নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বারবার প্রতিবাদের মুখেও পড়েছেন তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং সাধারণ মানুষের ব্যানারে সৈয়দপুরে ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সারাদেশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনের মধ্যে শওকত চৌধুরীও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির আসন সমঝোতা হিসেবে এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
সৈয়দপুর এবং কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানে উন্নয়নের ছোঁয়াও তেমন একটা পৌঁছায়নি। এলাকার উন্নয়নের দিকে এমপির নজর নেই বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হলো, স্কুল কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য। কলেজ শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন নৈশ প্রহরী নিয়োগেও এমপি আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে এলাকার মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সৈয়দপুর মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। এই কলেজের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগেও তার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কামার পুকুর ডিগ্রি কলেজে কয়েকটি বিভাগে শিক্ষক পদে নিয়োগে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে শওকত চৌধুরীর বিরুদ্ধে। সৈয়দপুর বাঙালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক নিয়োগেও অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
সৈয়দপুরের অর্ধশতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে প্রায় দুইশজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে। এমনকি এসব সকরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরীর চাকরির জন্য তিনি জনপ্রতি সাত লাখ টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ। কিশোরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগেও লাখ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ নিয়োগ বাণিজ্যের অর্থ শওকত চৌধুরীর আত্মীয় খাতা মধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী এবং শ্যালক রেজাউল ইসলাম ফিলিপের মাধ্যমে লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
এসব ঘটনার প্রতিবাদে সৈয়দপুরে মাস তিনেক আগে এলাকার সাধারণ মানুষ ঝাড়ু মিছিল করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্য দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে অনেক দিন আগে থেকেই এমপি শওকত চৌধুরীর বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ সমস্ত ঘটনার প্রতিবাদে মাসখানেক আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সৈয়দপুর শহরে এমপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছে।
এদিকে শওকত চৌধুরী সাড়ে তিন বছর এমপি থাকা সময়ে এলাকার উন্নয়নে কোন নজর দেননি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো না। টিআর কাবিখা প্রকল্পেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসব প্রকল্পে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ বেশি হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও এলাকার উন্নয়ন কাজ হয়নি। প্রকল্পের বরাদ্দ ফেরত যাওয়ারও কথা শোনা গেছে।
সৈয়দপুরে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট করা হয়েছে। এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও নার্স নেই। ডাক্তার ও নার্সের সংকট দূর করতে এমপির কোনো উদ্যোগ নেই বলে জানান এলাকাবাসী।
টেংগামারি থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের দূরাবস্থা দীর্ঘদিন ধরে। এলাকার জন্য সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও দীর্ঘদিন ধরে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে। চলাচলের অযোগ্য এই সড়ক দিয়েই যাতায়াত করছেন কিশোরগঞ্জের মানুষ। সৈয়দপুরের রাস্তাগুলোর অবস্থাও ভালো না। এসব রাস্তাঘাটের উন্নয়নে এমপির কোনো নজর নেই।
সৈয়দপুরের রাস্তাঘাটের দূরাবস্থার কথা জানিয়ে রিকশাচালক মো. সোহরাব বাংলানিউজকে বলেন, কে কাজ, কে রাস্তা ভালো করবে? এমপি হওয়ার পর শওকত চৌধুরীর খবর নাই। তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনি এলাকার জন্য কী করেছেন? জবাব দিতে পারবেন না শওকত চৌধুরী।
সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল এলাকার মুদি দোকানদার লাল মিয়া বলেন, টাকা ওয়ালা মানুষের আরও টাকা হচ্ছে। এলাকার উন্নয়ন তো তার দরকার নাই।
কিশোরগঞ্জ বাজারে এক চায়ের দোকানে কথা হয় মতিউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এমপির বিরুদ্ধে ঘুষের কথা শুনি। কোনো উন্নয়ন তো দেখি না। এই যে দেখেন না রাস্তা (টেংগরমারি-কিশোরগঞ্জ) কোনো কাজ হয়নি। চলাচলের অযোগ্য।
এ রাস্তায় টেংগরমারি থেকে ইজিবাইকে কিশোরগঞ্জ আসার সময় ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকের একজন যাত্রী গৃহিণী রাহেলা বেগম রাস্তার দূরাবস্তা দেখিয়ে বলেন, কয়েক বছর ধরেই রাস্তার এই খারাপ অবস্থা। এভাবেই কষ্ট করে আমরা চলাচল করি।
এলাকায় জাতীয় পার্টির অবস্থাও ভালো না। এমপি শওকত চৌধুরী জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক। পার্টির দিকেও তিনি ঠিকমতো নজর দেন না বলে জানা গেছে। ঢাকার বংশালে বেসিক ব্যাংকের শাখা থেকে তিনি যে ঋণ নিয়েছেন সেই ঋণ সংক্রান্ত বিষয়ে এলাকায় নেতিবাচক সমালোচনা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকার মানুষ মনে করেন আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এই প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৭
এসকে/এমজেএফ