ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ঈদগাহ’র ভাঁজে ভাঁজে ইতিহাস

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৬
ঈদগাহ’র ভাঁজে ভাঁজে ইতিহাস ছবি: আবু বকর সিদ্দিকী

সিলেট ঘুরে: এখানকার সিঁড়ির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস। বাঁধানো বিস্তৃত চত্বর আর ওয়াকওয়েতে মিশে আছে স্বাধীনতাকামী বীরদের বীরত্বগাথা।

পূর্ব চত্বরে শান্ত হয়ে শুয়ে থাকা ছোট্ট দিঘির নিস্তরঙ্গ জলে কতো কথা যে জমা হলো তার হিসাব কেইবা রেখেছে!

১৭৭২ সালে অকুতোভয় দুই ভাই সৈয়দ মোহাম্মদ হাদী (হাদা মিয়া) ও সৈয়দ মোহাম্মদ মেহেদী  (মাদা মিয়া) এর নেতৃত্বে এখানে সংঘটিত হয়েছিলো ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থান। ইংরেজদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে তারা শহীদ হলেও ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিলো সিলেটের আনাচে কানাচে।  

পরবর্তীতে সিলেটের ঐতিহাসিক সব সমাবেশের সাক্ষী হয়ে ওঠে এই ময়দানই। অবিভক্ত ভারতের অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী আসেন এ মাঠের সভায়। আসেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মওলানা মোহাম্মদ আলী। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের মতো নেতাদের পদধূলিও পড়ে এ মাঠে।

এখানে এলে তাই ইতিহাসের একটা প্রচ্ছন্ন আবহ জড়িয়ে রাখতেই পারে। তবে অতীতের গৌরবময় ঘটনাগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ কোথাও লিখে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করলেই ভালো হতো বোধ হয়। আরো রাখা যেতে পারতো এখানকার শুরুর ইতিহাসটাও।

কার্যত এই ময়দান তো আসলে ঈদগাহ মাঠ। ময়দানের মশ্চিমে উঁচু প্লাটফর্মের ওপরে এখনো সদম্ভে বিরাজ করছে আজদাহা ঈদগাহ’র ৪শ’ বছরের পুরনো শরীর। ১৭০০ সালের প্রথম দশকে সিলেটের তৎকালীন মুঘল ফৌজদার ফরহাদ খাঁ কারুকার্যময় এই ঈদগাহ নির্মাণ করেন। এক সঙ্গে লক্ষাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন এখানে।
এই শাহী ঈদগাহ এর অবস্থান সিলেট নগরীর উত্তরে। এই ঈদগাহ এর নামে এ এলাকাটিরও নাম হয়েছে শাহী ঈদগাহ। এর উত্তরে শাহী ঈদগাহ মসজিদ, পাশে টিলার ওপরে বন কর্মকর্তার বাংলো, দক্ষিণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সিলেট কেন্দ্র, পূর্ব দিকে হযরত শাহজালাল (র.) এর অন্যতম সফরসঙ্গী শাহ মিরারজী (র.) এর মাজার ও তার পাশে টিলার ওপর সিলেট আবহাওয়া অফিস।

উঁচু উঁচু ২২ সিঁড়ি মাড়িয়ে তবে মূল ঈদগাহ এর মেঝে। বাঁধানো মেঝে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন দেওয়ালে। পশ্চিম দেয়ালের পুরোটা ‍জুড়ে ছোট ছোট গম্বুজ। সীমানা প্রাচীরের চারিদিকে সব মিলিয়ে ১০টি গেট। টিলার মাথায় গড়া ঈদগাহ থেকে তাকালে চারিপাশের সৌন্দর্য অন্যরকম এক আবহ নিয়ে ধরা দেয়।

তবে কাঠামো অটুট থাকলেও দফায় দফায় সংস্কারে ঈদগাহর আদি রূপ অনেকটাই ঢাকা পড়েছে পলেস্তারা আর রঙের পোঁচে। মিহরাবের ভেতরে পুরোটাই মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে টাইলসে। মূল গম্বুজের ওপরে সবুজ রঙের পোঁচ। উঁচু ঈদগাহর পশ্চিম-দক্ষিণ কোণায় উঠছে সুউচ্চ মিনার। পশ্চিম-দক্ষিণ কোণায় উঠছে সুউচ্চ মিনার।

প্রয়াত দুই অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও এম সাইফুর রহমান এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ অনেক রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী জড়িয়ে আছেন এই ঈদগাহ’র বিভিন্ন সময়ের সংস্কার কাজে।

বিকেলের অবসরে অনেকেই এসে সময় কাটান এখানে। নিচের খোলা মাঠে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ছায়া দিয়ে রাখে এই ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানটিকে।     
সামনের ময়দানসহ পুরো ঈদগাহ ঘিরে রাস্তা, রাস্তার ওপাশে সারি সারি দোকানপাট।

প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে এখানে বিশাল দুটি ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে এক সাথে লক্ষাধিক মুসল্লী ঈদের নামাজ আদায় করতে পারে।
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই শাহী ঈদগাহ এর দূরত্ব ৭ কিলোমিটার। সিলেট রেল স্টেশন থেকে দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। সিলেটে বেড়াতে এলে এই ঈদগাহতে একবার ঢুঁ না মারলেই কিন্তু নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ