ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সুগন্ধি আতরে সমৃদ্ধি  

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
সুগন্ধি আতরে সমৃদ্ধি   ছবি: জি এম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সুজানগর (বড়লেখা) ঘুরে: আনছারুল হক, দুই দশক আগে শূন্য হাতে শুরু করেছিলেন আগর চাষ। স্বপ্নের পাশাপাশি পরিশ্রম দিয়ে সফল হয়েছেন তিনি।

নিজে স্বচ্ছল হয়ে গ্রামবাসীকে সাফল্যের পথ দেখানোর পাশাপাশি সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন দেশের অর্থনীতিকে।

শুধু আনছারুল হকই নন, সুগন্ধির উৎস আগর গাছ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করেছেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগর গ্রামের আরও অনেকে।

আনছারুলের ভাষ্য ‘আমাদের এ কাজ বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। প্রায় ৫০০-৬০০ বছরের পুরানো। বাপ-দাদার কাছ থেকে শিখেছি। পরে নিজে চাষ করি এবং ফ্যাক্টরি স্থাপন করি। শূন্য হাতে ব্যবসায় হাত দিলেও বর্তমানে আমার কোনো অভাব নেই। ’ 

গ্রামে স্থাপিত নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাদিয়া এন্টারপ্রাইজে দাঁড়িয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এক সময় এখানে আগর চাষিদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। তখনও দেশ ভাগ হয়নি। অনেককে জেলও কাটতে হয়েছিলো। তখন মালটি (আগর গাছ) আমদানি করতে হতো আসাম থেকে।

‘এখানে ম্যানু্ফ্যাকচার হতো আর বিক্রি হতো করাচিতে, কারণ মার্কেট ছিলো তখন সেখানে। ’ 
তিনি বলেন, দেশ ভাগ হওয়ার পর পাকিস্তান-হিন্দুস্তান হয়ে গেলো, তখন আমাদের পূর্বসূরীদের জেলে ভরে দেয় তৎকালীন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।

‘এরপর তারা চলে যান আসামে। সেখানে আগর গাছ চাষ বা বাগান ক্রয় করে মার্কেট করেন বোম্বেতে। ওই সময় করাচির যে পার্টিগুলো ছিলো অর্থাৎ আরবিদের সঙ্গে যোগাযোগকারীরাও সেখানে চলে যান। তাদের মধ্যে আমার বাবাও ছিলেন। চলে যাই আমিও। ’

তখনকার দিনে আগর চাষিদের অবস্থা তুলে ধরে বাংলাদেশ আগর অ্যান্ড আতর ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনছারুল হক বলেন, ভারতে থাকাকালে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে আতরের ব্যবসা করি। এরপর ১৯৯০ সালে দেশে চলে আসি। ওই সময় এখানে কারবার ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো।

‘দেশে ফিরে দেখি ছোট আকারে অনেকেই কাজটা (আগর গাছ চাষ ও আতর প্রস্তুত) করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ভেবে দেখলাম, কিছু করলে লাভবান হবো। প্রথমে ইন্ডিয়া থেকে দু’টি প্ল্যান্ট আনলাম। দেখি বেশ ভালোই চলছে, এরপর  সিদ্ধান্ত নিই, এখানে এ শিল্প স্থাপন করলে ভালো কিছু হবে। ’

আলাপকালে নিজের অতীত ব্যবসার পুঁজিসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন এই সফল ব্যবসায়ী। জানালেন, আগর চাষ নিয়ে নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও।

বলেলেন, ‘পুঁজি কম, তাই প্রথমে ছোট আকারেই ব্যবসা চলে। মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণও নিয়েছি। এক সময় ব্যবসা ভালো হলে তা আরও বড় করি। দু’টি ডেকচি (আতর তৈরির প্ল্যান্ট) দিয়ে শুরু করি। পরে আরও সাড়ে তিনশ’ ডেকচি আনি, যা এলাকার অনেককেই দেওয়া হয়। ’
 
তিনি বলেন ‘প্রথমে ডেকচিগুলো অবৈধভাবে আনা হতো। কিন্তু এখন বৈধভাবেই তা ইমপোর্ট করা হচ্ছে। ’
 
ব্যবসা শুরুর গল্প তুলে ধরে আনছারুল বলেন, প্রথমে আমার বাবার মাটি (জমি) বিক্রি করে একলাখের  কিছু বেশি টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এছাড়া কোনো পুঁজি ছিলো না। কিন্তু শুরুর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ’

‘এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালো আছি। প্রতিমাসে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আসে বলে, ব্যবসাও বড় করেছি,’ যোগ করেন তিনি।

‘ব্যবসার বেশির ভাগ কাঁচামালই কিনতে হয়’ জানিয়ে আনছারুল বলেন, আমার নিজের বাগান একটি। কিন্তু বেশির ভাগ কাঁচামালই (গাছ) অন্যের বাগান থেকে কেনা হয়। সেখান থেকে আতর উৎপাদন করে এক্সপোর্টও করি।

৩০টি চুলার একটি বড় প্ল্যান্ট থেকে সাধারণত তিন-চারশ তোলা আতর হয় বলে জানান তিনি।

ভালো মানের এক তোলা আতরের সর্বোচ্চ মূল্য ৮ হাজার টাকা, সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ হাজার টাকা। আর ভালো মানের এক কেজি আগর উড বিক্রি হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকায়। বিদেশে এটি মান ভেদে ১০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত হয়।

আনছারুল জানান, এখানে ২৬টি চুলায় নিয়মিত আতর তেল তৈরির প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। রয়েছেন তিনজন স্থায়ী শ্রমিক। তবে মৌসুমে এ সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ পর্যন্ত হয়।

যন্ত্রপাতি আমদানির জন্যে ভারত সীমান্তে সিলেটের বিয়ানীবাজারের সুতারকান্দি স্থলবন্দর উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
এমএ/

**আগর থেকে আতর
**‘যন্ত্র-দেয়াল’ ভাঙছে সিলেটের ‘ওসমানী শিশু উদ্যান’
** এখনও সময় জানায় আমজাদের সেই ঘড়ি​
**পর্যটন বর্ষের প্রচারণা নেই মাধবকুণ্ডে
** ঝরনার পাহাড়ে ফাটল, সতর্ক হোন
**জাফলং পর্যটনে বাধা ‘সড়ক’
**অযত্নে-অবহেলায় আদিত্যপুর গণকবর

**যাত্রীর ইয়ার্ডে পাবলিকের কার পার্কিং
** ফাংশন নেই শায়েস্তাগঞ্জ জংশনে
** সন্ধ্যে হতেই দোকান উঠে যায় বানিয়াচং বাজারে
** দু’টি পাতার একটি কুড়ির নিচেই অন্ধকার
** পর্যটনে আকর্ষণ তারাও
** স্বচ্ছ লেকে লাল শাপলার নিমন্ত্রণ
** ‘মৌলভীবাজার রুটের অধিকাংশ যাত্রীই পর্যটক’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ