ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

ঠাকুরগাঁও-২: ইমেজ সংকটে দবির, দৌড়ে প্রবীর কুমার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
ঠাকুরগাঁও-২: ইমেজ সংকটে দবির, দৌড়ে প্রবীর কুমার ঠাকুরগাঁও-২ আসনের আদিবাসীরা। ছবি: মানসুার চামেলী

ঢাকা: বালিয়াডাঙ্গী, হরিপুর ও রানীশংকৈল উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে ঠাকুরগাঁও-২ আসন। এই আসনে ছয় ছয় বার নির্বাচিত এমপি দবিরুল ইসলাম। বর্তমানে সংখ্যালঘুদের জমি দখল, নির্যাতন ও পরিবারিক দাপটের কারণে অনেকটাই ইমেজ সংকটে ভুগছেন তিনি।

নির্বাচনী মাঠে দবিরুল ইসলামের এমন অবস্থানে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার রায়ের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে মনোনয়ন পেতে জোরালো জনসংযোগ চালাচ্ছেন ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ টুলুও।

এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দবিরুলের ভাই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলীও রয়েছেন।
 
দবিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকার এমপি। একই সঙ্গে তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। ঠাকুরগাঁও-২ আসনের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদে পরিবারের সদস্যদের বসানোর কারণে অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন দবিরুল ইসলাম- দাবি আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতার। বালিয়াডাঙ্গী ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের বড় পদগুলো তার পরিবারের সদস্যদের হাতে। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তার ভাই-ভাতিজা। ছেলে সুজন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। যদিও এগুলোকে জনগণের ভালোবাসা মনে করেন দবিরুল।
 
তার দাবি, তিনি মরে গেলে নেত্রী (শেখ হাসিনা) তার ঔরসজাতকে মনোনয়ন দেবেন, অন্য কাউকে নয়। তবে ঠাকুরগাঁও-২ আসনের জনগণের সঙ্গে কথা বলে দবিরুলে পরিবারতন্ত্রের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি চাওয়ার আভাস পাওয়া গেল। অনেকেই সামনের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নতুন নেতৃত্ব চান।
 
বালিয়াডাঙ্গী শাহাজাদ সু’র মালিক শাহজাদ হোসেন বলেন, সবাই আওয়ামী লীগে পরিবর্তন চান। তবে ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারেন না। এবার আওয়ামী লীগ থেকে সেক্রেটারি প্রবীর কুমার মনোনয়ন পেতে পারেন। তিনি ভালো লোক। হিন্দু-মুসলমান অনেকেই তাকে চায়। অন্যদিকে টুলু ভালো দৌড়াদৌড়ি করছেন।
 
দবিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন এ আসনে এমপি। তবে তার আর্থিক উত্থান ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর। ঠাকুরগাঁও-২ আসনে তার নির্বাচনী এলাকা বালিয়াডাঙ্গীতে রয়েছে তার বিশাল টি এস্টেট। পাড়িয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রামনগর টি এস্টেট একশ’ একরেরও বেশি জমিতে বিস্তৃত। যার বেশির ভাগ সংখ্যালঘুদের বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। দবিরুল ইসলাম এসব জমি অল্প টাকায় তাদের কাছ থেকে কিনেছেন, বা জোর করে দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঠাকুরগাঁও-২
 
পাড়িয়া ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামের সংখ্যালঘু নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শ্রী নিশাবো রাম সিংহ বাংলানিউজকে বলেন, সংখ্যালঘুরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। তারা মনে করে, অন্য দলে ওরা কোনো দিনও ভোট দেবে না, তাই নির্বাচনের আগে ভালো কথা বললেও নির্বাচনের পর অত্যাচার নির্যাতন করে। দবিরুল ইসলামও আমার সাথে এমন করেছেন। আমি তার কাছে গিয়ে কান্না করেছি। তিনি বলেছেন, কোথাও কোনো জমি দখল হচ্ছে না।
 
কিন্তু নির্যাতিত হওয়ার কারণে সংখ্যালঘুরা অনেকটাই অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রবীর কুমারের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। দবিরুল ইসলামের পরিবর্তে তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রবীর কুমারকে চান।
 
বাংলানিউজকে প্রবীর কুমার বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পেছনে কাজ করবো। তবে এলাকার প্রকৃত চিত্র যদি জানতে পারেন, তাহলে আমাকে নেত্রী মনোনয়ন দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।
 
তিনি বলেন, দবিরুল ইসলামের বয়স হয়েছে। চা বাগানকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছেন। তাই উনি আবার দাঁড়ালে ভোটে প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে নৌকা আর উনি পূর্বের অবস্থানে নেই। এ আসনের প্রতিটি কমিটি তিনি কুক্ষিগত করে রেখেছেন। পুরো জিম্মি আমরা। আর মানুষ এই পরিবারের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি চাচ্ছে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, দবিরুল ইসলামে মানুষ বিরক্ত। তার বয়স হয়েছে বলে ছেলেকে এবার মনোনয়নের জন্য খাড়া করবেন। সব জায়গায় ছেলের আধিপত্য, মানুষ ভয়ে কথা বলে না। সে হিসেবে প্রবীর কুমার ভালো লোক, ভোটও পাবেন। এছাড়া হরিপুরে মোস্তাক আলম টুলুও বেশ তোড়জোড় চালাচ্ছেন। প্রায়ই তার লোকজন শোডাউন দিচ্ছে।
 
তবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকে মিডিয়া ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের সাজানো বলে দাবি করেন দবিরুল ইসলামের ছেলে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু নিয়ে যে সমস্যা ছিলো তা সমাধান হয়ে গেছে। এগুলো মিডিয়া ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেনের সাজানো নাটক।
 
দবিরুলের ভাই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার ভাই যদি এবার নির্বাচনে না দাঁড়ান- এ আসনে আমিই যোগ্য প্রার্থী। এছাড়া যারা আছেন তারা ভোট পাবেন না। সংখ্যালঘু নিয়ে দবিরুল ইসলামের নামে যে রটনা তা প্রতিপক্ষ ঘটিয়েছে। আমাদের পরিবারের পেছনে অনেক শত্রু।
 
এদিকে মোস্তাক হোসেন টুলুকে রাজাকারের বাচ্চা ও প্রবীর কুমারকে আমেরিকা প্রবাসী বলে মন্তব্য করেন দবিরুল ইসলাম। তার বাইরে আওয়ামী লীগ কাউকে মনোনয়ন দেবেন না বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৭
এমসি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।