সামনের ফুটপাতে গিজগিজ করছে নানান পণ্যের পসরা। গাছের চারা বিক্রেতাকেও দেখা গেলো।
ভবনের পেছনে অবস্থিত দোতলায় যাওয়ার সিঁড়ি। একটি গলি ভবনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে সিঁড়ির গোড়ায়। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতেই চোখে পড়ে জনাপঞ্চাশেক কর্মী ও কয়েকজন নেতাকে। একজন দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, অন্যরা গভীর মনোযোগ দিয়ে তা শুনছেন।
দু’জন আগন্তুক সেখানে উপস্থিত হলেও কারও মধ্যে তেমন কোনো ভাবান্তর হলো না। বক্তব্য চালিয়ে যেতেই থাকলেন বক্তা। মিটিং চলছে, এমন সময়ে সেখানে প্রবেশ করা উচিত হবে কিনা-- এই ধন্দের মধ্যে সিঁড়িতেই মিনিটখানেক পেরিয়ে যায়। শ্রোতাদের মধ্যে একদম পেছনে সিঁড়ির গোড়ায় বসে থাকা একজন কয়েক ধাপ নেমে এলেন।
ছোট্ট করে জানতে চাইলেন আগমনের হেতু। বললেন পবা থানায় একটি সমাবেশ হবে, তার জন্য শ্রমিক ফেডারেশনের প্রস্তুতি সভা চলছে। আপনি চাইলে বসতে পারেন। তার নাম আব্দুল কাদের, নিজেকে শ্রমিক ফেডারেশন পবা থানার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলে পরিচয় দিলেন।
ঘণ্টা তিনেক পর রাত ৯টায় যখন ফের কুঞ্জ ভবনের সামনে পৌঁছাই, তখন অনেক নেতাকর্মী চোখে পড়লো। দোতলায় গেলে এবার চোখে পড়ে বেশ কয়েকজন কর্মীকে। সিঁড়ির গোড়ায় রুমটিতে যেখানে সভা চলছিল, সেখানে আটজন একটি টেবিল ঘিরে বসে আছেন।
অনেকগুলো প্লাস্টিকের চেয়ার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আবার দু’জনকে দেখা গেলো যারা একটু দূরে বসে আলাপে মগ্ন। এর পাশেই আরেকটি রুম রয়েছে, যেখানে সভার রুমটি মাড়িয়ে যেতে হয়। সেই রুমটি অনেকটা পরিপাটি করে সাজানো।
সেখানে একটি আলিশান চেয়ার, সেক্রেটারি টেবিল ও বেশ কয়েকটি গদির চেয়ার। সামনের গদির চেয়ারে বসে আরেকজন নেতার সঙ্গে শলা-পরামর্শ করছেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিপু। পরিচয় পেয়ে বেশ আন্তরিকতার সঙ্গে বসার অনুরোধ করলেন।
বললেন, ‘সারাদেশের কথা বলবো না। রাজশাহীর সাংগঠনিক অবস্থা অনেক শক্তিশালী। মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো শতভাগ আপডেট রয়েছে। জেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি ৮০ ভাগ এবং থানা কমিটি শতভাগ আপডেট রয়েছে। এখানে যে কোনো সময়ে একটি বড় মিছিল বের করা যায়। ’
সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের আনাগোনা থাকে কমবেশি, অনেক বিভাগীয় শহরে যা অনুপস্থিত। সেজন্য সহজেই কেন্দ্রের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির অফিস অনেকটাই জমজমাট। কেন্দ্রীয় অফিসও এতো জমজমাট থাকে কিনা সে প্রশ্ন কেউ করতে পারেন এখানে এলে।
পলিট ব্যুরোর সাধারণ সম্পদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে ঘিরে আবর্তিত এ অঞ্চলের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনীতি। তিনিও রাজশাহীতে থাকলে নিয়মিত অফিসে হাজির হন। যদিও তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই, কখনও সকালে এসে বিকেলে যান, আবার কখনও বিকেলে এসে অনেক রাতে বাসায় ফেরেন। নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেন। মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিপুকে প্রশ্ন করা হয়, ‘ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলে অনেকেই নানারকম অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের জনপ্রিয়তায় ভাটার টান দেখা যায়। ফজলে হোসেন বাদশা এমপির ক্ষেত্রে কী হয়েছে?’
লিপুর উত্তর, ‘তার জনপ্রিয়তা হ্রাস হয়েছে এমনটা মনে করি না। কাউকে অনৈতিক সুবিধা দেননি। সাধারণ মানুষকে দেখেছেন, সে কারণে সাধারণ মানুষও তাকে সেভাবেই দেখে। তবে প্রথম দিকে কিছু হাইব্রিড কর্মী ভিড় করেছিলো। পরে যখন দেখেছে কোনো লাভ হচ্ছে না, তারা কেটে পড়েছে। পার্টির প্রকৃত সমর্থকরা ঠিকই পার্টির সঙ্গে রয়েছে। ’
তিনি বলেন, ‘এ কথা স্বীকার করতেই হবে, এককভাবে নির্বাচন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির জয়ী হওয়া কঠিন। তবে জোটগতভাবে ভোট হলে তাকে কেউ হারাতে পারবে না। ’
রাজশাহী সদরে সত্তরের পরে কখনোই আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারেনি। এমনকি বাহাত্তরের নির্বাচনে এখানে পরাজিত হন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সিপাহসালার এএইচএম কামরুজ্জামান। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী বাদশা ২০০৮ সালের মহজোটের প্রার্থী হয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক ডুবিয়ে দেন।
লিপু বলছিলেন, সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ফজলে হোসেন বাদশা জীবনের শুরু থেকেই বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বেশ দাপটের সঙ্গে। ওয়ার্কার্স পার্টিতে আছেন জন্মলগ্ন থেকেই, কখনই আদর্শচ্যুত হননি। অনেকে সংসদ সদস্য হয়ে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু টানা সাড়ে আট বছর এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের কোনো অভিযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
এসআই/এইচএ/