ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

ফেনী-৩ আসন: মাঠে সরব আ’লীগ, এখনো নামেনি বিএনপি

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
ফেনী-৩ আসন: মাঠে সরব আ’লীগ, এখনো নামেনি বিএনপি ফেনী-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ছবি: সংগৃহীত

ফেনী: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে নিজেদের দলের ব্যাপারে ইতিবাচক প্রচরণায় তুমুল ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

এ প্রচারণায় পিছিয়ে নেই ফেনী-০৩ নির্বাচনী এলাকার রাজনীতিবিদরাও। এ আসনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যেমন নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মাঠে পড়ে থাকছেন, তেমনি নিজেদের গোছাচ্ছেন বিএনপিসহ অন্যান্য দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও।

জেলার তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অন্য দুই আসন থেকে তুলনামূলক বেশি। নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এরইমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন এ নিয়ে চলছে কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে কল্পনা-জল্পনা। এক মাস আগেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে নেমে গেলেও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অবশ্য এখনো মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

নির্বাচনে তারুণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের এমন আভাস পেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা। এক্ষেত্রে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন তার সমর্থকরা।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও এনআরবি গ্লোাবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক সাবেক ছাত্র নেতা জহির উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী লিপটন, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, দাগনভূঞাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতনও দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য চেষ্টা করছেন।

বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৌদি আরবের জেদ্দা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রহিম উল্যাহও এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এ বিষয়ে কথা হলে রহিম উল্যাহ বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিলে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার বলেন, দলকে সংগঠিত করতে এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নৌকা প্রতীককে জয়ী করতে কাজ করে যাচ্ছি। আমি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইবো। আশা রাখছি তিনি আমাকে মনোনয়ন দিয়ে এ আসনের মানুষের সেবা করা সুযোগ করে দেবেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সোনাগাজী, দাগনভূঞার সাধারণ মানুষের পাশে আছি। ছাত্র রাজনীতি থেকে এখন পর্যন্ত দলকে বিশাল সময় দিয়েছি। আর সে কারণেই দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শতভাগ আশাবাদী।

মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তৃণমূলের জনগণের কাছে এসে কাজ করছি। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ আসনে মনোনয়ন দিয়ে এলাকার সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।

এ আসনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর মনোনয়নপ্রত্যাশার কথাও শোনা যাচ্ছে। যদিও অন্যদের মাঠে দেখা গেলেও মাসুদ উদ্দিনকে তেমন একটা দেখা যায়নি। কেবল ফেসবুকে একদল যুবক ‘মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী সমর্থক গোষ্ঠী’ নাম দিয়ে তাকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে প্রচার চালাচ্ছেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার জন্মস্থান জেলার এ আসনে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে নিজেদের গোছানোর প্রস্তুতি চলছে। তবে অনেকটাই আড়ালে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, দলের কেন্দ্রীয় নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাছির উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, ওয়ান ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরী। এছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক সাদরাজ জামান।

২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদের নিজ এলাকা হওয়ায় তার নামও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে।

এ বিষয়ে আলাপ করলে ফেনী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু তাহের বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত দেবে। হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দেবে, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা তার জন্য কাজ করে যাবে।

অন্যদিকে গেলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রচার ও প্রকাশনা উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ারকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী রহিম উল্যাহর কাছে বিপুল ভোটে হেরে যান তিনি। তিনি বলেন, ‘দল এরইমধ্যে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে দল যদি জোটের সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতা করে তখন আমি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে গতবারের মতো ফেনী-৩ আসনটির জন্য জোর দাবি জানাবো। ’

এছাড়া, আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুর রাজ্জাকও এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশা করছেন।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র মতে, ফেনী-৩ নির্বাচনী এলাকাটি দাগনভূঞা উপজেলার আটটি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও সোনাগাজী উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ভোটার দুই লাখ ৮২ হাজার ৭৮ জন। এর মধ্যে সোনাগাজীতে এক লাখ ৪৩ হাজার ১৬ জন ও দাগনভূঞায় এক লাখ ৩৯ হাজার ৬২ জন ভোটার রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
এসএইচডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।