতো সাধারণ ব্যবসায়ী, যারা বিচকে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেন তাদের কথা শোনার লোকের বড় অভাব। অথচ তারাই সমস্যাগুলো সবচেয়ে বেশি বোঝেন।
 
বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ না রেখে সাধারণ মানুষের ভাবনাগুলো উন্মুক্ত করে, তাদের কথা শুনে, বিবেচনা করে যদি কোনো পদক্ষেপ নিয়ে পর্যটনকে এগিয়ে নেওয়া যায় তবে সেটাই হবে ফলদায়ক।

 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
এএ/

** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** ছেঁড়া দ্বীপকে আবর্জনার ভাগাড় বানাচ্ছেন পর্যটকরা
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
**
নোনা দ্বীপে মিষ্টি পানি
** ড্যান্সিং বাসে কক্সবাজার টু টেকনাফ
** তথ্যহীন পর্যটন তথ্য কেন্দ্র!
** ডাব-তরমুজেই পকেট ফাঁকা সেন্টমার্টিনে
** মরা শামুক হাঁটে ছেঁড়া দ্বীপে!
**সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-১)
 ** সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-২)
** পদ্ম বেচে সংসারে হাসি ফেরান আহমেদ হোসেন
** মারমেইড ও মুগ্ধতার গল্প...

** কুকুর যখন ‘টুনা’ শিকারি
** ‘পর্যটন মৌসুম শব্দটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে’
** তৈরি হচ্ছে ‘বিচ ডাটাবেজ’
** সেন্টমার্টিনে সৈকত জুড়ে কাঁকড়ার আল্পনা
** সেন্টমার্টিনে বাজার সদাইয়ের সংগ্রাম (ভিডিওসহ)
** সৈকতের আল্পনাশিল্পীদের করুণ মৃত্যুগাথা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ