চাঁদাবাজির অভিযোগে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী রিয়াদসহ পাঁচজন শুধু চাঁদাবাজিই নয়, তারা মাদক সিন্ডিকেটেরও সদস্য। এ ধরনের শতাধিক তরুণ সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে সারা দেশে একটি শক্তিশালী মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
গুলশান-বনানীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অভিজাত এসব এলাকায় আগে যেসব মাদক বাণিজ্য ছিল ৫ আগস্টের পর তা দখল করেন সমন্বয়ক নামধারীরা। এ সুযোগে এলাকার প্রভাবশালী মাদক কারবারিরা এসব সমন্বয়ককে হাত করে। টাকা ও মাদক সেবনের সুযোগ দিয়ে প্রথমে তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। পরবর্তী সময়ে এসব সমন্বয়ক পরিচয়ধারীকে ব্যবহার করে নিরাপদে মাদক আনা-নেওয়ার কাজ করে। তাদের মাধ্যমে সারা দেশে সমন্বয়ক পরিচয়ধারী শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে গড়ে তোলা হয় মাদক পরিবহনের নিরাপদ সিন্ডিকেট। সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর নতুন সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার কারণে মাদক ভোক্তার সংখ্যাও বেড়ে গেছে। মদ ছাড়া অন্যান্য মাদক পরিবহন, হোম ডেলিভারি দেওয়া এখন অনেক নিরাপদ বলে মনে করছে একাধিক সূত্র। জানা গেছে, গত ১১ মাসে ভারত ও মিয়ানমার থেকে সব ধরনের মাদক দেশে অনুপ্রবেশ করছে। জল, স্থল ও আকাশপথে মাদক আসছে। মাদকের এই অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সারা দেশে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন সিন্ডিকেট। তারা শহর-নগর, পাড়া-মহল্লা সবখানেই মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীকে এতে উদ্বুদ্ধ করছে। সমন্বয়কদের হাতেই এখন মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ। মাদক কারবারে জড়িয়ে অনেক সমন্বয়ক রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন।
রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা এবং ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা শহরে সমন্বয়করা ভাগ হয়ে মাদক কারবারের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে গেলেই তাকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। মব সৃষ্টি করে মারধরসহ সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। সারা দেশের সব জায়গায় সরব উপস্থিতিতে থাকা সমন্বয়কদের তারা এককালীন, দৈনিক ও মাসিক চুক্তিতে টাকা দিচ্ছে। ডিএনসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, মাদক কারবারিরা সর্বদা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে টানার চেষ্টা করে। তাদের বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে। নিত্যনতুন লোকজন এসব কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অল্প সময়ে ধনী হওয়ার প্রবণতা থেকে দেশের অসৎ লোকেরা ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িতদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট করা হচ্ছে। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদক কারবারি যে-ই হোক তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, মাদক কারবারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত নতুন লোক যোগ হচ্ছে। পুরোনো কারবারিরা তো আছেই। তারা নিত্যনতুন কৌশলে মাদক বহন ও বিক্রি করছে, এমনকি বিভিন্ন দেশ থেকে নিত্যনতুন মাদক নিয়ে আসছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিতই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে মাদক জব্দ ও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে। তবে দেশে যে পরিমাণ মাদক আছে সেই পরিমাণ মাদক উদ্ধার করতে পারছে না। মাদকের বাহক বা মাদকাসক্ত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেও এর পেছনে রাঘববোয়াল, পৃষ্ঠপোষক বা মূল হোতা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন