ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির সাজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির সাজ ছবি: ডিএইচ বাদল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সাজেক (বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি) থেকে: প্রায় আঠারোশ’ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়া, যেন প্রকৃতির মিনার। এই চূড়ার চারপাশে ঘন সবুজ অরণ্যের ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি।

সেই সারি সারি পাহাড়ের ওপর কুয়াশার মতো উড়ছে ধূসর এবং দুধসাদা মেঘ। আর সেই মেঘের গা ছুঁয়ে আসা বাতাস শীতল পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে গায়ে।
 

এমন অনুভূতি হয়তো নৈসর্গিক। কিন্তু রাঙামাটির সাজেকে যারা একবার অন্তত এসেছেন, তাদের কাছে এই অনুভূতি ‘জাগতিক’ই। আকাশ ছোঁয়া আর গিরিখাদে নামার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত সর্পিল পাহাড়ি সড়ক বেয়ে সাজেকে পৌঁছাতে যে রুদ্ধশ্বাস দশা হবে, তা নিমিষে উবে দেবে এর ‘নৈসর্গিক’ অথবা ‘জাগতিক’ সৌন্দর্য।

অথচ বছর পাঁচ-সাত আগেও আড়ালে ছিল দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ইউনিয়নের প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি। কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত সাজেকের অবস্থান রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার একেবারে পূর্বে; ভারতের মিজোরাম সীমান্ত ঘেঁষে। মূলত কাসালং পাহাড় শ্রেণির মাঝামাঝি রুইলুইপাড়া আর কংলাক পাড়াকে ঘিরে গড়ে উঠেছে সাজেকের পর্যটন কেন্দ্র।

খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা ও বাঘাইছড়ি হয়ে অথবা রাঙ্গামাটি থেকে রুইলুইপাড়া দিয়ে ঢুকতে হয় সাজেক ভ্যালিতে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা নয়নাভিরাম এ রুইলুইপাড়া পর্যটন এলাকায় রয়েছে পার্ক, গার্ডেন, একান্তে বসে পাহাড় দেখার জন্য ছোট ছোট খোলা ছাউনি, দোলনা। রয়েছে রিসোর্ট, কটেজ, লজ, খাবার হোটেল ও পিকনিক স্পটও। আরও আছে সূর্য ঘড়ি এবং দিক নির্দেশক!

রুইলুইপাড়ায় ঢোকার পর থেকেই দেখা গেল, গার্ডেনে রাখা ছোট ছাউনিগুলোতে বসে অদূর-দূরের মেঘ-পাহাড়ে আলো-ছায়ার খেলা দেখতে মগ্ন মানুষ। দেখা গেল, এই অনিন্দ্য সুন্দরকে সাক্ষী করে একটি সেলফি অথবা ছবি ফ্রেমবন্দি করার তোড়জোড়ও। কয়েকজন বোঝার চেষ্টা করছিলেন সূর্য ঘড়িটা! নকশা, স্থাপন আর আকৃতি দেখে বোঝা গেল, সূর্য যখন যখন ঘড়িটার ওপর পড়ে, তখন এর ঘণ্টা আর মিনিটের কাঁটার ছায়া নির্ধারক সংখ্যার ওপর পড়ে।

রুইলুইপাড়ার সৌন্দর্যে অবগাহনের পর ভেতরের দিকে দুই কিলোমিটারের মতো পথ বেয়ে সিপ্পু চূড়ায় উঠে আবিষ্ট হয়ে যেতে হলো আরেক মোহে; আশপাশের পাহাড় শ্রেণি যেন কুর্নিশ করে আছে সিপ্পুকে। আর সিপ্পু যেন ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারিতে মেঘেদের ছোটাছুটি, এক পাহাড়কে আরেক পাহাড়ের ছায়ায় ঢেকে রাখার দুরন্ত খেলা দেখছে।

রুইলুইপাড়ায় থাকা সেনাবাহিনীর দু’টি হেলিপ্যাডে অথবা হরিজন গার্ডেনে দাঁড়ালে দূরের মিজোরামের পাহাড় শ্রেণি দেখা যায়। সিপ্পুর চূড়ায় উঠলে সেই পাহাড়ের সারি হয়ে ওঠে আরও স্পষ্ট।

ভোরে খাগড়াছড়ি থেকে যখন গাড়ি সাজেকের উদ্দেশে ছাড়লো, তখন থেকেই এই সময়ের পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের এই স্পট নিয়ে আগ্রহ-উদ্দীপনার পারদ বাড়ছিলো। নানা আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি গাড়ি যতোই সাজেকের কাছাকাছি যাচ্ছিল; মুগ্ধতার আবেশ ততোই ভারি হচ্ছিল।

যখন একেবারে সাজেকের কাছাকাছি পৌঁছালো গাড়ি, তখন মেঘের দেশ হয়ে ভেসে আসা শীতল বাতাস যেন সেই উদ্দীপনাকে স্বাগত জানালো। শীতল পরশের এই আবেশ ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত সাজেকে অবস্থান করতে হয়েছে যতক্ষণ।

যেমন আবিষ্ট হয়ে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হামদন মিয়া, মহিবুল্লাহ এবং আবদুল আলী। তারা বলেন, বন্ধুদের কাছে সাজেকের গল্প অনেক শুনেছি। এবার দেখলাম। আর যাই হোক, আশপাশে পাহাড়ের যে ঢেউয়ের খেলাটা দেখেছি, সেই পাহাড়ের মেঘ ছুঁয়ে আসা শীতল বাতাসের মধুর শীতলতা এখনও কাটেনি।

হামদন মিয়া বলেন, বান্দরবানের নীলাচলেও মেঘ-পাহাড়ের এই খেলা আছে, তার চেয়ে কম সুন্দর মনে হয়নি সাজেককে! বরং সিপ্পু চূড়া থেকে যে নজরকাড়া সৌন্দর্য এক পলকে দেখা গেছে সেটাকে অনন্যই মনে হয়েছে!

দিনভর উচ্ছ্বাসে কাটলেও ফেরার পথে কিছুটা দুঃখ নিয়ে যেতে হয়েছে হামদন-আবদুলদের। তারা বলছিলেন, সকাল বেলা যখন মিজোরামের পাহাড়ের বুক চিঁড়ে সূর্য ওঠে, তখন তার পাশের এবং বিপরীত পাশের পাহাড় শ্রেণিতে অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। কিন্তু ফেরার তাগাদা এই দৃশ্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত করলো।

ফেরার পথে রুইলুইপাড়া পর্যটন এলাকা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। তিনি পর্যটন স্পট হিসেবে সাজেকের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়তে থাকার কথা তুলে ধরে বলেন, দুর্গম বলে দেশের এই বৃহত্তম ইউনিয়নটি সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও অবহেলিত ছিল। সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় এখন সাজেকের দিন বদলে গেছে। এই পর্যটন এলাকা ঘিরে এখন অনেকে জীবিকা নির্বাহের উপায় খুঁজে পেয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আশাবাদের কথা শুনিয়ে জানান, অফ সিজন (মৌসুম নয়) হওয়ার পরও এখন প্রতিদিন শতাধিক গাড়ি সাজেকের এনট্রি (প্রবেশ) তালিকায় লিপিবদ্ধ করেন তারা। চান্দের গাড়িসহ অন্যান্য বাহনের প্রত্যেকটিতে গড়ে পাঁচজন করে থাকেন। আর সিজনে এই তালিকা কয়েকশ’ ছাড়িয়ে যায়। এখন মিডিয়ায় প্রচার হতে থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে।

যেভাবে যাবেন সাজেক

সাজেক রাঙামাটির ইউনিয়ন হলেও যোগাযোগে সহজ খাগড়াছড়ির সঙ্গে।   সেজন্য সাজেক যেতে  প্রথমে খাগড়াছড়ি শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে সেন্টমসার্টিন পরিবহন এই রুটে চলাচল করে। আছে শান্তি, শ্যামলী ও সৌদিয়াসহ ইত্যাদি পরিবহনও। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার প্রধান বাহন জিপ। এটা চান্দের গাড়ি বলে পরিচিত স্থানীয়দের কাছে। রিসোর্ট-কটেজ পর্যাপ্ত থাকলেও খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে অগ্রিম অর্ডার দিতে হয় সাজেকে। অন্যথায়...খাবার পেতেও পারেন, না-ও পেতে পারেন।

**মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ

** নট ইউজিং ‘ইউজ মি’

বাংলাদেশ সময়: ১২২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এইচএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ