ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ঘুম ভাঙালো মেঘ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
ঘুম ভাঙালো মেঘ ছবি: আসিফ আজিজ ও শামীম হোসেন

নীলাচল, বান্দরবান ঘুরে: ভোরেই উঠতে হবে বলে মোবাইলে অ্যালার্ম দেওয়া ছিল। কিন্তু তার আর দরকার হলো না।

গভীর ঘুম ভেঙে গেল হিমেল পরশে। খানিকটা শীত শীত অনুভূতিও হতে থাকলো। প্রথম হেমন্তের শীত বুঝি? 

আড়মোড়া ভেঙে উঠতেই চোখ গেল দরোজার দিকে। মনে হলো, সারি সারি মেঘ যেন মিছিল নিয়ে আবৃত করে দিচ্ছে নীলাচলের ঘন সবুজ পাহাড়কে। সেই মিছিল খণ্ড খণ্ড হয়ে ঢুকছে পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা কটেজ ‘চাঁদের আলো’তে।

মনে হলো, হেমন্তের শীত কোথায়? এই মেঘের পরশই তো শীতল আদরে ঘুম ভেঙে দিলো খানিক আগে।  
সহযাত্রী তখন ‘চাঁদের আলো’র বারান্দায় স্মার্টফোনে ক্লিক ক্লিকে ব্যস্ত। দূর-সুদূরের পাহাড় থেকে মেঘেরা যেন দল বেঁধে ছুটে আসছে ‘চাঁদের আলো’র ঝুলবারান্দার দিকে, আর নরম বাতাসে মিশে বসে যাচ্ছে দেহের প্রতিটি রোমকূপে।
 
সহযাত্রীই বলে উঠলেন, বান্দরবানে ঘুরতে এলে নীলাচলে এসে যেমন পুরো পাহাড়ের রাজ্যটাকে একবার না দেখলে চলে না, তেমনি আবার নীলাচলে এলে এই কটেজে এক ভোর না কাটালেও চলে না। চলে না মেঘ ছুঁয়ে আসা বাতাস গায়ে না মাখলে।
 
এরমধ্যেই মেঘের চাদর তুলে সবুজ পাহাড়ের ঘুম ভাঙাতে পুবাকাশে সোনারঙে উজ্জ্বল হতে থাকলেন ‘আলোর দেবতা’। উদয় হতে থাকলেন রাঙাপ্রভাতের বার্তা নিয়ে।
 
‘চাঁদের আলো’ থেকে মিনিট তিনেক ইট ও কাঠের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে নীলাচলের প্রাণকেন্দ্র বা ভিউ পয়েন্টে এসে দেখা গেল পাহাড়ি প্রভাতের আসল চিত্র। সবাই যেন ‘মেঘের ক্যানভাসে’ ছবি ফ্রেমবন্দি করার উৎসবে মত্ত। কয়েকজন সব ছেড়েছুড়ে লেগে গেলেন একেবারে ‘মেঘ আহারে’। মুখটা এমনভাবে হা করে রাখলেন, যেন মেঘ আর মেঘ ছুঁয়ে আসা বাতাস ঢুকে যাচ্ছে একেবারে নাড়িতে।
 
সূর্যের সোনারঙ তখন সোনালি রূপ দিয়েছে আকাশ-মেঘকেও। ব্রহ্মাণ্ডের সব রূপ যেন তখন হাসতে থাকলো নীলাচলে, নীলাচল ঘিরে থাকা ঢেউ খেলানো পাহাড়ে, পাহাড়ের ঘন সবুজ অরণ্যে, মেঘেদের মিছিলে, প্রথম হেমন্তের সাদা-নীল আকাশে।
 
এমন রূপ দেখেই বুঝি কবির হৃদয়পটে বেজেছিল “...এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি,/সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি...”

যেভাবে যাবেন নীলাচল
বান্দরবান শহরের প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে আঁকা-বাঁকা উচু-নিচু সড়ক পেরিয়ে টাইগারপাড়া এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্স। প্রকৃতিতে থেকে প্রকৃতির নয়নাভিরাম রূপ উপভোগে এই পর্যটন স্পটে যাওয়া যাবে রাজধানী থেকে সরাসরি সড়ক পথে। ঢাকার ফকিরাপুল, কমলাপুর ও সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী, সৌদিয়া, এস আলম, ইউনিক সার্ভিস ও সেন্টমার্টিন পরিবহনসহ বেশ কিছু বাস বান্দরবানে যায়। ভাড়া এসি-নন এসি ভেদে ৬শ’ থেকে ১২শ’ টাকা পর্যন্ত। কেউ রেল বা আকাশপথে চট্টগ্রাম গেলে সেখান থেকেও বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বন্দরনগরী থেকে বান্দরবানের বাস ছাড়ে বহদ্দারহাট এলাকা থেকে।

বান্দরবানের বাস কাউন্টার থেকেই নীলাচলে যাওয়ার জন্য অটোরিকশা, চাঁদের গাড়ি ও জিপ ভাড়ায় পাওয়া যায়। ভাড়া পড়বে নীলাচলে অবস্থান ও যাত্রী বহন অনুযায়ী অটোরিকশার ক্ষেত্রে ৫শ’ থেকে ১ হাজার এবং চাঁদের গাড়ির ক্ষেত্রে ১২শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। তবে জেলা প্রশাসন বান্দরবান শহর থেকে অটোরিকশা নীলাচলে যাতায়াতে সাড়ে ৪শ’ টাক‍া ভাড়া বেঁধে দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৬
এইচএ/এসএইচ/জেডএম

আরও পড়ুন
** কেওক্রাডংয়ের চূড়া থেকে সূর্যোদয় দর্শন! (ভিডিও)
** কেওক্রাডংয়ের রাতের আকাশের কতো বিশালতা!
** মুরংদের তুলার কম্বল, টেকে ২শ’ বছর 
** আত্মশু‌দ্ধির আহ্বানে আকাশে শতো ফানুস
** মেঘ ফুঁড়ে পাহাড়ের গায়ে রোদ বাতি!
** জলের ওপর বসতভিটে
** হ্রদের জলে কার ছায়া গো! 
** সড়ক যেন আকাশছোঁয়ার খেলায় (ভিডিও)
** সাজেকের ভাঁজে ভাঁজে প্রকৃতির সাজ
** মানিকছড়ির ফুলের ঝাড়ুতে পরিচ্ছন্ন সারাদেশ
** নট ইউজিং ‘ইউজ মি’
** কেওক্রাডংয়ের দুর্গম পথে প্রশান্তির চিংড়ি
** বগালেকে ফ্রি ফিশ স্পা!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ