এ সংসদীয় আসনের দুই লক্ষাধিক ভোটারের বড় অংশই হচ্ছেন চা শ্রমিকেরা। আর বছর দেড়েক বাকি থাকা একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে এই ভোটারদেরই প্রধান ‘ফ্যাক্টর’ মনে করছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারাও চা বাগানের ভোটারদের ফ্যাক্টর বলে মানছেন। তাদের বক্তব্য, এই ভোট যেদিকে পড়বে, সেদিকেই জয়ের পাল্লা ভারী হবে। এসব ভোটার যে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ভোট ব্যাংক, সেটিও বলছেন তারা। তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের বক্তব্য, এবার যদি দলের প্রার্থী মনোনয়নে পরিবর্তন আসে, তাহলে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত ভোট ব্যাংকে বড় ভাগ বসাবে বিএনপি।
দক্ষিণ-পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্যঘেঁষা বড়লেখা উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নেই রয়েছে আটটি চা বাগান। ইউপি চেয়ারম্যান আহমেদ জুবায়ের লিটন বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু চা শ্রমিকদের প্রথম স্বীকৃতি দেন, তাদের ভোটাধিকার দেন। এ কারণে তারা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কিছু বোঝেন না। চা বাগানের ৯০-৯৫ শতাংশ ভোটই পড়ে নৌকায়। শেখ হাসিনাও তাদের নানাভাবে সাহায্য করছেন। মৌলভীবাজার-১ আসনের নির্বাচনে চা শ্রমিকরা তাই অবশ্যই বড় ফ্যাক্টর।
শাহবাজপুরের কালিকাবাড়ি চা বাগানের সাধুয়া ও নয়নসহ অন্য শ্রমিকেরা বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগে ভোট দেবো। শেখ হাসিনা আমাদের অনেক সাহায্য করেন, রেশন দেন। বিএনপি খোঁজ-খবর নেয় না’।
এ আসনে দু’বার জাতীয় পার্টি ও একবার বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী ঢাকায় থাকেন বেশি। বাড়িতে গেলে তার ভাতিজার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা হাবিবুন নাহার চৌধুরী বলেন, ‘নিজেদের মানুষ বলে বলছি না, এবাদুর রহমানকে এলাকার মানুষ ভালোবাসেন। তবে চা বাগানের ভোট এখানে জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখে। তারা আওয়ামী লীগ ছাড়া কিচ্ছু বোঝেন না। এবাদুর রহমানকেও শ্রমিকরা বলেন, আপনি যদি নৌকা প্রতীক নিয়ে আসেন, তাহলে আপনাকে ভোট দেবো’।
জুড়ীর ব্যবসায়ী রায়হান আহমেদ ও সত্যজিত দাস বলেন, এখানে চা বাগান রয়েছে ১০টির বেশি। উপজেলাও বেশি বড় না। তাই চা বাগানের ভোট যেদিকে পড়বে, ফলও সেদিকে ঘুরবে। তবে আগের মতো একচেটিয়া ভোট নেই। কারণ, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জুড়ীর নেতা নাসির উদ্দিন মিঠুর নিজেরই চা বাগান রয়েছে একাধিক। এলাকার মানুষ হিসেবে অন্য বাগানের ভোটও তার দিকে কিছু যাবে।
বড়লেখা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘চা বাগান আমাদের প্রধান সম্পদ। আর শ্রমিকরা বড় ভোট ব্যাংক। তারা ঘুরলে তো ফল ঘুরবেই’।
কাঁঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা মোস্তাক আজিজ, যুবদল নেতা মুজিবুল হক খোকন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন ও অর্থ সম্পাদক ফয়সল আহমেদের কথাও একই, চা বাগানের শ্রমিকদের কাছে প্রার্থীর চেয়ে প্রতীক ফ্যাক্টর। তবে জুড়ীতে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত ভোটে কিছুটা ভাগ বসাবে বিএনপি।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মিঠু বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার নিজের চা বাগান আছে। উপজেলার অন্য বাগানের শ্রমিকরাও আমাকে চান। আমি নিজে বলবো না। আমি মনোনয়ন পেলে চা বাগানের ৫০ শতাংশ ভোটই পাবো’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
এএ/এএসআর