ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সোনার বাংলায় পানির জন্য হাহাকার!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৬
সোনার বাংলায় পানির জন্য হাহাকার! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সোনারবাংলা এক্সপ্রেস থেকে: দেশের ট্রেন সেবায় সর্বশেষ সংযোজন সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে যে পানি দেবেনা শুরুতে কোন যাত্রীই তা বুঝতে পারেনি। খাবার প্যাকেট সরবরাহের সময় পানি পানি দাবি উঠলেও সরবরাহকারি তাতে কর্ণপাত না করেই চলে যান।

যাত্রীরা ভাবেন, একটু পরেই পানি আসবে। এরপর বেশ কিছু সময় পানি চাওয়ার মতো কাউকে খুঁজেই পেলো না যাত্রীরা।

কিছুক্ষণ পর টিকিট চেক করতে আসেন টিটি। যাত্রীদের কাছে জানতে চান, কোন অসুবিধা আছে কি? খাবার সরবাহের দায়িত্ব পর‌্যটন করপোরেশনের হলেও এই ট্রেন কর্মকর্তার কাছেই এবার পানির দাবি তোলেন যাত্রীরা। বিগলিত হেসে টিটি সাহেব বলেন, পানির দায়িত্ব তো আমাদের না। আপনাদের অভিযোগ আমরা পৌছে দিচ্ছি। পর‌্যটনের লোক আসবে।

সময় যেতে থাকে। ট্রেনের চাকা গড়াতে থাকে ঢাকার দিকে। কিন্তু পর‌্যটনের লোক আর আসে না। ট্রেন কর্তৃপক্ষেরও কাউকে দেখা যায় না খোঁজ নিতে। চা কফি বিকোতে আসা কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে, ক্যানটিন থেকে কিনে আনার পরামর্শ দেন তিনি।  ক্যানটিনের অবস্থান ১৬ বগির দীর্ঘ ট্রেনের একেবারে পেছনের বগিতে।

ট্রেন টানতে থাকা ইঞ্জিন লাগোয়া বগি থেকে সেখানে যাওয়া বড় ধরনের হ্যাপাই বটে। সত্তর কিলোমিটারের বেশি বেগে চলতে থাকা ট্রেনের দুলুনির সঙ্গে যুদ্ধ করে সেখানে যাওয়া অনেকটা যুদ্ধের মতো। অনেকে তাই সিটে বসেই পানি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।  কিন্তু হায় কোথায় পানি। কোথায় পর্যটনের কর্মকর্তারা। যাদের হাতে এই সোনার বাংলার খাবার সরবরাহের দায়িত্ব! 
একঘণ্টা যায়, দু’ঘণ্টা যায়, তিন ঘণ্টা যায়, হাহাকার বাড়তে থাকে পানির জন্য। ব্যাপারটা কি জানতে ফোন করা হয় পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরীর কাছে।

তিনি সাফ জানিয়ে দেন, এই দায়িত্ব আমার না। আমি এতো ছোট খাটো বিষয় নিয়ে পড়ে থাকি না। আমি এসব ফালতু বিষয় নিয়ে পড়ে থাকি না-কি! আপনারা কেন আমাকে ফোন করেছেন।

চেয়ারম্যানের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফোন করা হয় সোনার বাংলায় দায়িত্বরত রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপক ওমর ফারুকের কাছে। তিনি বলেন, লোক পাঠাচ্ছি। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি ততোক্ষণে আখাউড়া পেরিয়ে এসেছে। তখন আসেন সহকারী রেস্তোরাঁ ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন।

তিনি জানান, যাত্রীদের দাবির মুখেই সোনার বাংলায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে পর্যটন। এর বদলে এখন কোকাকোলার ক্যান দেওয়া হচ্ছে।  

একশ’ পঁচানব্বই টাকায় কেবল একটি করে কাটলেট, স্যান্ডউইচ, আপেল ও কোল্ডড্রিংস কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে চিকেন ফ্রায়েড রাইস ও ফ্রায়েড চিকেন দেওয়া হতো। কিন্তু বিকেলের এই ট্রেনে যাত্রীরা এসব খেতে চায় না। বিকেলের ট্রেনে তারা চায় স্ন্যাকস। তাই খাবারের এই প্যাকেজ।

প্রতিটি কাটলেটের দাম ১’শ টাকা করে বলে জানান পর্যটন করপোরেশনের এই রেস্তোরাঁ কর্মকর্তা। ট্রেন ছাড়ার পর সাড়ে চার ঘণ্টা পেরিয়েছে। আর ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছুবে সোনারবাংলা।

চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ার পর এই ট্রেনের ভেতরে যাত্রীদের পক্ষ থেকে যে পানির দাবি উঠেছিল, তা এখন হাহাকারে পরিণত হয়েছে। টিকিটের সঙ্গে খাবারের জন্য একশ’ পঁচানব্বই টাকা আদায় করা হলেও পানি ছাড়াই ঢাকা পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের এই ট্রেনটি।

যাত্রীদের অভিযোগ, শুরুর সময়ে পাঁচ ধরনের খাবারের প্যাকেজ সরবরাহ করা হবে বলে শুনেছি। কিন্তু চোখে দেখিনি। আর পানি যে দেবে না, তাতো বলে দিলেই পারত। নিদেন পক্ষে ট্রেনের কেন্দ্রীয় সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলতে পারত। উন্নত সেবার সম্ভাবনা নিয়ে লাইনে গড়ানো ট্রেনটিকে কারবালা করে না তুললেও তো চলত। আর কোল্ড ডিংস সরবরাহের বেলায় ডায়বেটিস রোগিদের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা দরকার ছিল না কি!

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৬
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ