এই বিকল্প তালিকায় আসতে পারেন সাবেক ছাত্রনেতা সামিউল হক লিটন, হতে পারেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিজান অথবা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রহুল আমিনও।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বা সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে এমন আলাপ-আলোচনাই চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ তথা সদর আসনের বাতাসে।
আরও পড়ুন: ** ‘ভোটে’ ‘বিশ্বাস’ নেই চাঁপাইবাসীর
কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর এবং শহরের উপকণ্ঠ ঘুরে এ আসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে বর্তমান এমপি ওদুদের ‘সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি’র প্রসঙ্গই ঘুরে-ফিরে এলো। বিশেষত নিজেদের বংশগতভাবে ‘মনেপ্রাণে’ আওয়ামী লীগকর্মী দাবিদার কয়েকজন বেশ শঙ্কাই প্রকাশ করলেন এ জেলার সাংগঠনিক অবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
আরও পড়ুন: ** ‘পারিবারিক রাজনীতিতে’ হতাশ তৃণমূল বিএনপি
তারা বলছেন, ২০০৫ সালে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া এমপি ওদুদ এ জেলার রাজনীতিতে এখন একক অধিপতি। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সংসদ সদস্য। রাজনীতি করছেন বিএনপি-জামায়াত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ ও সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়াসহ দলটির অনেক নেতার আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ওদুদের হাত ধরে এখন অনেকে আওয়ামী লীগে ভিড়েছে। সেই নয়া আওয়ামী লীগের লোকদেরই আধিপত্যে কোণঠাসা এখন দলটির নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা। ওদুদের হাত ধরে আওয়ামী লীগে আসা প্রভাবশালী ঠিকাদার এজাবুল হক বুলিসহ তার কয়েকজন আস্থাভাজনের কর্মকাণ্ড মূল আওয়ামী লীগকর্মীদের আরও হতাশায় নিমজ্জিত করে চলেছে। মানে-অভিমানে-ক্ষোভে অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন বলেও শোনা গেল অভিযোগ।
এমনকি বিগত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়া সামিউল হক লিটনের পক্ষে গণজোয়ার তৈরির পরও তার মাত্র এক হাজার ভোটের ব্যবধানে হারের পেছনে সেই নয়া আওয়ামী লীগের উঁচু-নিচু পর্যায়ের ‘বিভীষণ’দের দায়ী করলেন কেউ কেউ।
এই অবস্থায় কেউ কেউ ওদুদের বিকল্প ভাবার পরামর্শ দিচ্ছেন ক্ষমতাসীনদের। তারা বলছেন, প্রশ্নের ঊর্ধ্বে কাউকে মনোনয়ন না দিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের ‘নিবেদিতপ্রাণ’ কর্মীরা আরও হতাশ হয়ে পড়বেন। সেটা সাংগঠনিক ভবিষ্যৎকেই শঙ্কায় ফেলে দেবে।
শহরের হাসপাতাল রোডে বসে কথা হচ্ছিল যুবলীগের একটি ওয়ার্ডের যুগ্ম-সম্পাদক একে এম জামিউল হকের সঙ্গে। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আশরাফুল হক ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
তিনি বলেন, এমপি ওদুদ উন্নয়ন করছেন। কাজ করছেন। এই আসনে নৌকাকে জিততে হলে তিনিই প্রার্থী হিসেবে পারফেক্ট। সব দল-মতের মানুষ তার পক্ষে আছে। তবে সামিউল হক লিটনের পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল সবার কাছেই অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। নির্বাচন এলে নৌকার প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা যাকে প্রার্থী করবেন তার পক্ষেই যুবলীগের নেতাকর্মীরা কাজ করবে। নিশ্চয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো বোঝেন।
তবে সাংগঠনিক পরিস্থিতি যে ভালো নয় সে কথা স্বীকার করলেন খোদ কয়েকজন নেতাই। দলের নির্দেশনা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মিজান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জনসমর্থন নৌকার পক্ষেই আছে। কিন্তু সাংগঠনিক অবস্থা আমাদের ভালো নয়। ২০১৪ সালের নভেম্বরে যে কাউন্সিল হয়েছে, তারপর গঠিত কমিটিগুলোর ব্যাপারে প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের মূল কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। নির্বাচনে নামতে হলে এই অবস্থা থেকে সংগঠনকে মজবুত করতে হবে।
দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে তিনি নিজেও সদর আসনে নির্বাচন করতে চান বলে জানান মিজানুর রহমান। তবে নৌকার প্রার্থী যিনিই হবেন, নেতাকর্মীরা তার পক্ষেই মাঠে নামবেন বলে মনে করেন মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
এইচএ/