লালমনিরহাট সদর আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যক্তি হিসেবে আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলালের বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ নাই। কিন্তু এমপি হিসেবে তার জনসম্পৃক্ততার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে তিনি প্রথমবারের মত এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে এ আসনে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হবে আওয়ামী লীগকে। এখানে তিনি আবারও প্রার্থী হলে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এমপি হওয়ার পর আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল দল গোছানো বা সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কোনো কাজই করেননি। দলের গতানুগতিক দুই একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছাড়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তিনি কখনোই সক্রিয় নন।
এদিকে এমপি হিসেবে এলাকার জনগণের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি নিজেও জনগণের মাঝে যান না, দেখা সাক্ষাৎ করেন না। এলাকায় অবস্থান না করার কারণে কেউ কোনো সমস্যায় সহযোগিতার জন্য তার কাছে যেতে পারেন না।
এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগেও রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। সক্রিয় আছে তিনটি গ্রুপ। এমপি দুলালের সঙ্গে রয়েছে একটি গ্রুপ। আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অপর একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হক। তিনি জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে অবশ্য প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। তবে দলের এই গ্রুপিং দ্বন্দ্বের জন্য এমপি দায়ী বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ।
তার কিছু নিজস্ব লোকজনের কারণে দলের অন্য নেতাকর্মীরা তার কাছে যেতে পারেন না। এমপির অনুপস্থিতিতে তার এই নিজস্ব লোকজনই সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। এ সুযোগে এমপির নাম ভাঙিয়ে তারা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন বলে অভিযোগ আছে।
চাকরির জন্য সুপারিশ বা কোন সমস্যা নিয়ে কেউ এমপির কাছে যেতে চাইলে যেতে পারেন না। প্রথমত, এমপিকে এলাকায় পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়ত, এমপির নিজস্ব লোকজন যারা আছে তারাই এ বিষয়গুলো দেখাশুনা করেন। টাকা ছাড়া তারা কারও কোন কাজ করে দেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে এমপি দুলালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই বলে জানা গেছে। ব্যক্তিগতভাবে একজন সৎ মানুষ বলেই তার পরিচিতি আছে। তার কাছের কিছু লোকজন তার নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণসহ নানা অনিয়ম করছে।
এ বিষয়ে শ্রমিক লীগের স্থানীয় এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এমপির আর্থিক দুর্নীতি নেই। তার কাছের কিছু লোকজন এমপিকে ভাঙিয়ে চলে। টেন্ডার, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে। এতে এমপিরই দুর্নাম হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদরের ভোটার শফিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উনি তো এলাকায় থাকেন না, আসেনও না। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকলে কখনো কখনো আসেন। দলের লোকজন ছাড়া সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই।
একই রকম কথা বলেন, লালমনিরহাট বাজারের একজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এমপি এখানে থাকেন না। মানুষ তার কাছে কোনো সহযোগিতার জন্য যেতে পারেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
জেডএম