লিটন হত্যার পর এ আসনে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের গোলাম মোস্তফা আহমেদ। উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন লিটনের সহধর্মিণী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি।
আগামী সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে লিটনের বামনডাঙার বাসভবনে কথা হয় তার সহধর্মিণী খুরশীদ জাহান স্মৃতির সঙ্গে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক।
স্মৃতি বলেন, দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে আছি। এই সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগই তো ছিলো না। স্বাধীনতার পরে লিটনই প্রথম আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। সেটা অনেক সংগ্রাম করে, চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে। কিন্তু দানবেরা তাকে বাঁচতেই দিলো না।
‘আওয়ামী লীগকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তার যে ত্যাগ, সেই সঙ্গে পুরো পরিবারও ত্যাগ স্বীকার করেছে। এই ত্যাগ যেন নষ্ট না হয়, ভুলুণ্ঠিত না হয়, তার জন্য আমার সব চেষ্টা। ’
প্রয়াত এমপি লিটনকে স্মরণ করে স্মৃতি বলেন, সুন্দরগঞ্জে থেকে স্বামীর আদর্শ, আওয়ামী লীগের আদর্শ ধরে রাখাই আমার কাজ। এটাই আমার বাকি জীবন। আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। জনগণের মাঝে বেঁচে থাকাই লক্ষ্য। উৎফুল্লভাবে জনগণের সঙ্গে মিশে ভালো থাকা, সেই সঙ্গে জনগণকে ভালো রাখা- যদি সেই সৌভাগ্য হয়।
‘আমার কর্মের মাধ্যমেই থাকতে চাই। উনি না থাকায় ওনার অভাবটা আরও ওনাকে শক্তিশালী করেছে। উনি কী ছিলেন, আমরা কী হারালাম। এই লিটন জনগণের জন্য এতো উদার ছিলেন। ’
তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-সমর্থকরা লিটনের বিকল্প হিসেবে স্মৃতিকেই দেখতে চায় দাবি করে তিনি বলেন, আমি লিটনের সঙ্গে থেকে, একসঙ্গে রাজনীতি করে অভ্যস্ত। সুন্দরগঞ্জের মানুষের মন-মননে কী আছে, কোথায় কী প্রয়োজন সেটা আমি বুঝতে পারি, আমি জানি। সেগুলো তুলে ধরতে আামর সময় লাগবে না। যদি আমি না থাকতে পারি, আমাকে স্পেসটা না দিলে সুন্দরগঞ্জ কিন্তু আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। জামায়াত মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সেটার প্রেক্ষাপট এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ২০১৩ সালে সুন্দরগঞ্জে পুলিশ হত্যাসহ যে সহিংসতা হয়েছে সেটা ৭১ সালেও হয়নি।
একই পরিবার থেকে দু’জনের মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়ে লিটনের বোন আফরোজা বারীর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিষয়টি অভ্যন্তরীণভাবে আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু উনি যদি না বোঝেন তাহলে কী করার আছে। এখন ওনাকে পরামর্শকরা পরামর্শ দিচ্ছেন। আমি জানি আমিও একসময় নতুন ছিলাম। শিখতে অনেকদিন সময় লেগেছে। ওনারও এমন সময় লেগে যাবে কিছু বুঝতেই পারবেন না। ততদিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে যাবে।
তবে পরিবারের বাইরে থেকে কাউকে মনোনয়ন দিলেও দলের জন্য কাজ করবেন জানিয়ে স্মৃতি বলেন, উপ-নির্বাচনে মোস্তফা ভাইকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আমি সুন্দরগঞ্জ আসার আগে কোনো ফিল্ড ছিলো না। আমি আসার পরেই ঘুরে যায়। সিমপ্যাথি বলে একটা জিনিস আছে। সেটা আমার চেয়ে কেউ বেশি পাবে না।
মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে লিটনের কোন অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান জানতে চাইলে তার সহধর্মিণী রাজনীতিক বলেন, ব্রহ্মপুত্র-তিস্তাবেষ্টিত একটি চরাঞ্চল উপজেলা সুন্দরগঞ্জ। ১৬টি ইউনিয়নের ৮টিই নদীগর্ভের মধ্যে। উত্তরাঞ্চলের এ উপজেলাটি যে নদীগর্ভে সেটা আমাদের নেতৃত্বস্থানীয়দের জানান লিটনই।
‘এখানের চরাঞ্চলের যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো করতে চাই। চরে এখন সোনা ফলে। অর্থনীতির চাকায় যদি সেটা ব্যবহার করতে পারি, যুক্ত করতে যা করা দরকার, লিটন সেটা শুরু করেছিলেন। আমি সেটা শেষ করতে চাই। ’
লিটনের কাজ সম্পর্কে স্মৃতি বলেন, উনি অনেক রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট করেছেন। আরও যখন করতে গেছেন তখনই তো উনি থাকলেন না। চরাঞ্চলের যোগাযোগের জন্য রাস্তা খুব জরুরি ছিলো, সেটা উনি করেছেন। গরু তাদের প্রধান সম্পদ। গরু রক্ষার জন্য লিটন নিজের টাকায় দু’টো টাওয়ার করে সার্চ লাইট ও সাইরেনের ব্যবস্থা করেছেন। এলাকার গরুগুলো একজায়গায় করে সার্চ লাইট দিয়ে পাহারা দেওয়ায় সেখানে আর ডাকাতি হচ্ছে না। এটা ওনার নিজস্ব প্ল্যান। এভাবে অনেক প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করেছেন তিনি। আমি সুযোগ পেলে তার কাজগুলো আরও এগিয়ে নেবো।
ড্রয়িংরুম লাগোয়া লিটনের বসার রুমে গিয়ে দেখা যায়, একটি সিঙ্গেল খাট পড়ে আছে। দেয়ালে সাঁটানো কয়েকটি ছবি। এককোণে পাটি গোটানো। খাটটিতেই গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয় লিটনকে। খাটে জাজিমে এখনও শুকনো রক্তের দাগ। রুমটি বন্ধ থাকে। আর কোনো জিনিসও নেই।
রুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে স্মৃতি আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, আমরা রুমটা ওভাবে রেখে দিয়েছি কারণ ওটা তার ব্যবহৃত আসবাবপত্রগুলো দিয়ে ডেকোরেটেড করবো। মেমোরির মতো করে রাখবো। ওটা এখনই হাত দিতে পারছি না। সেই অবস্থায় এখনও যেতে পারিনি। আরও একটু সময় লাগবে। আমি এখনও ওই ঘরে ঢুকতে পারিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৭
এএ/এইচএ/
আরও পড়ুন
** 'লাঙলের ফলায় লিটনের রক্ত, সুন্দরগঞ্জবাসী ভোট দেবে না'
** বিএনপি অফিসও এতো জমজমাট!
** ‘মাঠ যাচাই করে মনোনয়ন দিলে আমিই জিতবো’
** রাজশাহী ৫: অসন্তোষ তৃণমূল বিএনপিতে, চান পা-ফাটা নেতা
** মানুষ এতো অমানবিক কেন!
** পানির তোড়ে ওষুধ বিক্রেতাও খোলা রাস্তায়
**‘আইজ হামাক খাবার নেই, কাঁঠাল সিদ্ধ কইরে খাব’
**রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া
** গম-ভুট্টা-পাটক্ষেতের উপর দিয়ে চলছে নৌকা!
** পচা ড্রেনে ছিপ ফেলে কেজি কেজি মাছ!
** নির্বাচনী এলাকায় ‘তুলোধুনো’ এমপি দারা!
** তিতুমীরে হিজড়া-ভিক্ষুকের রাজত্ব!
** পেরেছে কলকাতা-রাজশাহী, পারলো না শুধু ঢাকা!
** ‘নির্বাচিত হলে গ্রামেও আনবো ডিজিটাল সুবিধা’
** এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব
** ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ'লীগ অফিসে
** এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন!