ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সবুজ পাতা হয়ে যায় কালো কালো চা

এম জে ফেরদৌস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
সবুজ পাতা হয়ে যায় কালো কালো চা ছবি: আবু বকর সিদ্দিকী- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিলেট থেকে: শৈশবের কৌতূহলী মনে প্রশ্ন জেগেছিল- দানাদার কালো চা-এর নাম চা-পাতা হয় কেন? সামান্য কিছুকাল পরেই পাঠ্যপুস্তকে ‘চা রচনা’ পড়েই রহস্য উন্মোচন হয়, জানতে পারি সবুজ চা পাতা থেকেই প্রস্তুত হয় কালো কালো চা। তবে কীভাবে সবুজ পাতা প্রক্রিয়াজাত হয়ে দানাদার চা হয়ে ওঠে তা জানারও আগ্রহ জাগে তখনই।

শৈশবের সেই কৌতূহল অবশেষে পূরণ হলো এই বুড়ো বয়সে এসে!

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের অঞ্চল লালাখাল ভ্রমণে গিয়ে সুযোগ হয় চা ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখার। নদী পাড়ের চা বাগানটি সিলেট বা মৌলভীবাজারের অন্যান্য চা বাগান থেকে দেখতে বেশ ভিন্ন। সীমান্ত নদী সারি থেকে বাগানের ভেতরে প্রবেশ করছে বেশ চওড়া খাল। বাগানের পাহাড়গুলো বেশ উঁচু হওয়ায় খালের পাড়ে পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট ছোট্ট ছাড়া ছাড়া চা বাগান। সারি নদীর পাড় থেকে কিছুটা ঢাল বেয়ে উঠলেই চোখে পড়বে লালাখাল চা বাগানের ফ্যাক্টরি।

ক্লার্ক আব্দুল হক চা প্রক্রিয়াজাতকরণের সব খুঁটিনাটি বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেন  ফ্যাক্টরির ভেতর ঘুরে দেখিয়ে। ফ্যাক্টরির মেশিনগুলো তখন পুরোদমে চলছে। মেশিনের আওয়াজের কারণে বেশ গলা চড়িয়েই কথা বলতে হয় আমাদের। উচ্চস্বরে আমাদের কৌতূহলের জবাব দিতে থাকেন ৩৫ বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করা আব্দুল হক।

ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত সব চা-ই নিলামে বিক্রি হয়। দেশের ছোট-বড় সব চা কোম্পানিকেই নিলামে চা সংগ্রহ করতে হয়। এমনকি যেসব কোম্পানির নিজস্ব চা বাগান ও ফ্যাক্টরি আছে তারাও নিজেদের প্রস্তুতকৃত চা নিলামেই সংগ্রহ করে বলেও জানান তিনি।

অভিজ্ঞ এই কর্মকর্তা জানান, কালো চা দুই পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হয়। সিটিসি ও অর্থোডক্স পদ্ধতি। এর মধ্যে সিটিসি পদ্ধতিই অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয়। কালো চা প্রক্রিয়াকরণে ৫টি ধাপ অনুসরণ করা হয়।

সংগৃহীত সবুজ চা পাতার পানির পরিমাণ কমানোই প্রথম ধাপের মূল কাজ। এই ধাপকে উইদারিং বা নির্জীবকরণ বলা হয়। চায়ের পাতাতে সাধারণত ৮০ শতাংশ পানি থাকে। তা কমিয়ে ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হয়। লম্বা পাটাতনে সবুজ পাতা বিছিয়ে রেখে নিচ থেকে হালকা বাতাস দিয়ে ১২-১৪ ঘণ্টা ধরে উইদারিং করা হয়।

এরপর দ্বিতীয় ধাপে নির্জীবকৃত পাতাকে ছোট ছোট করে কাটতে ও চূর্ণ বিচূর্ণ করতে প্রথমে রোটারভ্যান ও পরে পর্যায়ক্রমে কর্তনের জন্য ৪/৫টি সিটিসি মেশিনের ভেতর চালনা করা হয়।

তৃতীয় ধাপ ফার্মেন্টেশন বা রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানো। চূর্ণ পাতাকে তামাটে রঙে রূপান্তরিত করতে পাকা মেঝে বা ট্রের উপর পাতলা করে ছড়িয়ে আনুমানিক এক ঘণ্টা রাখতে হয়।

পরের ধাপ ড্রায়িং বা শুকানো। পাতার রাসায়নিক বিক্রিয়া বন্ধ ও পাতা শুকাতে এক ধরনের ড্রায়ার মেশিন ব্যবহার করা হয়। ড্রায়ার থেকে বের হওয়া চা পাতায় জলীয় অংশের পরিমাণ ৩ শতাংশের  বেশি যাতে না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়।

শেষ ধাপের নাম সর্টিং বা শ্রেণি বিভাজন। প্রস্তুত করা পাতাকে আকার অনুসারে চালনি দিয়ে ভাগ করা হয়। একে গ্রেডিং বলা হয়। আকৃতি অনুসারে চায়ের নামকরণও ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন- বিওপি, ওএফ, পিডি প্রভৃতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
এমজেএফ/আইএ

**
লোভাছড়ায় বাড়তি পাওনা ঝুলন্ত ব্রিজ
** রাতের ক্বিন ব্রিজে ‘ঝাল কম, ঝাল বেশি’
**উত্তাল হাকালুকির ঢেউয়ে ঢেউয়ে
**ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় স্মৃতির ধূলো
**টিলার ওপর দৃষ্টিনন্দন ফ্রুটস ভ্যালি
**পোস্টার-ব্যানারে ঢাকা এম এ রব চত্বরের নামফলক
** শীতল বনের খোঁজে বোকা বনে যাওয়া
**দিনের যাত্রী আসনই রাতের বিছানা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ