ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অনন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অনন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ছবি: বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হবিগঞ্জ থেকে: সাতছড়ির গহীন বনে প্রকৃতির ভালোবাসা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান সত্যিই অনন্য।

বনের ভেতর দিয়ে হাঁটলেই প্রকৃতির ভালোবাসার ছোঁয়া লাগে গায়ে।
 
হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে এক ঘণ্টার ট্রেইল দিয়ে হাঁটলে মুখপোড়া হনুমানের ডাক কানে বাজবে। নতুন যে কেউ এ ডাক শুনে ভয় পেয়ে যেতে পারেন। মনে হবে, খুব কাছ থেকেই কোনো প্রাণী তেড়ে আসছে। কিন্তু মুখপোড়া হনুমান রয়েছে ঠিক মাথার ওপরেই।
 
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের চাপালিশ গাছের ডালে ডালে খেলা করছে এ প্রাণীটি। তবে মানুষের অবস্থান টের পেয়ে চুপ হয়ে যায়। এরপর গহীন বনের ভেতর দিয়ে হাঁটতেই হনুমানের ডাক। এছাড়া ঘুঘু, টিয়া, টুনটুনি হরেক রকম পাখির কিচির-মিচির শব্দ। যেন প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের।
 
সাতছড়ি বনের ভেতর দিয়ে এক ঘণ্টার ট্রেইল দিয়ে হাঁটার সময় দু’পাশে বিভিন্ন গাছের পাতা আঁকড়ে ধরে পর্যটকদের।
বর্ষাকাল হওয়ায় মাঝে মাঝেই বৃষ্টির ফোঁটা আধভেজা হয়ে প্রকৃতির দৃশ্য দেখার অভিজ্ঞতা যে কাউকে পুলকিত করবে। যখন ঝড়-বাতাস আসে, গাছগুলো যেন মাথা নুয়ে প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে অবনত। আর বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়।
 
ঘন সবুজ বনের মাঝে মাঝে টিলা। আবার কোথাও একটি গাছ আরেকটি গাছের ওপর পড়ে আছে। ট্রেইলের ভেতরে গাছ পড়ে পচন ধরলেও হাত দিয়ে ধরার কেউ নেই।
 
সাতছড়ি বনে যেতে হলে একজন গাইড অবশ্যই থাকা দরকার। সাতছড়ি উদ্যানের বিট অফিসার মাহমুদ হোসেন ও গার্ড চিত্ত রঞ্জন দেববার্মা আমাদের গাইড হিসেবে বনের ভেতরে নিয়ে যান। কয়েক গজ ভেতরে যাওয়ার পরেই ৫৫ ফুট উঁচু টাওয়ারে উঠে সাতছড়ির সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে দেখার সুযোগ রয়েছে। চারদিকে সবুজের সমাহার। একপাশে পাম বাগান।
বনের ভেতরে একটি বটগাছের পেটের ভেতর আরেকটি গাছ আঁকড়ে রয়েছে, দেখে মনে হলো যেন, বাচ্চা গাছটিকে কোলে করে আদর করছে মা গাছ। আসলে পরজীবী এই বটগাছ ভেতরের গাছটির ওপর ভর করেই আকাশের দিকে জেগে উঠছে।
 
গার্ড চিত্ত রঞ্জন দেবব‍ার্মা জানান, পরগাছা এই গাছ অন্য গাছকে মেরেই নিজের রাজত্ব করে। বাস্তবেও ভেতরের গাছটিকে মরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
 
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মোট আয়তন ২৪৩ দশমিক ১০ হেক্টর। ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর এ বনকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে বন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনবল অতি স্বল্প। মাত্র ৫ জন গার্ড ও একজন বিট অফিসার দিয়েই এতো বড় বনের তদারকি করা হচ্ছে।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের প্রবেশমূল্য বড়দের জন্য ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ২৫ টাকা, আর ছোটদের জন্য ১০ টাকা। এখানে একটি পিকনিক স্পটও রয়েছে।
 
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানটি ঢাকা থেকে ১৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ও শ্রীমঙ্গল থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত। উদ্যানটি সাতছড়ি বিটের রঘুনন্দন পাহাড়ি সংরক্ষিত বনের একটি অংশ।

 
** ভাড়াউড়া লেকের সৌন্দর্যে কালো মেঘ যোগাযোগ ব্যবস্থা
**লাউয়াছড়ায় ১৫ হেক্টরের মধ্যেই দর্শনার্থী সীমাবদ্ধ
**লাউয়াছড়ায় অর্থকরী ফসলের আত্মকথা
**নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন মিহির কুমার দো

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা,  জুলাই ১৬, ২০১৬
এসএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ