ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

মাধবকুণ্ড ঝরনাতলার কোলাহলে

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
মাধবকুণ্ড ঝরনাতলার কোলাহলে ছবি: শুভ্রনীল সাগর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাধবকুণ্ড (মৌলভীবাজার): শিরোনামটি রবিঠাকুরের গান থেকে ঈষৎ পরিবর্তিত। সেখানে ছিলো ‘ঝরনাতলার নির্জনে’।

কিন্তু মাধবকুণ্ডের বেলায় সেটি লেখার সুযোগ নেই। দেশের অন্যতম জলপ্রপাত- তাকে ঘিরে ভিড়, হট্টগোল, কোলাহল তো লেগেই থাকবে।

পাথারিয়া পাহাড় জলপ্রপাতটির উৎস। দুইশ’ ফুট উঁচু থেকে অবিরাম পানি পড়ছে। বর্ষা মৌসুমে প্রতি সেকেন্ডে পানিপ্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচশ’ কিউবেক।

এসবই নিছক তথ্য। মাধবকুণ্ড অনন্য ভিন্ন জায়গায়। মৌলভীবাজার জেলা শহর থেকে ৭০ ও সিলেট থেকে ৭২ কিমি দূরের এই নৈসর্গিক লীলাক্ষেত্র মাধবকুণ্ড ইকো পার্কের একটি অংশ। কিন্তু জনপ্রিয়তায় ছাড়িয়ে গেছে পার্ককেও। পার্কে ঢুকেই টিলার কোলঘেঁষা বাঁধানো রাস্তা চলে গেছে এক ভূ-বিস্ময়ের ঠিকানায়। চড়াই-উৎরাই পথ ধরে ডানদিকে গিরিখাদ, বামে উচ্চশির পাহাড় এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি এনে দেবে।

কিছুদূর যেতেই ভেষজ বাগান। তাতে আমলকি, হরতকি, অজু, বহেড়া, আকন্দ, কাগজি লেবু, আদা, পেঁয়াজ, পান, থানকুনিসহ হরেক প্রজাতির গাছ-লতার সমাহার। বন আলো করে রয়েছে হরিণ, হাতি, হনুমান। আরেকটু সামনে শ্রী মাধবেশ্বর মহাদেবের মন্দির, পাশাপাশি ওয়াচ টাওয়ার।

বামদিক দিয়ে ঢালু পথে নামলে মিনি সুইমিংপুল। পাশ দিয়ে বহমান মাধবকুণ্ড ছড়া। সব রাস্তা নদীতে শেষ হলেও এক্ষেত্রে পায়ের পাতা শেষ হবে মাধবকুণ্ড ঝরনাতলায়।
সুউচ্চ পাহাড়ের বুক থেকে অবিরাম ঝরছে জলধারা। সেই ধারা মাটির আলিঙ্গন পেয়ে রূপ নিয়েছে মাধবকুণ্ড ছড়ায়। সুবীর নন্দীর বিখ্যাত একটি গান রয়েছে, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে তোমরা তাকে ঝরনা বলো’। সত্যিই কি তাই? তবে পাহাড়ের কীসের এতো দুঃখ যে কেঁদেই চলেছে…কেঁদেই চলেছে! ওই দূর পাথারিয়া পাহাড়ে কোনো প্রিয়জনকে ছেড়ে আসার বেদনাই কি তাকে এমন অহর্নিশ কাঁদিয়ে চলেছে? এ কথা কাকে শুধাই!

তবে পাহাড়ের এই অবিরাম কান্না আনন্দ দিয়ে চলেছে মনুষ্য সন্তানদের। প্রকৃতির এ এক লীলা- কারও কান্না, কারও আনন্দের কারণ।

শুধু জলপ্রপাতই নয়, এ থেকে সৃষ্ট ছড়াটিও নিটোল বিনোদন যোগাচ্ছে মানুষকে। কেউ স্নান করেন, কেউবা জলকেলি কিংবা প্যান্ট গুটিয়ে পা ভিজিয়ে প্রকৃতির এ অফুরান আনন্দায়োজনের অংশ হয়ে উঠছেন। তীব্র গতিতে অাছড়ে পড়া জলের শব্দ, পাহাড়ি লতা-পাতায় লেখা বাতাসের গান আর দশর্নাথীদের কোরাস মিলে যেনো তৈরি হয় অন্য কোনো কলতান। সেই কলতান-কোলাহলে গলা মেলাতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ।

মাধবকুণ্ড যাওয়া যাবে নানাভাবে। সবচেয়ে সুবিধা সিলেট বা মৌলভীবাজার হয়ে এলে। ঢাকা থেকে যারা আসবেন তারা সরাসরি সিলেট চলে আসতে পারেন। এরপর সিলেট শহর থেকে মাধবকুণ্ড যাওয়া যাবে বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত যানবাহনে। ট্রেনে গেলে নামতে হবে কুলাউড়া স্টেশনে। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ব্যক্তিগত গাড়িতে মাধবকুণ্ড।

অন্যদিকে, ঢাকা থেকে সরাসরি একমাত্র বাসেই যাওয়া যাবে মৌলভীবাজারে। ট্রেনে গেলে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে। সেখান থেকে বাসে করে মৌলভীবাজার হয়ে আবার বাস, অটোরিকশা বা ব্যক্তিগত গাড়িতে।
মাঝখানের এই পথটুকুও দর্শনার্থীদের দেবে অকৃত্রিম প্রশান্তি। বিস্তৃত চা বাগান, আঁকা-বাঁকা রাস্তা আর পাহাড়ি টিলাছোঁয়া মেঘ যেন নিয়ে যাবে স্বর্গলোকে। এমনটি মনেও হতে পারে, মাঝপথেই নেমে পড়ি! কিন্তু মাধবকুণ্ডের জলগর্জন যে আরও বেশি অগ্রাহ্যকর!

সঙ্গী যদি থাকে গুরুদেবের গান-
‘তোমারই ঝরনা তলার নির্জনে
মাটির এই কলস আমার ছাপিয়ে গেল কোন্ ক্ষণে।
রবি ওই অস্তে নামে শৈলতলে,
বলাকা কোন্ গগনে উড়ে চলে–
আমি এই করুণ ধারার কলকলে
নীরবে কান পেতে রই আনমনে
তোমারি ঝরনাতলার নির্জনে। । ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৬
এসএনএস/এএসআর

**
ঝরনা! ঝরনা! সুন্দরী ঝরনা পরিকুণ্ড
*** ‘আগে সালমান শাহের মৃত্যুর বিচার, পরে মিউজিয়াম’
*** শিক্ষায় ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে হাকালুকির কন্যারা
*** ধুলো ঝেড়ে কুশিয়ারার ইস্ট-ইন্ডিয়া ঘাট​
*** অরূপরতনের সন্ধানে শ্রীচৈতন্যের বাস্তুলীলায়
*** জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে রেমা-কালেঙ্গা
*** রহস্যই থেকে গেলো যজ্ঞকুণ্ডের ধারা  
*** পিছুটান মুছে দেবে ভাড়াউড়া হ্রদ
*** লাউয়াছড়া গভীর আনন্দের মূর্তি ধরিয়া আসে
*** ‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’
*** ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ