ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

বিশ্বের সবচেয়ে বড় কচ্ছপের ভাস্কর্য মারমেইডে

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কচ্ছপের ভাস্কর্য মারমেইডে ছবি: শুভ্রনীল সাগর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পেঁচার দ্বীপ, কক্সবাজার ঘুরে: ভারতীয় মিথ বলে, পৃথিবীটা দাঁড়িয়ে রয়েছে বিশাল কচ্ছপের শক্ত খোলসের উপর। চীন, জাপানে আবার কচ্ছপ দীর্ঘায়ু ও সুখের প্রতীক।

পৃথিবীর এমন সব হাজার বছরের মিথের জগৎ মারমেইড বিচ রিসোর্টের কসমিক টার্টেল ডোম। যাকে বলা হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কচ্ছপের ভাস্কর্য।

মারমেইড যখন তৈরি হয় তখন সামনের বিচে দেখতাম অনেকেই কচ্ছপ শিকার করে বিক্রে করছে, তাদের ডিমগুলো নষ্ট করছে। দেখে খুব খারাপ লাগতো। অনেক লম্বা সময় ধরে এরা পৃথিবীটাকে এনজয় করে। তাদের কেন আমরা মারবো। তখন তাদের বোঝানো শুরু করলাম। এবং অনেকটা সফল হয়েছি বলা চলে। কারণ যারা এ কাজগুলো করতেন তারা এখন অন্য কাজে যুক্ত। বিষয়টি তারা বুঝেছে। এটাই সফলতা।

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে গেলেন মারমেইড বিচ রিসোর্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ।

তিনি বলেন, সবুজ পৃথিবীতে আমরা কচ্ছপ নামের দীর্ঘজীবী প্রাণীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। কচ্ছপ যে একটি ব্যাপার, সেট‍া যেনো মানুষকে স্ট্রাইক করে। এ ধারণা থেকেই ভাস্কর্যটি তৈরি। শিল্পী রনি ‍আহমেদ এটি তৈরি করেছেন। ভিতরের মিথিক্যাল আর্টগুলোও তার। আমাদের লক্ষ্য ছিলো, কচ্ছপ রক্ষার জন্য আইডিয়া ব্রেকিং কিছু করতে হবে। সাগরতীরে ভেসে আসা বর্জ্য দিয়ে এর ডিজাইন করা। আমাদের জানা মতে, ভাস্কর্য হিসেবে এটিই সবচেয়ে বড়। যদিও গিনেজ আমাদের এখনও স্বীকৃতি দেয়নি।

মারমেইডে ঢুকে রিসিপশনের পেছন দিয়ে সোজা পশ্চিমদিকে এগোলে খাবারের খোলামেলা কটেজ। সেখান থেকে উত্তরে তাকালেই চোখে পড়বে ভাস্কর্যটি। সৈকতের বালির উপর গজানো ছোট গুল্মলতা আর নারিকেল চারার মাঝে চার হাত পা মেলে মাথা উঁচিয়ে বসে রয়েছে মারমেইডের কচ্ছপ। এটা যেনো প্রতীকী রূপ! বিশ্বব্যাপী কচ্ছপ এভাবেই মাথা উঁচু করে সবার মাঝে থাক- এটা প্রতিষ্ঠানটির চাওয়া।

শিল্পী রনি ‍আহমেদ ভাস্কর্যটি সবার কাছে অর্থবহ করে তুলেছেন। শিশুরা ভাববে এটি বোধহয় তাদের বিনোদনের জন্য তৈরি। কারণ, বাইরের মতো ভিতরটিও অনেক কালারফুল। আর ডোমে অঙ্কিত পৌরাণিক চরিত্র ও ভিতরে সাজিয়ে রাখা পেইন্টিংসগুলো শিল্পবোদ্ধাদের দেবে ভিন্ন জগতের সন্ধান।

আনিসুল হক সোহাগ বলেন, সৈকতে যেভাবেই হোক কচ্ছপ রক্ষা করতে হবে- এটা ছিলো আমার লক্ষ্য। কচ্ছপ প্রথমবার যেখানে ডিম পাড়ে বছর ঘুরে আবার সেখানেই আসে ডিম পাড়ার জন্য। তাই এদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্যের মধ্যেও পড়ে। কচ্ছপের সংস্কৃতি, বিশ্ব মিথ, কার্টুন ক্যারেক্টার, যারা টার্টেল নিয়ে কাজ করেন- ডোমের ভেতরের ডিজাইনে তাদেরকে আনার চেষ্টা করেছেন রনি আহমেদ।

সৈকতে প্রচুর সংখ্যক কাচ, বোতলের ছিপি, গ্যাসলাইটের ভাঙা অংশ প্রভৃতি ভেসে ‍আসে। সেগুলোই ব্যবহার করা হয়েছে ভাস্কর্যটির বাহ্যিক ডিজাইনে। মারমেইডের প্রকৃতির ফেলনা জিনিস রিসাইকেল করে ব্যবহার করার নীতি থেকেই এটা করা। কচ্ছপ তার চোখ দিয়ে একটি সবুজ পৃথিবী দেখে। আমাদের নামকরণে সেটি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই বলা হয়েছে ভিজিটিং গ্রিন ‍আর্থ, জানাচ্ছিলেন সোহাগ।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় কচ্ছপের যে ভার্স্কটির রেকর্ড বর্তমানে রয়েছে সেটি গাড়ির টায়ার দিয়ে তৈরি। কিন্তু মারমেইডের ভাস্কর্যে অনেক জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে। তাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় কচ্ছপের ভাস্কর্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে একক জিনিস দিয়ে তৈরির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেটি আমাদের নেই। এছাড়া লবিংয়ের একটি বিষয় তো থাকেই। বলছিলেন মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান।

‘কসমিক টার্টেল ভিজিটিং গ্রিন আর্থ’ শিরোনামের এ ভাস্কর্যটি তৈরি ২০১২ সালে। প্রকৃতির সবকিছু তার মতো করে টিকিয়ে রাখতে সচেতনতা সৃষ্টিতে ১৮ ফুট উচ্চতা, ৫৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৫ ফুট প্রস্থের এ ভাস্কর্য তৈরি উদ্যোগ নেয় মারমেইড। এতে রয়েছে দুটি প্রবেশদ্বার ও ছয়টি কাচের গোলাকৃতির জানালা।

গোলাকৃতির ডোমে বিশ্বের শতাধিক পৌরাণিক চরিত্র ও গল্পের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন রনি আহমেদ। কচ্ছপ ভাস্কর্যটির খোলস তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা জুতা, জুতার বিভিন্ন অংশ, গ্যাস লাইটার, মাছের কাঁটা, হাড়, ভাঙা কাচের টুকরো, আয়না, স্টেইনলেস স্টিলসহ বিভিন্ন উপকরণ।

মোটিফ হিসেবে এসেছে এলিস ইন দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড, ভিঞ্চির বিখ্যাত ছবি দ্যা লাস্ট সাপার, প্রবাদ, ইঁদুর-কচ্ছপ কিংবা ঈগল-কচ্ছপের দৌড় প্রভৃতি। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি এসেছে ছবির মোটিফে।

এ ভাস্কর্য ও অভ্যন্তরের চিত্রকর্ম নিয়ে ইউরোপের একটি আন্তর্জাতিক এক্সিবিশনে অংশ নেন রনি আহমেদ।

ভাস্কর্যটি শুধু ভাস্কর্য নয়। এর ভিতরে রয়েছে ৫০-৬০ জনের বসার আসন। ভিতরে সাগরের বালির উপরই বসানো আসনগুলো। চাইলে রিজার্ভেশন নিয়ে ছোট কোনো অনুষ্ঠানও এর মধ্যে করতে পারবেন। তবে শিশুদের কিংবা কোনো শিক্ষামূলক কর্মসূচির ক্ষেত্রে বেশি সুযোগ দেয় মারমেইড।

গিনেজবুকে জায়গা পেলে বিশ্বব্যাপী কচ্ছপ সংরক্ষণে সচেতনতা আরও বাড়বে বলেই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠানটির।

**এক্সাইটিং বিচ রাইডিং-বোটিং মারমেইডে
**ডিমের ভিতর ডিনার
**‘২২ বছর একইরকম, এ বছরটি ভিন্ন’
**পাতা যেখানে বাঁশি বাজায়, ঘুম ভাঙায় পাখির গান
** ছেঁড়া দ্বীপকে আবর্জনার ভাগাড় বানাচ্ছেন পর্যটকরা
**বিচ ঘেঁষে বিচ পার্ক, জানেন না পাশের ব্যবসায়ীরা!
**কক্সবাজার সৈকত বদলে দিতে পারে একজন কাদেরের চিন্তা
** নোনা দ্বীপে মিষ্টি পানি
** ড্যান্সিং বাসে কক্সবাজার টু টেকনাফ
** তথ্যহীন পর্যটন তথ্য কেন্দ্র!
** ডাব-তরমুজেই পকেট ফাঁকা সেন্টমার্টিনে
** মরা শামুক হাঁটে ছেঁড়া দ্বীপে!
 

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬
এএ/এসএনএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ