বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সারাদেশে একমাত্র এ আসনে ১৯টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়তে দেয়নি বিএনপি। যা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ও বড় শক্তির পরিচয় দিয়েছে।
নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রীয় রাজনীতি ও সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় স্থানীয় জনগণ বা নেতাকর্মীকে খুব একটা সময় দিতে পারেননি। এ সুযোগে সদর আসনের জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব দেন সেই সময়ের জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব একেএম মাহবুবুল আলম মিঠু।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে মিঠু মাঠে গণসংযোগ চালালেও জিএম কাদের মনোনয়ন দৌড়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। তবে এখনও নির্বাচনী মাঠ সাজাতে পারেননি তিনি। মনোনয়ন নিয়ে মিঠু ও কাদের দ্বন্দ্বে এ আসনে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা। প্রকাশ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সাম্প্রতিক এক জনসভায় এ আসনের মনোনয়নে ছোট ভাই জিএম কাদেরের নাম ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পর থেকে মিঠু গ্রুপ প্রতিবাদ করে আসছে। তারা দলের কো-চেয়ারম্যানকে বহিরাগত অতিথি পাখি আখ্যা দিয়ে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এলাকার ছেলে মিঠুর পক্ষে গণসংযোগ করছেন। ফলে দলের সব পদবী থেকে সদস্য সচিব একেএম মাহবুবুল আলম মিঠুকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দাবি করে বিভিন্ন সভা সমাবেশ করছে মিঠু গ্রুপ। এভাবেই ভেঙে পড়েছে দলের ইমেজ।
জাতীয় পার্টির দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠ সাজাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল বয়সের ভারে নাজুক হওয়ায় দলীয় কর্মকাণ্ডে বা জনগণের সঙ্গে তেমন সম্পৃক্ততা নেই। দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডেও তাকে দেখা যায় না। নেই তার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নের ফিরিস্তি। যার ফলশ্রুতিতে পরিবর্তনের পথ খুঁজছে ভোটাররা। মনোনয়ন প্রত্যাশা করলেও গণসংযোগে তাকে দেখা যাচ্ছে না। এ কারণেই সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান। এ আসনে ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগ থেকে আরো মনোনয়ন চাইতে পারেন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি। তবে মনোনয়ন দৌড়ে অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান অনেক এগিয়ে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টজনরা মনে করছেন।
দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে এবং নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জড়িত হলেও এ আসনে বিএনপি'র ভোট ব্যাংক ভাঙতে পারেনি কোনো রাজনৈতিক দল। ভোট না বাড়লেও এখন পর্যন্ত তহবিল ধরে রেখেছে বিএনপি। তবে জাপায় ফাটল থাকায় তাদের তহবিল ভেঙে ভড়ছে ক্ষমতাশীনদের ঘর। জামায়াত এ আসনে গোপনে বিএনপি'র ওপর ভর করেই চলছে। তাদের নিজেদের তেমন কোনো অবস্থান নেই এ আসনে। তারাও প্রধান শরীক বিএনপি'র দুলু'র নেতৃত্বেই চলছে।
এ আসনে বিএনপি একক প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু'র মনোনয়ন অনেকটাই চুড়ান্ত বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মী ও সংশ্লিষ্টরা। এ আসনে জনসমর্থনে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমপর্যায়ে রয়েছে বলে ভোটারদের অভিমত। তবে মহাজোটে একক প্রার্থী হলে বিএনপি'র জন্য পেরে উঠা কষ্টকর হবে।
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশের মতো লালমনিরহাটেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ জেলার মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।
জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান এ আসনের প্রার্থী জি এম কাদের বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে মিঠুকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সংসদের ভেতর বা বাইরে মানুষের প্রত্যাশার
প্রতিফলন ঘটাতে যা প্রয়োজন তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ করছে জাতীয় পার্টি। নিশ্চই আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা জাতীয় পার্টির পক্ষে রায় দেবেন।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সারাদেশের মতো লালমনিরহাটের মানুষ আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে অতিষ্ট। আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ভোটাররা এর প্রতিফলন ঘটাবে। বিপুল ভোটে এ আসনে বিএনপি জয়লাভ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
আরএ