ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সিলেটের মতো নয় হবিগঞ্জের ভাষা

মাহবুব আলম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৬
সিলেটের মতো নয় হবিগঞ্জের ভাষা

হবিগঞ্জ থেকে ফিরে: বৃহত্তর সিলেট জেলার অন্তর্গত হলেও হবিগঞ্জের মানুষের মুখে সিলেটি ভাষা অনুপস্থিত। কথা-বার্তায় এ দু’অঞ্চলের মানুষের উচ্চারণ ও রীতিতে বিশেষ অর্থে ক্রিয়াপদের তারতম্য হয়ে থাকে- যা এখানকার ভাষাকে আলাদা করে দিয়েছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, হবিগঞ্জ থেকে সিলেটের দূরত্ব ৮০ মাইল। সে কারণে দু’অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষার উচ্চারণ ও রীতিতেও আশি শতাংশ পার্থক্য রয়েছে।

সিলেটিরা যদি বলেন, ‘কিরে বো কিতা খররাই? (কি খবর?), সেক্ষেত্রে হবিগঞ্জের মানুষজন বলেন, ‘কিতা খরো?’

প্রায় শতাব্দীকাল ধরে সিলেট জেলার মহকুমা ছিলো হবিগঞ্জ। এরপরও নিজস্ব ঐতিহ্য আর ঢং ত্যাগ করেনি এখানকার মানুষ। নিজস্ব ঢংয়েই কথোপকথন দিয়ে ভাবের আদান-প্রদান করেছেন তারা।

হবিগঞ্জবাসীর মুখে ‘সিলেটি’ ভাষার বৈশিষ্ট্য না পেয়ে বিভিন্ন সময় অবাক হন অন্যান্য জেলার মানুষ।

তবে এ ঢংকে হবিগঞ্জের ভাষা ঐতিহ্যের বিশেষ লক্ষণীয় ও গৌরবময় দিক হিসেবে দেখেন স্থানীয়রা।

চুনারুঘাটের বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিক মিয়া বলেন, ‘আমরার বাষার (ভাষা) সঙ্গে সিলেডের (সিলেট) মানষ্যের বুলি মিলে না। তারা পত্যিডা উচ্চারণে জিহ্বাকে ঠেলা দিইয়া কয়। ’

‘আমরার বাষা একটা আলগা ঐতিহ্য ও গৌরবের,’ নিজ ভাষাতেই বলেন তিনি।

ভাষা বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে পৃথিবীতে সাড়ে তিনহাজারেও বেশি ভাষা প্রচলিত। মৌখিক ভাষা প্রতি দশ বর্গকিলোমিটার অন্তর পরিবর্তন হয়। প্রত্যেক ভাষারই একাধিক রূপ রয়েছে। বাংলা ভাষাতেও থানা বা উপজেলা ভেদে মৌখিক ভাষার রূপান্তর ঘটেছে। এ রূপকেই বলা হয় উপভাষা।

সেক্ষেত্রে সিলেটেরও একটি উপভাষা রয়েছে। এ ভাষাতেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন তারা।

সিলেটের নাগরি লিপি গবেষক মোস্তফা সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ভাষা সাধারণত ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন হয়। সেক্ষেত্রে মৌলভীবাজার ও সিলেটের মানুষের ভাষার ধরণ ও রীতি এক হলেও হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের ভাষার কিছুটা ভিন্নতা আছে।

‘সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার সঙ্গে হবিগঞ্জের ভাষার পার্থক্য অনেক। হবিগঞ্জের ভাষার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খানিক প্রভ‍াব রয়েছে। ’

সৈয়দ হবিব উল্লাহর হবিগঞ্জ জেলার একদিকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা, অন্যদিকে তিনদিকে মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট ঘিরে ধরেছে। যার অধিকাংশই হাওর-বাওড় বেষ্টিত।

নৌ-যোগাযোগের প্রাধান্যের কারণে প্রাচীনকালে এ অঞ্চলের সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে যাত্রার পালাগান, জারিগান, কাহিনীকাব্য, পাঁচালীর উদ্ভব ঘটেছে। সৃষ্টি হয়েছে ঘাঁটুগানেরও।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৬
এমএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ