তবে শীর্ষ নেতাদের বাসা, ব্যক্তিগত অফিস ও চেম্বারে যথারীতি নেতা-কর্মীদের জোয়ার বইছে। মহানগর ও জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহীতে অবস্থানরত কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা এখন নেতা-কর্মীদের আনা-গোনায় ভরপুর।
শহরের মালোপাড়া ভুবনমোহন পার্কের পাশে কাবিল ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত রাজশাহী মহানগর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মীরা খুব একটা আসেন না বলে জানান স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় শহরের সাহেব বাজার মোড়ে ওয়ার্কার্স পার্টি ও কুমারপাড়ায় অবস্থিত আওয়ামী লীগের ‘জমজমাট’ কার্যালয় পরিদর্শন শেষে বিএনপি অফিসের দিকে রওনা দিতেই মাঝপথে দেখা মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক তিন বারের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে কোথায় যেন যাচ্ছিলেন!
কার্যালয়ে যাওয়ার সামান্য অনুরোধেই বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা দলের এক কর্মীকে ফোন দিয়ে অফিসের দরজা খুলতে বললেন। ভেতরে ঢুকেই বোঝা গেল এখানে লোকজনের আনা-গোনা খুব একটা হয় না।
দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের বিভাগীয় এ কার্যালয়টি বিএনপির ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে খুব একটা যায় না। দু’কক্ষ বিশিষ্ট এ কার্যালয়ের দরজা-জানালা বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকায় ভেতরে গুমোট গন্ধ।
চেয়ার-টেবিল আসবাবপত্র তেমন একটা নেই। বর্তমান কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি অফিসে খুব একটা না আসায় ঝাড়-মোছা খুব একটা হয় না।
আওয়ামী লীগের অফিসে যেখানে বেশ কয়েকটা এসি, সিসি ক্যামেরা, দামি আসবাবপত্রে সজ্জিত, সেখানে বিএনপির অফিসে একটা সাইনবোর্ড পযর্ন্ত নেই! স্থানীয়রা জানান, সাইনবোর্ড ছিলো, পুলিশে ভেঙে ফেলেছে।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, শহরের চণ্ডীপুরে ছিলো বিএনপির সুসজ্জিত অফিস। ঢাকার কেন্দ্রীয় অফিসের পরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, বরিশালের চেয়ে রাজশাহী মহানগর অফিস-ই ছিলো সব চেয়ে জাকজমকপূর্ণ। কিন্তু অফিসের জায়গা-জমি ও ভাড়া সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওয়ান ইলেভেনের সময় সেটি হাতছাড়া হয় বিএনপির।
১৯৯২ সাল থেকে ২০০৮ পযর্ন্ত চণ্ডীপুরের ওই অফিসই ছিল রাজশাহী বিএনপির স্থায়ী ঠিকানা। সেটি হারিয়ে বিএনপি এখন মালোপাড়ার কাবিল ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় ঠিকানা গেড়েছে। কিন্তু নানা কারণে সেখানে নেতা-কর্মীর আনাগোনা খুব কম।
মিজানুর রহমান মিনু বাংলানিউজকে বলেন, এখন আমি আছি বলে এই ছেলেগুলো এখানে আসতে পেরেছে। নইলে পুলিশ ওদেরকে গেট থেকেই তাড়িয়ে দিত। এদিকে ওদেরকে ভিড়তেই দেয় না।
তবে মহানগর কাযালয়ে না এলেও শীর্ষ নেতাদের বাসা, ব্যক্তিগত অফিস ও চেম্বারে নেতা-কর্মীদের ভিড় নিত্যদিনের। শহর থেকে দূরে বিসিক শিল্প নগরীতে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শফিকুল হক মিলনের চেম্বারে গিয়ে তার নির্বাচনী এলাকা পবা ও মোহনপুরের নেতা-কর্মীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় কার্যালয়ে জড়ো হওয়ার সুযোগ না থাকায় রাজশাহী-৩ আসনের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা মিলনের এই ব্যক্তিগত অফিসেই জড়ো হন।
দুপুরের পর থেকেই মিলনের চেম্বারে নেতা-কর্মীরা ভিড় জমাতে থাকেন। তাদের সঙ্গে দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা এখানেই সেরে নেন মহানগর বিএনপির সাধরণ সম্পাদক।
মিলনের মতো রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মতিউর রহমান মন্টু, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাদিম মোস্তফা এবং মিজানুর রহমান মিনুর বাসা, ব্যক্তিগত অফিস ও চেম্বারে নেতা-কর্মীদের নিত্য আসা-যাওয়া।
এডভোকেট শফিকুল হক মিলন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বড় অফিস ছিল। সেখানে সারাদিন নেতা-কর্মীর ভিড় লেগে থাকত। কিন্তু সেটি হাতছাড়া হওয়ার পর আমরা কাবিল ম্যানশনের ওই অফিস ব্যবহার করছি। অচিরেই আরেকটি ভাল অফিস আমরা নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু খরচের বিষয়টি আমাদের মাথায় রেখে এগোতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
এজেড/আরআই