ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

জমজমাট ভোটের মাঠ প্রত্যাশা ভোটারদের

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
জমজমাট ভোটের মাঠ প্রত্যাশা ভোটারদের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ঢাকা: আসছে মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) থেকেই জমজমাট হবে ভোটের মাঠ। এমন ধারণা থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন দেশের বৃহৎ দুই জোটের সমর্থক ও ভোটাররা। নির্বাচনের ছয়দিন আগে মাঠে সশস্ত্র বাহিনী নেমেছে বিধায় জমজমাট ভোট উৎসবের আভাস পাচ্ছেন তারা।

এর আগে ভোটের মাঠে ঐক্যফ্রন্টের সমর্থক ও প্রার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা ও বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াপনাকেই দায়ী করছেন ভোটাররা।
 
নির্বাচনের আছে আর মাত্র ছয়দিন।

এ সময়েই গলদঘর্ম হওয়ার কথা সব জোট, দল, প্রার্থী ও সমর্থকদের। তবু এবার কেনো যেনো ‘কি’ নেই ভোটের মাঠে। উৎসবের রং যেনো একটু হালকাভাবে লেগেছে ৫৫ হাজার বর্গমাইলের জনপদে। । জমেনি আড্ডার স্থলও। আলোচনাতেও আছে একপক্ষীয় আলাপের আবাহ। এর সবই নজরে আছে ভোটারদের। তারা নাকি অপেক্ষা করছেন সঠিক সময়ের জন্য। ঠিক যে সময়টাতে নিশ্চিন্তে মাঠে নামা যাবে কোনো রকম সংঘাতের দুশ্চিন্তা ছাড়াই।

বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেকেই জানান, নির্বাচনের মাঠে সেনাবাহিনী মোতায়েন শুরু হলেই দলমত নির্বিশেষে মানুষ ভোটের মাঠে নামতে পারবেন। ভোট চাইতে পারবেন পছন্দের প্রার্থীদের জন্য। তখন থাকবে না প্রতিপক্ষের পক্ষ থেকে হামলা, অগ্নিসংযোগের মতো দুর্ঘটনার শংকা।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দায়িত্ব পালনে মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী দেশের ৩৮৯ উপজেলায় এবং নৌবাহিনী ১৮ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবে।

এবারের নির্বাচন কেমন দেখছেন, প্রশ্ন করেছিলাম কালা মিয়া নামে একজনকে। পেশায় তিনি একজন হকার। বাড়ি বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি। কালা মিয়া গত ১০ বছর ধরে রিকশা চালান ঢাকার উত্তরাতে। এখন পেশা পরিবর্তন করে মাছের কারবার করেন। প্রতিদিন আব্দুল্লাহপুর আড়ত থেকে মাছ এনে বিক্রি করেন।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভোট তো জমে নাই। তবে জমবো মনে হয়। আগেরবার তো ভোট হয় নাই! তাই মানুষ এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে এইবার ভোট হইবো। আর সব তো দেহি নৌকার মানুষ। ধানের শীষের তো কেউ নাই। হেরা না নামলে কি ভোট জমবো! জমতো না স্যার। তয় মানুষ কিন্তু আস্তে আস্তে নামতে শুরু করছে। এইদিকে তো দুই দিন আগেও কোনো পোস্টার ছিলো না। এখন নৌকার পোস্টার আইছে। ধানের শীষেরটাও আইবো। ’
 
সেগুনবাগিচার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন হেদায়েত হোসেন। বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায়। তিনি বলেন, ‘মানুষ একটু ভয়ে আছে। প্রকাশ্যে কথা বলতে পারছে না। এটা খালি বিএনপি বা ঐক্যজোটের সমর্থক বা ভোটাররা না। আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের ভোটার বা সমর্থকদের ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন স্থানে যেমন বিরোধী দলের প্রার্থী বা সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে, তেমনি তো আওয়ামী লীগেরও অনেক স্থানে লোক মারা গেছে। অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই মানুষ সত্যিই ভয়ে আছে। ’

তবে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনের মুখ্য বিষয় হলো প্রতিযোগিতা করে জয়লাভ। সেজন্য সবাইকেই ঘাম ঝরাতে হবে। নির্বাচনে নাম লিখিয়ে কেউ এটা করবেন না, তা ভাবা সত্যিই বোকামি হবে। যেহেতু এখনো ছয়দিন সময় হাতে আছে, তাই ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সোমবারে সেনাবাহিনী নামলে, দেখবেন মঙ্গলবার থেকেই জমে যাবে ভোটের মাঠ। ’

এক সপ্তাহ আগেও ভোট না জমায় এর দায় আবার অনেকেই বিএনপিকে দিচ্ছেন। যেমন সাংস্কৃতিক কর্মী অনিক হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভোট আসলে আমরা সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। এ বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান থাকা উচিত। বর্তমান ভোটের মাঠের যে অবস্থা তার দায় বিএনপি-জামায়াতের। তারা ২০১৪ সালে নির্বাচনকে সামনে রেখে যে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে ছিলো, এবারের নির্বাচনে সেই স্মৃতি তাদের মনবল ভেঙে দিচ্ছে। তারা সাহস করে মাঠে নামতে পারছে না। ’
 
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলো। তাদের একটি শক্তিশালী সংগঠন ছিলো। কেবলমাত্র নেতৃত্বে দেউলিয়াপনায় তাদের সেই সংগঠন নষ্ট হয়ে গেছে। একটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরও তারা মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮
আরএম/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।