নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার এই অঞ্চল ১৫৩টি বিনাভোটের আসনগুলোর একটি। এখানকার অর্থাৎ রংপুর-৫ থেকে এইচএন আশিকুর রহমান চারবারের সংসদ সদস্য।
স্থানীয় রাজনীতির বিচারে দ্বিতীয় বড় দল জাতীয় পার্টির (জাপা) একমাত্র প্রার্থী হতে পারেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলার আহ্বায়ক, শিল্পপতি এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর (৬০)। উপজেলা জামায়াতের আমির, বরখাস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম রব্বানীও স্বতন্ত্র দাঁড়াতে পারেন। তবে বলাই যায়, মূল লড়াইটা এখানে আশিকুর রহমান-জাহাঙ্গীরের মধ্যে।
আর তো কয়েক মাস পরেই ভোট (১৫/১৬ মাস); কী ভাবছেন কী হতে যাচ্ছে? রেজিস্ট্রি অফিস রোডের তরুণ বয়সী ইলেকট্রিশিয়ান প্রশ্ন শুনে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন, ভোট কি আদৌ হবে? হলেও কি তা সুষ্ঠু হবে? আগে আমাকে এ কথাগুলোর নিশ্চয়তা দিন, তারপর আমি বলবো।
এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন, ২০১৪ সালে আমি নতুন ভোটার। কিন্তু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হওয়ায় ভোট দিতে পারিনি। এমন ইলেকশনের কী প্রয়োজন, যা সিলেকশন!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এ আসনে প্রবীণ ও গোঁড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া অনেক মানুষই পরিবর্তন চায়। বিশেষ করে তরুণরা। ফলে একটা সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার।
তার কথায় সায় দিলেন আরেক ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ছিলেন আরব আমিরাতে। এলাকায় ফিরে এসে সুখে থাকবেন ভাবলেও ৫১ টাকা কেজি দরে চাল কিনে খেতে হয় বলে অভিযোগ করেন। বলেন, বিনাভোটের এমপি তো, তাই দরদ কম!
বেকার সমস্যা, চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা, ১০ টাকার চাল কিনতে ডিলারকে ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া, স্থানীয় ঐতিহ্যবাসী দুই কলেজ (মিঠাপুকুর মহাবিদ্যালয় ও শঠিবাড়ি কলেজ) জাতীয়করণ না করে অন্য একটিকে করা, কলকারখানা এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি করতে না পারার মতো ব্যর্থতার গ্লানি টানতে হচ্ছে তার মতো খেটে খাওয়া মানুষদের।
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এইচএম এরশাদ বৃহত্তর রংপুর নিয়ে আগামী নির্বাচনে কোনো আপোস করবেন না। তিনি চান ১৯ আসনের কম করে হলেও ১৫টিতে জয়। ফলে এবার অন্তত দলে মনোনয়ন বাণিজ্য হবে না, আশা করি তার কথা থাকবে অটল।
রংপুর-৫-এ আওয়ামী লীগের এমপি চারবার জয়যুক্ত হলেও এখনও ঘাঁটি জাতীয় পার্টির (জাপা)। এমনই মতামত অনেক সাধারণ মানুষের। অনেকে বলছেন, এই দলটাই পারে উন্নয়ন করতে। রংপুরের হারানো ঐতিহ্য জাপা ফিরিয়ে আনতে পারলেই সুন্দর ভবিষত আসন্ন। তবে রাজনৈতিক নীতির প্রশ্নে অটল না থাকতে পারায় দলটা বার বার হোঁচট খায়।
তবে জাপার ভঙ্গুর দশার কথাও চির সত্য। যা স্বীকার করলেন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আলহাজ বাবর আলীও (৭২)। বলেন, পার্টির কোনো নার্সিং নেই। বিশেষ দিনগুলোর কর্মসূচিতে সীমাবন্ধ।
তবে তার কাছে আশার কথা হলো, অন্তত স্থানীয় বিএনপির মতো নামকাওয়াস্তে না, জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব দুটাই খানিক আছে জাপার। একাদশ নির্বাচনে প্রার্থী এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর।
বাবর আলী জোর দিয়ে বলেন, আমাদের দল থেকে প্রার্থী এখানে একজনই দাঁড়াবেন। এরশাদ সাহেব শক্ত আছেন; এর কোনো বিকল্প হবে না। আমি নিজেও জাহাঙ্গীর সাহেবের পক্ষে কাজ করবো। ফলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয়টা আমরাই পাবো।
২০১৪ সালের মতো ভোট ২০১৮-১৯ সালে হবে না বলেও মত দেন তিনি। বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও জানেন বিগত নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আর লাখো তরুণ ভোটার আগামীতে প্রথম ভোট দেবে, তারা তাদের সে অধিকারটুকু না পেলে জনরোশ নেমে আসবে। সুতরাং ভোট হবে; সুষ্ঠু ভোট।
এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় নির্বাচন করবো। না দিলে করবো না; তখন যাকে দেবে তার পক্ষেই কাজ করবো। মিঠাপুকুরের অনেক সম্ভাবনা; যা আমি তুলে ধরতে চাই।
এমনকি হাড়িভাঙা আমে এই উপজেলাকে ব্র্যান্ডিং করতে চাই। যতটুকু উন্নয়ন বর্তমান সংসদ সদস্য করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা হয়নি, কর্মসংস্থান-যোগাযোগ উন্নয়ন থেকে শুরু করে সার্বিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে চাই।
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!
বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর!
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৭
আইএ/এমআইএইচ/এমজেএফ