ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি ছবি: সোহেল সরোয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আলুটিলা রহস্যগুহা (খাগড়াছড়ি) ঘুরে: পাঁচ-ছয়শ’ ফুট উঁচু আট-দশটি পাহাড় ডিঙিয়ে পড়ন্ত বিকেলে আলুটিলা রহস্যগুহায় পৌঁছানোর পর শরীরটা আর নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছিলো না। তবুও দিনের কর্মসূচিতে রহস্যগুহা পরিদর্শন অন্তর্ভুক্ত থাকায় শেষ পর্যন্ত যেতে হলো সেখানে।


ক্লান্ত শরীর, পেট কামড়ানোর ক্ষুধা, অনভ্যস্ত পা জোড়ার অতিমাত্রায় পাহাড় ডিঙানো আড়ষ্টতা ও প্রচণ্ড মাথা ব্যথা নিয়ে যখন রহস্যগুহার নিকোষ কালো অন্ধকারে ঢুকে পড়লাম, তখনও ঠিক বুঝতে পারিনি কতটা গা ছমছমে অভিজ্ঞতা অর্জনের পথে রয়েছি।

মশালবহনকারী দুই সহকর্মী এরই মধ্যে ঢুকে পড়েছেন রহস্য গুহায়। ক্লান্ত শরীরটা টেনে নিতে গিয়ে কিছুটা পেছনে পড়ায় মশালের আলো দেখা যাচ্ছে না। আলো হারানো এই সামান্য ক্ষণটা হঠাৎ করে যেন হারিয়ে গেল হাজার বছরের অন্ধকারের গর্ভে।

গা ছমছমে আনন্দ অনুভূতি পূর্ণতা পাওয়ার আগেই একজন সহকর্মী তার হাতের মশাল এগিয়ে ধরলেন। কবরের মত অন্ধকারের মধ্যে ছোট্ট মশালের মাথায় জ্বলা আলোটি জোনাকীর আলোর মত মনে হলো!

তবে এই জোনাকীর আলো সদৃশ মশালটা না থাকলে হাজার চেষ্টা করেও সামনে-পেছনে এক পা নড়ার ক্ষমতা ছিল না। শুধু যে অন্ধকার-তা নয়। গুহার ভেতরে প্রবাহমান ঝিরি, শ্যাওলা জড়ানো পিচ্ছিল পাথর, ছোট-বড় গর্ত মারিয়ে সামনে এগোনো কিছুতেই সম্ভব না।

এ রকম হ্যাপা জেনেও প্রতিদিন শত শত লোক খাগড়াছড়ির অন্যতম পর্যটন স্পট রহস্যময় গুহায় ঢুকছেন। অবলীলায় পাড়ি দিচ্ছেন ৩ শ’ ৬৮ ফুট দীর্ঘ এ প্রকৃতিক সুড়ঙ্গ।

খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ পথের পূর্ব দিকে রহস্য গুহার অবস্থান। পাহাড়ের চূড়া থেকে ৩১০টি সিঁড়ি নিচে নামলেই স্বপ্নীল গুহামুখ। গা ছম ছম করা অনুভূতি নিয়ে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করলেই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞা অর্জন হবে।
আঁধার এই গুহার তলদেশ দিয়ে নিত্য প্রবাহমান শীল জলের ঝর্ণা আপনাকে অনায়াসে নিয়ে যাবে আরব্য উপন্যাসের রহস্যঘেরা জগতে। কেবল সাহস করে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে একবার ঢুকে পড়লেই হবে।
 
এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক এ সুড়ঙ্গ কবে সৃষ্টি হয়েছে-তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে এর ভেতরের দেয়াল, পাথরের খাঁজ, ঝিরিতে ক্ষয়ে যাওয়া পথ দেখলে মনে হয় হাজার বছর আগে সৃষ্টি হয়েছে এটি।
 
ধারণা করা হয়, আশপাশের কয়েক বর্গ কিলোমিটার জুড়ে যত ঘামা পাহাড় সেগুলো থেকে চুইয়ে পড়া জলরাশি আলুটিলার পাহাড়ের তলদেশ দিয়ে চেঙ্গি নদীতে পড়ার আগে এ সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে।
 
কালক্রমে এই সুড়ঙ্গটির উৎসমুখ ও বর্হিগমন পথ প্রশস্ত হতে হতে রহস্য গুহায় পরিণত হয়।   স্থানীয়দের ভাষায় এর নাম মাতাই হাকর। যার বাংলা অর্থ দেবগুহা।

পার্বত্য তিন জেলার অন্য পর্যটন স্পটের মত আলুটিলা রহস্য গুহাও সার্বক্ষণিক সেনা ও পুলিশ সদস্য দ্বারা বেষ্টিত থাকে। ফলে নিরাপত্তার ব্যাপারটি নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন নেই পর্যটকদের।

তবে অন্ধকার এ গুহায় প্রবেশ করতে হলে বিকেল ৫টার আগেই যেতে হবে। ৫টার পরে এর মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ছায়া-সুনিবিড় পাহাড়ি পরিবেশে আলুটিলা রহস্যগুহা দেখতে গেলে বোনাস হিসেবে পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে পুরো খাগড়াছড়ি শহরটাকে দেখা যাবে। আট কিলোমিটার দূরের এই শহরটি পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখার সুযোগ আর কোথাও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

শহর থেকে খুব কাছে হওয়ায় অন্য পর্যটন স্পট পরিদর্শন শেষে শহরে ঢোকার আগে দেখে নিতে পারেন আলুটিলা রহস্যগুহা। অথবা শহরে অবস্থানকালীন এক ঢুঁ মেরে আসতে পারেন রহস্যগুহায়।
 
আলুটিলা রহস্যগুহায় প্রবেশের জন্য ১০ টাকার টিকিট কিনতে হবে পর্যটকদের। আর প্রতি মশালের জন্যও গুণতে হবে ১০ টাকা। এটুকু অর্থ খরচ করলে যে আনন্দটুকু পাওয়া যাবে, তা হলিউডের অ্যাডভেঞ্চার মুভিতেও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

** পাহাড়ে নিরুত্তাপ হরতাল
** সময় বশীভূত ইউএস বাংলায়!


বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এজেড/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ