এককথায় এখন মাঠের রাজনীতিতে চলছে ভোটের হিসাব। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের একাধিক প্রার্থী মাঠে সরব।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাটুয়াখালী-৩ আসনটি অর্থনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গলাচিপা-দশমিনা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটির গলাচিপা, কলাপাড়াকে ঘিরে রয়েছে পায়রাবন্দর। তাই আসনটি দখলে নিতে দুই দলই মরিয়া।
পটুয়াখালী-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রার্থিতার দৌড়ে আছেন যুবলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক শিল্পপতি কামরান শাহীদ প্রিন্স মহাব্বাত, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাগনে এস এম শাহজাদা সাজু, অ্যাডভোকেট ফোরকান মিয়া, এছাড়া আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি শাহজাহান খান ও গোলাম মোস্তফা।
পাটুয়াখালীর গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা ঘুরে সাধারণ ভোটার ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায় বর্তমান এমপি অনেকটাই জনবিচ্ছিন্ন। তাছাড়া এক-এগারোর সময় সংস্কারপন্থি হওয়ায় আওয়ামী লীগের মধ্যেই রয়েছে অসন্তোষ। তাই এলাকাবাসী পরিবর্তনের দিকেই ঝুঁকছেন।
আসনটি দখলে নিতে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে সমাজ সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পপতি কামরান শাহীদ প্রিন্স মহাব্বাত। নিজ উদ্যোগেই তিনি এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন বলে জনখ্যাতি রয়েছে। তাই তার সম্ভাবনাও কম নয়। অন্যদিকে সিইসির ভাগনে হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন শাহজাদা সাজু, সে হিসেবে তাকেও প্রার্থী হিসেবে গণনায় ধরছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, গণসংযোগকালে শাহজাদা নিজেই বলে বেড়াচ্ছেন, আমার ব্যাপারটি মামাই দেখবেন। তাছাড়া নিজের অবস্থান জানান দিতে বেশকিছু দিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান করছেন তিনি।
অন্যদিকে গোলাম মওলানা রনি ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও এবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীর মাঝেও রনির বিষয়ে বেশ আগ্রহ রয়েছে। যদিও অতীতে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিষোদগার করায় তার বিষয়টি কেন্দ্রে ফয়সালা হবে বলে মনে করেন অনেকে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের সাথে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে কথা হয়েছে অন্য প্রার্থীদের সাথে।
সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি বাংলানিউজকে বলেন, গলাচিপা-দশমিনা উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৩ আসনে এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আমি মনোনয়ন চাইব, আমিই পাব। অন্য যারা আছেন তারা কেন পাবেন? আগি গতবার নির্বাচন করি নাই তাই বর্তমান এমপি সুযোগ পেয়েছেন। এখানে কী কাজ করতে হবে কী বাকি আছে সেটা আমি জানি। আর আমরা বংশ পরস্পরায় আওয়ামী লীগ করি, আমাদের ঐতিহ্য আছে। এই আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। তাই নৌকার প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয় উপহার দেব।
কামরান শাহীদ প্রিন্স মহাব্বাত বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য গত ৫ বছর আমি এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এমপি নির্বাচিত হলে আমার জন্য কাজ করা আরও সহজ হবে। তাছাড়া আমি আওয়ামী লীগের একটি পদ বহন করছি। অন্য কেউ আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের পদে নেই। তারপরেও দল যাকেই মনোনয়ন দেবে সেই বিজয়ী হবে এবং আমি তার জন্য কাজ করব।
এস এম শাহজাদা সাজু বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বয়সের বিবেচনায়ও বর্তমান সংসদ সদস্যের অবসর নেওয়া উচিত। সবারই তো একটা বয়স আছে। তারা রাজনীতি করেছেন আমরা তরুণ প্রজন্ম তাদের কাজগুলো চালিয়ে যেতে চাই। এখানকার মানুষ তরুণ প্রজন্মকে চায়। আমি নির্বাচনকে ঘিরে বহুদিন ধরেই কাজ করছি। মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছে, আমি মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
সিইসির ভাগনে বলে সুবিধা পাবেন এমন কথা প্রচলিত আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাজু বলেন, এটা সামাজিক ব্যাপার। এর সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নাই। আমার মামা আগেও বড় বড় জায়গায় চাকরি করেছেন। তাছাড়া একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, তার ভাগনে হিসেবে মানুষ আমাকে সম্মান দেয়।
অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহজাহান খান বলেন, আমার দল নির্বাচনে অংশ নিলে অবশ্যই আমিই এখানকার প্রার্থী। আমি অতীতেও নির্বাচন করেছি। এখানকার বিএনপিকে আমিই টিকিয়ে রেখেছি। আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে। দল থেকে ঘোষণা দিলেই জোর কদমে কাজ শুরু হবে।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে গলাচিপা উপজেলার কামাড়পাড়ায় আবুলের চায়ের দোকানে ভোটের কথা তুলতেই শুরু হয়ে যায় বিচার-বিশ্লেষণ। মধ্যবয়সী এক ভোটার বাংলানিউজকে বলেন, ভোট অইবে, নাকি পিডাপিডা অইবে হেইডাই কয়তে পারি না। পিডাপিডির ভোট অইলে আওয়ামী লীগের যেই কার্ড (মনোনয়ন) পাক সেই হবে। তবে নিরপেক্ষ ভোট হলে আর যদি রনি প্রার্থী হয় তার জয়ের সম্ভাবনা বেশি। হেই এলাকায় অনেক কাজ করছে।
পটুয়াখালী-৩ আসনে দুই উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ৫৭০। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৫ আর নারী ভোটারের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৫ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৮
এসএম/এমজেএফ