‘কিন্তু আওয়ামী লীগে বহু ক্যাচাল। বাঘা-চারঘাটে অনেক গ্রুপ।
রাজশাহীর চারঘাট থেকে অটোরিকশায় বানেশ্বর ট্রাফিক মোড়ে আসার সময় কথাগুলো বলছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মী আবুল হাসনাত।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে বড় দুই দলে প্রার্থী ঠিক হয়েই আছে বলে জানিয়েছেন সূত্রগুলো। সবকিছু ঠিক থাকলে এবারও বর্তমান সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আওয়ামী লীগের এবং চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, জনপ্রিয়তা ও ভোট ব্যাংকের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদ। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী শাহরিয়ার আলম।
তাদের মতে, দীর্ঘ ১১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি শেষ ৬ বছরে প্রচুর মার খেয়েছে। হামলা, মামলা, গ্রেফতার, হয়রানিসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। ফলে এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির দিকে তাকিয়ে দলে অন্তর্বিভেদ তৈরি করতে চান না তারা।
বাইরে এলোমেলো অবস্থায় থাকলেও বাঘা-চারঘাট বিএনপি ভেতরে ভেতরে ঠিকই ঐক্যবদ্ধ। এরই ফলশ্রুতিতে রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে অন্তত ৫টিতে একক প্রার্থী ঠিক হয়ে আছে দলটির। বাঘা-চারঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসনে বিভেদ নেই বললেই চলে।
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও বলছেন, এ আসনে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট কবির হোসেন ও বাঘা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মানিক খান দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। তবে এ দু’জনকে মনোনয়ন না দিলে খুব একটা ঝামেলা হবে না দলের ভেতরে-বাইরে।
বাঘা বাজারে চায়ের দোকানে বসে বিএনপির কর্মী আফাজ উদ্দিন দাবি করেন, ‘এ আসনে বিএনপির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- এখানে কোনো গ্রুপিং নেই। নিপীড়ন-নির্যাতনের ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা বুঝতে পেরেছেন যে, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে না পারলে দলটির কপালে আরো দুর্গতি আছে। তাই তারা ভেতরে ভেতরে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন’।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘একেবারে যে গোলমাল নেই, তা নয়। তবে প্রার্থীর নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ওই ঝামেলা আর থাকবে না। হাতেগোণা দু’একজন ঝামেলা করতে চাইলেও পারবেন না’।
** উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে ‘চাঁদ’ টপকাবেন শাহরিয়ার!
অন্যদিকে অন্তর্দ্বন্দ্বে বেহাল আওয়ামী লীগের ঘর। বর্তমান সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম ছাড়াও মনোনয়ন চাইছেন সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক রায়হান, বাঘা পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আক্কাস আলী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, তিনজনের সঙ্গেই দ্বন্দ্ব রয়েছে এলাকার উন্নয়নের রূপকার খ্যাত শাহরিয়ার আলমের, কাছের নেতাদেরকেও ধরে রাখতে পারেননি তিনি।
তাদের দাবি, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রায়হান বেঁকে বসলে চারঘাটের নৌকার রিজার্ভ ভোট শাহরিয়ারের বাক্সে নাও যেতে পারে।
চারঘাট থানা রোডের বাসায় রায়হানুল হক রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম মনোনয়ন পেলে চারঘাটের ভোট নৌকার পক্ষে নেওয়াটা কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং, দল প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল করলে আগামী নির্বাচনে এ আসন আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে’।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সব ভোট নিজের পক্ষে নিতে হলে মেয়র আক্কাস আলীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে হবে শাহরিয়ারকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে রকম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
লায়েব উদ্দিন লাভলুর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও তার সঙ্গে সম্পর্ক একটা ভালো নয় শাহরিয়ার আলমের। তিনি অনুসারীদের নিয়ে আলাদা বলয় গড়ে তুললে বর্তমান এমপির জন্য তা সুখকর হবে না।
এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করেই হয়তো আওয়ামী লীগের কর্মী আবুল হাসনাতের সরল মন্তব্য, ‘মার-ধর খেয়ে সোজা হয়ে গেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগে বহু ক্যাচাল’।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এজেড/এএসআর