ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

শীতল পাটির কারুশিল্পী অরুণের করুণ কথা

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
শীতল পাটির কারুশিল্পী অরুণের করুণ কথা ছবি: জিএম মুজিবুর বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বালাগঞ্জ ও রাজনগর থেকে সিলেট ফিরে: নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে অরুণ চন্দ্র দাস ও তারা বাবা নৌকার কারুময় এক শীতল পাটি তৈরি করে দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। বাবা-ছেলের পাক্কা দুই মাস সময় লেগেছিলো সেই সেই পাটি তৈরিতে।

এ পাটি তৈরির যত্ন-কষ্ট দেখে দেখে তাদের গ্রামেরই মানুষ তাদের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলো। বহু লন্ডন প্রবাসী অর্ডার দিয়ে নিয়ে গেছেন তাদের তৈরি শীতল পাটি।
 
সেই অরুণ এখনও শীতল পাটি বোনেন। কারুশিল্প নিয়ে সারা দেশের মধ্যে সেরা হয়েছেন। বিসিকের মাধ্যমে জাপানে গিয়ে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে, কুড়িয়েছেন প্রশংসা।  

এতো সুনাম সুখ্যাতি ছড়ালেও বাস্তবতায় জর্জরিত অরুণ। শুধু শীতল পাটি দিয়ে তার সংসার চলে না। মাটির ঘরের একপাশে উনুন, আরেকপাশে খাট। এর মধ্যে দুই ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে তার বসবাস।

বর্ষায় অরুণের বাড়ির চারদিক পানিতে তলিয়ে যায়। ডুবে যায় সড়কে ওঠার রাস্তা। নৌকায় কোনোমতে সড়কে এসে ওঠেন অরুণ। যার শীতল পাটি লন্ডনে গেলো, প্রধানমন্ত্রীর ঘরে গেলো, সেই অরুণের অবস্থা করুণ বলেই দুঃখ করেন গ্রামবাসী।

প্লাস্টিকের যুগে মানুষ শীতল পাটির ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। সে কারণে এখন ব্যস্ততা হারিয়ে অরুণ অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। গৃহস্থালীর কাজ করে সংসার চালাতে হয়। শীতল পাটির বড় অর্ডার বছরে একবার হয়তো মেলে। কিন্তু সারা বছর কাটবে কেমন করে?

শুধু অরুণ নয়, যারা শীতলপাটি দোকানে সাজিয়ে বিক্রি করেন তাদের দশাও একই। শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত বালাগঞ্জের উপজেলা সদরের দোকানগুলোর মালিকরাও ব্যবসা বদলাচ্ছেন।  

আগে শুধু শীতল পাটি বিক্রি করতেন, এখন একই দোকানে জুয়েলারী বসিয়েছেন হিমাংশু ধর হিমু। সঙ্গে শীতল পাটি থাকলেও আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে তার বেচাকেনা। এখন আগের মতো ক্রেতা নেই বলেও জানালেন তিনি।  

শীতল পাটির কারিগর ও বুননশিল্পের খোঁজ নিয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা সদর বাজারঘুরে কিছু বিলুপ্তপ্রায় দোকান পাওয়া গেলো।  

সেখান থেকে খোঁজ নিয়ে কারিগরদের ঘরবাড়ির খোঁজে আরও সামনে পা বাড়লো। উপজেলা সদরের বাজার তীর থেকে কুশিয়ারা নদী পার হয়ে এবার মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার জুলঝুড়ি গ্রাম। এই গ্রামেই অরুণের জন্ম। বাপ দাদার পেশায় এখনও আছেন তিনি।  

অরুণ জাতীয় সংসদ ভবনের কারুময় শীতলপাটি অর্ধ লাখ টাকায় এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে দিয়েছেন। পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। জাপান এবং বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে ১০ থেকে ১২টি পুরস্কার সনদ জিতেছেন। তবু ঘর পাকা করতে পারেননি শীতল পাটির এই সুনিপুণ কারিগর।  

দিনে দিনে কমছে শীতল পাটির বিক্রি। মিলছে না পাটির উপকরণ মুর্তা বা পাটিপাতাও। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্প ক্রমেই বিলুপ্ত হতে থাকায় নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও শঙ্কায় পড়েছেন অরুণ।


বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এসএ/এইচএ/

** যেভাবে তৈরি হয় শীতল পাটি​
** সিলেটে রেলের সেই সুদিন ফিরবে কি!​
** উপমহাদেশের প্রথম চা বাগানে
** ঢাকা-সিলেট: চারলেনের অপেক্ষায় সিলেটবাসী ও পর্যটক
** দুই কারণে সাতছড়িতে ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী
** ট্রেইলে নয় ওয়াচ টাওয়ারে সাতছড়ি দর্শন
** বাসে বিমানের ছোঁয়া!
** এসি বাস নেই সিলেট রুটে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ