একটা চা নিয়ে চুমুক দিচ্ছি অল্পস্বল্প। পাশেই এক বয়স্ক গ্রাম্য ব্যক্তি।
উত্তরবঙ্গের অন্যান্য এলাকার মতোই সিংড়ার গ্রামের সাধারণ মানুষগুলোও সরল প্রকৃতির। জানলাম, তার নাম মোসলেম মিয়া, গ্রাম হিজলি। এমপি কেমন, জিজ্ঞেস করতেই বললেন, চ্যাংড়া হলেও এমপি ভালো। এলাকার অনেক রাস্তাঘাট করে দিছে, স্কুল কলেজ হছে, বিদ্যুতের লাইনও দিচ্চে।
সন্ত্রাস টন্ত্রাস আছে না কি? বললেন, না সন্ত্রাসের কোনো্ উৎপাত লাই এলাকায়। হামরা ভালো আছি। ঘণ্টা তিনেক পর। সিংড়া উপজেলা ও তৃণমূলের কয়েকজন রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে, বসে আছি বাসস্ট্যান্ডের একটি চায়ের দোকানে। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি, যাবো নাটোর।
দোকানদার আব্দুল আজিজ। সেখানে কথা হলো বালুভরা, শেরকোলের বিল এলাকার নূর আলীর সাথে। এমপি সম্পর্কে তারও কোনো অভিযোগ নেই। বললেন, এমপি ভালো মানুষ। এলাকার উন্নয়ন করিছেন।
পাশে বসে ছিলেন সাইদুর নামে একজন। বললেন, এমপি খুব কাজ করিচ্ছেন।
পৌর শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরের নিংগইর বাজার। চলনবিলের শুটকির জন্য বিখ্যাত। সেখানে গিয়ে অবশ্য শুটকির দেখা পেলাম না। কথা হলো স্থানীয় শুটকি উৎপাদনকারী ও মাছ ব্যবসায়ী শাজাহান মিয়ার সঙ্গে। শুঁটকির খোঁজে এসেছি শুনে বললেন, শুঁটকি পাবেন কই। এখন তো শুটকির সময় না। আসা লাগবি কাতিক, আঘ্রান মাসত।
তাকেও জিজ্ঞেস করলাম, এমপি কেমন? জানালেন, ভালো। রাস্তা ঘাট করিছেন, স্কুল কলেজ করিছেন। গ্রাম্য যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, দেখলাম রাস্তা পাকা। পিচঢালা।
সিংড়া এলাকায় এক সময় দাপট ছিলো চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের। তাদের দাপটে এলাকার মানুষ ছিলেন দিশাহারা। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই। এলাকার মানুষ শান্তিতে আছে, জানালেন স্থানীয়রা।
বাসস্ট্যান্ড মোড়ের আরেক দোকানে কথা হলো, সিংড়ার শোলাকুড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। কৃষিকাজ করেন। জিজ্ঞেস করলাম, ভয়ভীতি আছে? উত্তর দিলেন, না ভয়ভীতি করবো ক্যা। সন্ত্রাস নাই। শান্তি আছে।
পরদিন দুপুর বেলা। আবার এসেছি সিংড়ায়। মোহাম্মদীয়া হোটেল সংলগ্ন খোকনের চায়ের দোকানে। দোকানে অনেক মানুষের ভিড়। প্রচণ্ড গরমের কারণে সেখানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন কর্মজীবী মানুষ। গরমে আমিও নাস্তানাবুদ। দোকানে ঢুকে টিউবওয়েলের পরপর তিন গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খাওয়ার পর তবে স্বস্তি পেলাম।
এ কথা সে কথায় আলাপ জমে উঠলো। দেখলাম সিংড়ার লোকজন নাটোর সদরের লোকের মত নয়। নির্ভয়ে এবং নিঃশঙ্ক চিত্তেই নিজের রাজনৈতিক মতামত দিচ্ছেন।
জিজ্ঞেস করলাম, মন্ত্রী কি আবার নমিনেশন পাবে? জবাব দিলেন শাহাদাত নামের একজন। বললেন, আওয়ামী লীগে পলক ঠেকাবি কেটা। আর পলক রাস্তায় দুই চার দশটা মানুষ দেখলেই গাড়ি থামায়, কথা কয়, সালাম দেয়। সুখ-দু:খের কথা শোনে।
নাটোর থেকে বাসে সিংড়া যাওয়ার সময় পাশের সিটে বসেছিলেন স্থানীয় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা। তিনিও জানালেন পলকের কথা। বললেন, এলাকার মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছেন পলক। প্রতি সপ্তাহেই নিয়ম করে তিনি এলাকায় আসেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।
জনমানুষের এই মতের প্রতিফলন দেখা গেল স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের মুখেও।
জাহিদুল ইসলাম ভোলা। স্থানীয় রাজনীতিতে এক সময় প্রতিমন্ত্রী পলকের বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বর্তমানে ইউপি চেয়ারম্যান। তবে দুই দুই বার মন্ত্রীর মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করেন সিংড়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা। আওয়ামী লীগের রাজনীতির ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনিও অন্যতম।
তিনিও জানালেন, আওয়ামী লীগে এক সময় মতবিরোধ থাকলেও এখন কোনো কোন্দল নেই। মন্ত্রীর সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো। নির্বাচনে পলকই আবার নৌকা মার্কার প্রার্থী হবেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম। সিংড়া কলেজের সাবেক নির্বাচিত ভিপি। এলাকার ত্যাগী ও জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। পলকের বিরুদ্ধে সিংড়া থেকে মনোনয়ন চাওয়ার মত যোগ্যতা রাখেন তিনিও।
শফিকুল ইসলামও জানালেন, প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। তিনি মনোনয়ন পেলে তারা তার সঙ্গে কাজ করবেন। কোনো অসুবিধা হবে না।
সিংড়ায় একটা বিষয় বোঝা গেল। স্থানীয় আওয়ামী লীগে পলকের তেমন কোনো বিকল্প নেই। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যেই চাপা অসন্তোষ কিংবা মতভিন্নতা থাকলেও, সিংড়ায় আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের লড়াইয়ে জুনাইদ আহমেদ পলককে তাই খুব একটা চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হবে না, মাঠের চিত্র বলছে এটাই।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
জেডএম/
সহিংস রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চায় না বনলতা সেনের নাটোর
নাটোরে লিচুর রাজা চায়না থ্রি, কম যায় না মোজাফফরও
আহ বৃষ্টি!, কি যে স্বস্তি!
নাটোর সদরে নৌকা পেতে টক্কর সেয়ানে সেয়ানেনাটোর সদরে নৌকা ডুবতে পারে গ্রুপিং-কোন্দলে!
পরিবারতন্ত্রেই অটল নাটোর বিএনপির ‘একনায়ক’ দুলু