রাজাপুর-কাঠালিয়া মিলিয়ে এই আসনে কখনো জাতীয় পার্টি, কখনো বিএনপি আবার কখনো আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আসনটি কোনো দলেরই একক ঘাঁটি না হলেও ২০০৮ সাল থেকে সেখানকার প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে আছেন আওয়ামী লীগের বজলুল হক হারুন (বিএইচ হারুন)।
এবারও এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন চাইবেন হারুন। তার সমর্থকরা এবারও হারুনেরই জয়ের প্রত্যাশা করছেন।
তবে হারুনের বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনাও আছে। বিরোধীপক্ষের কাছে এই ব্যবসায়ী ‘দলছুট’ নেতা হিসেবেও পরিচিতি। বিরোধীদের দাবি, নির্বাচিত হয়ে যতটা না দলের জন্য বা নেতাকর্মীদের জন্য কাজ করেছেন, হারুন তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন নিজের ব্যবসা নিয়ে।
আওয়ামী লীগের একটি অংশই মনে করে, টাকার জোরেই বিএইচ হারুন প্রতীক কিনে নির্বাচন করেন। তাই যখন যে দলে ভিড়েছেন তখন সেখান থেকেই সুবিধা নিয়েছেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রথম ভান্ডারিয়া থেকে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হারুন। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন তিনি।
এরপরই পাড়ি জমান জাতীয় পার্টিতে (জাপা)। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জাপার কাছ থেকে মনোনয়ন চান হারুন। তখন তাকে না দিয়ে জাপার প্রার্থী করা হয় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে। জাপা থেকে টিকিট না পেয়ে ২০০১ সালে নির্বাচনের আগে হারুন যোগ দেন আওয়ামী লীগে। সেবার নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের কাছে পরাজিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। সবশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অন্য অনেকের মতো তিনিও নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।
এভাবে বারবার দল বদল করায় আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামের নেতাকর্মীদের অনেকে হারুনকে ‘মতলববাজ’ বলেও আখ্যা দেন। সেজন্য এবার নতুন মুখই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান তারা। তাছাড়া ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য শক্ত প্রার্থী (শাহজাহান ওমর) থাকায় আওয়ামী লীগেও দৃঢ়চেতা ভাবমূর্তির প্রার্থী চান স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এবারের নির্বাচনে হারুন ছাড়াও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় আছেন সাবেক সচিব ও কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ও আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির। তরুণ সমাজের প্রতিনিধি হওয়ায় মনিরকেই এগিয়ে রাখছেন রাজাপুর-কাঠালিয়ার ভোটাররা। অন্যদিকে ইসমাইল হোসেনেরও রয়েছে পরিচিতি। সাবেক আমলা হিসেবে মনোনয়নের দৌঁড়ে পিছিয়ে নেই তিনিও।
রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন মাতুব্বারের মতে, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনিরুজ্জামান মনিরের বিকল্প নেই। তিনি বিএইচ হারুনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তার মতো মতলববাজ নেতা আবার টিকিট পাইলে রাজাপুর-কাঠালিয়ার আওয়ামী লীগ মুসলিম লীগে পরিণত হবে। সে ১০ বছরে দলটাকে নিঃশেষ করে ফেলেছে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, এই আসন সত্যিকার অর্থে কারও একক ঘাঁটি না। এখানে বিএনপির শাহজাহান ওমর দাড়ালে তার সঙ্গে লড়াই করতে হলে আমাদের শক্ত প্রার্থী লাগবে। সেক্ষেত্রে মনিরুজ্জামান মনির নৌকার প্রার্থী হলে তুমুল লড়াই হবে। তবে কেউ খুব বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হতে পারবেন না। আর বিএইচ হারুনকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির পোয়া বারো হবে।
এসব বিষয়ে আলাপ করলে বিএইচ হারুন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চারবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে দিয়েছেন। এই এক যুগে এলাকায় যে উন্নয়ন করেছি, কেউ এতোটা কাজ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, বিএনপির শাহজাহান ওমর নির্বাচনে এলে তাকে স্বাগত জানাই। তবে আমি যে কাজ করেছি, নৌকার মনোনয়ন পেলে কেউ আমার কাছে পাত্তা পাবে না। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সবাই আমার সঙ্গে উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমি কাজ করছি। কে কী বললো না বললো এটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
এদিকে এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হলেও শোনা যাচ্ছে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, রফিকুল ইসলাম জামালের কথাও।
যোগাযোগ করা হলে শাহজাহান ওমর বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি আছে। নির্বাচন হলে, আর যদি মানুষ ভোট দিতে পারে তাহলে বিজয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।
এছাড়া, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট না হলে লাঙ্গলের ঝাণ্ডা ওড়াতে চান পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা এম এ কুদ্দুস খান। অবশ্য তাকে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দিতে নারাজ জাপার আরেক নেতা কামরুল ইসলাম। নির্বাচনী প্রচারণায় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নুরুল হুদা ফয়েজীর তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে।
রাজাপুর-কাঁঠালিয়া উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-১ আসনটি গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭১ জন। এরমধ্যে নারী ভোটার ৮৭ হাজার ৪১৪ জন আর পুরুষ ৮৬ হাজার ৬৫৭ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৮
এসএম/এইচএ/