ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

‘পথ’র দিকে তাকিয়ে কৈখালীর জেলেরা

আবু তালহা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
‘পথ’র দিকে তাকিয়ে কৈখালীর জেলেরা ‘পথ’র দিকে তাকিয়ে কৈখালীর জেলেরা/ছবি-ডিএইচ বাদল

কালিন্দি নদী থেকে উঠে রক্ষা বাঁধ পেরিয়ে যাওয়ার সময় সিডর রেখে গেছে পায়ের ছাপ।

কৈখালী, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে ফিরে: কালিন্দি নদী থেকে উঠে রক্ষা বাঁধ পেরিয়ে যাওয়ার সময় সিডর রেখে গেছে পায়ের ছাপ। সে ধাক্কা সামলে এখনও পাড় ধরে টিকে রয়েছে তিন শতাধিক পরিবার।

এই নদীই তাদের জীবন। নদীর মাছ শুঁটকি করলে ঘোরে তাদের সংসারের চাকা।

বংশীপুর থেকে প্রায় এক ঘণ্টার এবড়ো-থেবড়ো পথ চলে গেছে কৈখালী। ভেটখালী ব্রিজের পরে হাতের বাঁয়ে নেমে গেছে মাটির রাস্তা পিচ ঢালা পথ এখানেই শেষ। সেটা ধরে কিছু দূর গেলে দেখা যায় ক্রমশ সরু হয়ে গেছে তাও। ‘পথ’র দিকে তাকিয়ে কৈখালীর জেলেরা/ছবি-ডিএইচ বাদলকৈখালীতে বন বিভাগের কার্যালয় পার হয়েই নদীর পাড় ধরে রাস্তা মোড় নিয়েছে ডান দিকে। এখানেই মিশেছে পাঁচটা নদী, এক পাশে উঁকি দিয়েছে সুন্দরবন। নদীর অর্ধেকটা পার হলে শুরু ভারতসীমা। স্থানীয়রা রসিকতা করে বলেন, ‘বাংলাদেশে সূর্য ওঠে- ভারতে ডোবে’। বিকেলের মিষ্টি রোদে নদীর পাড়ে বসে শুঁটকি পাহারা দিচ্ছিলেন আমীর হোসেন গাইন। সহাস্য মুখে প্রশ্ন করলেন, সূর্য ডোবা দেখতে এসেছি কি-না। যোগ করলেন, জায়গাটা সুন্দর তাই অনেকেই আসে সূর্য ডোবা দেখতে।

সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নাই, তাই রিপন গাজী চলেছেন মাঝ নদীতে পাতা জালে আটকে পড়া চিংড়ি তুলে আনতে। মূলত বাগদা চিংড়ি, ছোট চিংড়ি এবং রেনু পোনা ধরে কৈখালীর জেলেরা। অমাবস্যা, পূর্ণিমা হিসাব করে এক সপ্তাহ মাছ ধরলে চিংড়ির সঙ্গে এক কেজি পর্যন্ত জমা হয় ছুরি-লইট্যা মাছ বললেন তিনি।

“রাস্তা না থাকায় দাম আসে না। দুবলার চরে লইট্যার কেজি বিক্রি হয় সাড়ে তিনশ’ টাকা পর্যন্ত, আমরা সর্বোচ্চ দুইশ’ টাকা দামে বিক্রি করতে পারি। চিংড়িও ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারি না”।

বর্ষায় মাটির পথে জমে হাঁটু কাদা-পানি। তখন চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা বা ট্রলার। এ সময় যদিও খরচ কমে আসে। বছরের বাকি সময় সবচেয়ে আরামদায়ক বাহন মোটরসাইকেল। ‘পথ’র দিকে তাকিয়ে কৈখালীর জেলেরা/ছবি-ডিএইচ বাদল

ওষুধ-পথ্য-কাপড় কেনা, মাছ বিক্রি সব কিছুতে যেতে হয় ভেটখালী। তাই কেউ কেউ কিনে নিয়েছেন মোটরসাইকেল। জন প্রতি ৪০টাকা করে ভাড়ায় চারজন পর্যন্ত নিয়ে সোজা চলে যান বংশীপুর, ফেরার পথে ভেটখালীতে কাজ শেষে চলে আসেন।

বশির বাজনদার ফুরফুরে মেজাজে। তার ঘরে থাকা সব শুঁটকি বিক্রি হয়ে গেছে সকালেই। বাড়ির ওপর এসে পাইকার মাছ কিনে নিয়ে যাওয়ায় বেঁচে গেছে পরিবহন খরচ। আলাপ করতে গেলে জানালেন তার স্বপ্নের কথা। প্রায়ই মানুষ এখানে সূর্য ডোবা দেখতে আসে, অনেকে গাড়ি নিয়েও আসে। একটা পাকা রাস্তা, বসার জায়গা আর কয়েকটা শৌচাগার হয়ে গেলেই আমাদের দুঃখ শেষ হয়ে যাবে। আরও অনেক পর্যটক আসবে। দোকান করতে পারবো আমরা, কেনা-বেচা করতে ভেটখালী যেতে হবে না আর।

আরো পড়ুন..

** কৈখালীর পাঁচ গাঙের মুখে সূর্যের হাতছানি
** বিপদজনক, দৃষ্টিনন্দন সৈকত কটকা-কচিখালী
** মুহূর্তেই বন্ধু হয়ে ওঠে কটকার হরিণ-বাঁদর

** বিপদের কাণ্ডারী বদর কবুতর
** দুবলার চরে নাম সংকীর্তন-ভাবগীতে খণ্ডকালীন জীবন
** বাঘের পায়ের ছাপ সন্ধানে ওয়াকওয়ে ধরে দেড় কিলোমিটার
** মংলা পোর্টে এক রাত

** বিস্মৃতির অতলে বরিশালের উপকথা​
** ‘জোনাকি’ ভরা বুড়িগঙ্গা

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
এটি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ