এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা শেখ সুজাত আলীকে পরাজিত করে তিনি বিজয়ী হন।
এবারও এ আসন ধরে রাখতে মরিয়া মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি। আর বাবার হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন মরহুম দেওয়ান ফরিদ গাজির ছেলে শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী।
সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন- সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী ও নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী।
অবশ্য জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের কবল থেকে আসনটি মুক্ত করতে চায় বিএনপি। সে সুবাদে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
এছাড়া পার্টির নেতাকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বৃটেন প্রবাসী আব্দুল হামিদ, বৃটেন প্রবাসী জাতীয় পার্টি নেতা আশরাফ উদ্দিন ও বৃটেন প্রবাসী সাবেক ছাত্র সমাজ নেতা আব্দুল মোন্তাকিম মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পার্টির নেতারা। এরই মধ্যে তারা এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত হলেও এ আসনে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দেওয়ান ফরিদ গাজীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির নেতা খলিলুর রহমান রফি।
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন আওয়ামী লীগ নেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী। ওই নির্বাচনে পরাজিত খলিলুর রহমান রফি বিএনপিতে যোগদান করলে এ আসনে জাপার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পার্টির হয়ে এ আসনের হাল ধরেন বৃটেন প্রবাসী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ মুনিম বাবু। ২০১১ সালের উপ-নির্বাচনে তিনি ২০ হাজারের বেশি ভোট পান। গত নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন মুনিম। এলাকায় নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। পাশাপাশি পার্টির নেতাকর্মীদের সু-সংগঠিত করতে কাজ করছেন বলেও জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
এবারো মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সংসদ সদস্য মুনিম চৌধুরী বাবু বলেন, হবিগঞ্জ-১ আসন সবসময় অবহেলিত ছিল। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি। দু’টি স্কুল-কলেজকে সরকারি করা, ৫০টি গ্রামীণ সড়ক ও ৩৮টি কালভার্ট নির্মাণ করেছি। নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হওয়ার পথে। এককভাবেই হোক আর জোটগতভাবেই হোক, সংসদ সদস্য পদে তার মনোনয়ন চূড়ান্ত- এমন আভাসই পেয়েছি।
মনোনয়ন পেলে আবারও নির্বাচিত হবেন বলেও আশাবাদী তিনি।
নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি দলীয় প্রার্থী না দিয়ে জোটকে এ আসন ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেখানে আওয়ামী লীগ আরও দুর্বল হবে। আশা করি, এবারের দলীয় মনোনয়ন তৃণমূলের কর্মীবান্ধব নেতাকে দেওয়া হবে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই দল ও এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় দলকে জেলায় সু-সংগঠিত করেছি। ছয় বছর ধরে জেলা পরিষদ প্রশাসক ও চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচনী এলাকাসহ হবিগঞ্জ জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তাই মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী বাংলানিউজকে বলেন, গত নির্বাচনে দল ও মহাজোট থেকে আমার মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু দেশ, জাতি ও মহাজোটের বৃহত্তর স্বার্থে আমি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। আশা করছি, দলের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানানোয় এবার আমার মূল্যায়ন হবে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের চাওয়ার মাত্রাটা বেশি আমাকে নিয়ে। দলের সভানেত্রী যদি মনোনয়ন দেন, তাহলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন আশা করি।
নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী বলেন, ৩৮ বছর ধরে দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ছাত্রজীবন থেকে দলের প্রতিটি কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। নতুন প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
এসআই