• অপপ্রচারের দায় সরকার এড়াতে পারে না • নানা বিদ্বেষমূলক অপপ্রচারে ষড়যন্ত্রের আভাস • সার্বভৌমত্ব ও সেনা মর্যাদার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের
‘ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর ৫ আগস্ট থেকেই অস্থিতিশীল রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখার একমাত্র কার্যকর প্রতিষ্ঠান ছিল সশস্ত্র বাহিনী। এর কিছু সদস্যের নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িয়ে পড়া এই প্রতিষ্ঠানের ওপর রক্তের একটি দাগ—সন্দেহ নেই, কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) দ্বারা কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনয়নে পুরো বাহিনীকে দোষারোপ করা বা আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা জাতির স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত হানারই শামিল।
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া (আইকেভি) গত ১৭ অক্টোবর নিজের ফেসবুক পোস্টে এ মন্তব্য করেন।
গত ৮ অক্টোবর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনামলে গুম-অপহরণ করে আটক, নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলার ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ’ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
দুটি মামলাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিককে আসামি করা হয়েছে। এই দুজনসহ দুই মামলায় মোট আসামি ৩০ জন। বাকি আসামিদের প্রায় সবাই সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন।
ঘটনার সময় তাঁরা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরের কয়েকটি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ওই পরোয়ানা পাওয়ার আগেই সেনাবাহিনী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এলপিআরে থাকা একজন এবং কর্মরত ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার নির্দেশ দেয়। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন সেনা হেফাজতে আসেন এবং একজন ‘ইলিগ্যাল অনুপস্থিত’ বলে জানানো হয়। কিন্তু এই উদ্যোগের পরও সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার এখনো চলমান।
বিদেশে থেকে ফেসবুক লাইভে এসে গুজব রটানো হয়, সেনাবাহিনীর ৪৬ ব্রিগেড মুভ করছে। সেনাবাহিনীর একটা অংশ থেকে ক্যুর প্রচেষ্টা চলছে। এর বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহবানও জানানো হয়। যদিও এটি ছিল নিছক গুজব। শতাধিত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে যাচ্ছে—সামাজিক মাধ্যমে এমন গুজবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটরের দপ্তরের বরাতে জানান, ‘এই মুহূর্তে সশস্ত্র বাহিনীর আর কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই।
’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণায় কর্তৃক ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভাবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণার বিষয়টিও বিরূপ সমালোচনার বাইরে নেই।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা অন্তহীন। জনমনেও নানা প্রশ্ন, উদ্বেগ। সামনে নির্বাচন। এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে। বর্তমানেও সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী নিয়োজিত। গত ১০ অক্টোবর সেনা সদর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “সেনাবাহিনী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে, তবে ‘আইসিটি’র এই বিষয়টিতে অবশ্যই আমাদের মোরালে অ্যাফেক্ট করবে। ”
অনেকে বলছেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সেনাবাহিনীর পোশাক পরা অবস্থার ছবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রদর্শন করে পুরো সেনাবাহিনীকেই অপমান করা হয়েছে। কারো মতে, ‘সেনাবাহিনী সম্পর্কে নানা বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানো নতুন ষড়যন্ত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীর মনোবলে আঁচড় দেওয়ার মতলববাজি। ’ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেওয়া বা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ন করা কোনো দেশপ্রেমিকের কাজ হতে পারে না-এমন মন্তব্য করে সাবেক সেনা সদস্যদের পক্ষে বলা হয়েছে, ‘বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সামনে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হবে- এমন কোনো পরিস্থিতি আমরা মেনে নিতে পারি না। ’
এ বিষয়ে কয়েকজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, অপহরণ ও গুমের ঘটনায় বহুল আলোচিত নাম হচ্ছে তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ ও সিটিটিসির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম। এ দুটি মামলায় তাঁদের নাম নেই। গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছিলেন, ‘সারা দেশে আয়নাঘরের (গোপন বন্দিশালা) সংখ্য ৭০০ থেকে ৮০০ হতে পারে। ’ এসব আয়নাঘরে নির্যাতনকারীদের কাছাকাছি সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে। যুক্তিসংগতভাবে অনুমান করা যায়, সেনা সদস্য ছাড়াও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য ও সে সময় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাও এ অপরাধে জড়িত ছিলেন। তাঁদের সবার বিচারপ্রক্রিয়া, চার্জশিট দাখিল একসঙ্গে না হওয়ায় অনেকে হয়তো এরই মধ্যে গাঢাকা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গেছেন।
সরকারের গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির তথ্যচিত্রে এই কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেনও বলেছেন, ‘গুমের সঙ্গে প্রধানত র্যাব, পুলিশ, ডিটেক্টিভ ব্র্যাঞ্চ অব পুলিশ, সিটিটিসি, ডিজিএফআই এনএসআই জড়িত ছিল। ’
সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা তাঁর ‘ডেল এইচ খান’ নামের ফেজবুক পেজে লিখেছেন, ‘অপরাধ করার সময় অভিযুক্ত বা অপরাধীর গায়ে আর্মির উর্দি ছিল না। সেনা সদস্যরা অভিযুক্তদের সুবিচার চান এবং বিচার শেষে অপরাধীদের শাস্তি দেখতে চান। কিন্তু ইউনিফর্মড অফিসারদের হাতকড়া পরিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরোতে হচ্ছে এমন দৃশ্য দেখতে তাঁরা রাজি নন। এ ছাড়া লিস্টে সব আর্মির লোকই কেন? দেশের সব আকাম আর দুর্নীতি কি খালি আর্মিই করল অ্যাদ্দিন?’
ইকবাল করিম ভূঁইয়া আরো যা বলেছেন: সার্বিক এই পরিস্থিতিতে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া আরো লিখেছেন, ‘বিচার বা সাবজেলসংক্রান্ত বিতর্ক আইনগত প্রক্রিয়ার বিষয়। সশস্ত্র বাহিনীর উচিত আইসিটির স্বাধীনতাকে সম্মান করা, যাতে ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষ রায় প্রদান সম্ভব হয়; একই সঙ্গে আইসিটিরও উচিত, সশস্ত্র বাহিনী যেটি জাতির মেরুদণ্ডস্বরূপ, তাদের স্পর্শকাতরতা ও সংবেদনশীলতার প্রতি মনোযোগী হওয়া। দোষীরা বিচার পাবেন এবং নির্দোষদেরও ন্যায়বিচার দিতে হবে। এটি বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো সংঘাত নয়; এটি কেবল আইন প্রয়োগের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা। সমাজের কোনো কোণ থেকেই প্রতিশোধপরায়ণতার অনুভূতি প্রকাশ পাওয়া উচিত নয়।
সেনাবাহিনী একটি নেতৃত্বনির্ভর সংগঠন; নৈতিক শক্তির ভাঙন তাদের মনোবল দুর্বল করবে এবং ভবিষ্যতের দায়িত্ব পালনের সামর্থ্য ক্ষীণ করবে, বিশেষ করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তার ক্ষেত্রে। সেনাবাহিনীকে ইচ্ছাবশত অবমাননা করার যেকোনো প্রচেষ্টা কেবল তাদের মনোবলে ফাটল ধরাবে এবং শত্রুকে সেই দুর্বলতা কাজে লাগানোর সুযোগ দেবে। এই সংকটকালে দেশের এখন প্রয়োজন এমন একটি সশস্ত্র বাহিনী, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী, যা আমাদের অস্থিতিশীল এক অবস্থা থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আমরা যদি এই সশস্ত্র বাহিনীকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হই, তবে আমাদের প্রতিপক্ষ এক মুহূর্ত দেরি না করে সেই সুযোগ গ্রহণ করবে। ’
সাবেক এই সেনাপ্রধান গত ১৯ মার্চ গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের আহ্বানে তাদের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন এবং প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা তিনি গুমসংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের প্রশ্নের জবাব দেন এবং নিজের স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলোও জানান। ওই দিন নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বিষয়টি জানান এবং গুম ও অপহরণসংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা কমিশনকে জানাতে আহবান জানান।
এর আগে তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে ‘বিজিবি, র্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার যত অভিজ্ঞতা’ শিরোমামে ছয় পর্বের লেখায় উল্লেখ করেন, ২০১২ সালের ২৫ জুন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পরই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলেন, তিনি র্যাব থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করে নিতে চান। পুলিশের সঙ্গে মিশে কাজ করতে গিয়ে সেনা অফিসাররা নৈতিক বিচ্যুতির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির পরিবর্তন আসেনি। শেখ হাসিনা পরে র্যাবে আরো সেনা সদস্য পাঠাতে চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু শেখ হাসিনার এই চাপ উপেক্ষা করার শক্তি আগের কোনো সেনাপ্রধানের ছিল না।
এ ছাড়া তিনি তাঁর লেখায় র্যাবসহ অন্য কয়েকটি বাহিনীতে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়োগ সম্পর্কে বলেন, ‘আমি (সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর) বিস্ময়ের সঙ্গে আবিষ্কার করলাম, মাত্র ২০-২১ বছরের অফিসারদের এমন সব দায়িত্বে টেনে নেওয়া হয়েছে, যার সঙ্গে তাঁদের আসল সামরিক সেবার কোনোই মিল নেই। তাঁরা কী করছেন বা কেন করছেন তা নিজেরাও স্পষ্ট জানতেন না। এটি ছিল বিএমএ (বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি) কর্তৃক ক্যাডেটদের ‘থিংকিং লিডার’ হিসেবে গড়ে তোলার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা। ’
বিএনপির সতর্কবার্তা: গত ১৫ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড (সামলে নেওয়া) করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই, আপনার সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটা ব্যালান্সড অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচন সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না, যেতে পারব না। পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের দোসর একটি দেশ এই সুযোগ নেওয়ার জন্য বসে থাকবে। সুতরাং আমাদের একদম প্রতিবিপ্লবী হলেও চলবে না। আমাদের বাস্তবতার নিরিখে পদক্ষেপটা নিতে হবে। ’ অনেকে বলছেন বিএনপির এই সতর্কবার্তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য এমন সময় এই সতর্কবার্তা দেন, যখন সেনাবাহিনীর সাবেক ও কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হলেও অন্তর্বর্তী সরকার অনেকটাই নীরব। অতীতেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে সরকারের একজন উপদেষ্টাও অংশ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপপ্রচারের দায় সরকার এড়াতে পারে না: গত বুধবার ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-এর কার্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, ফ্যাসিস্ট আমলে গুমের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ঘটনা ইতিবাচক। তবে এর পরও সেনাবাহিনী সম্পর্কে নানা বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটা এক নতুন ষড়যন্ত্র এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে সেনাবাহিনীর মনোবলে আঁচড় দেওয়ার মতলববাজি। অথচ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া স্বৈরাচারের বিদায় সম্ভব ছিল না। ৫ আগস্ট সব রাজনৈতিক নেতার সেনাপ্রধানের ডাকে সাড়া দেওয়ার ঘটনা তারই প্রমাণ। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেননা ভারতের এক শ্রেণির মিডিয়ায় বাংলাদেশবিদ্বেষী অপপ্রচারের জন্য ইউনূস সরকার যেমনিভাবে ভারত সরকারকে দায়ী করে, ঠিক তেমনি সেনাবাহিনী সম্পর্কে অপপ্রচারের দায়ও আমাদের সরকার এড়িয়ে যেতে পারে না।
এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের অনুরোধ: গত ১৪ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংগঠন ‘এক্স ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন’ সব দেশপ্রেমিক নাগরিক, সাবেক ও বর্তমান সেনা সদস্য এবং গণমাধ্যমকে বিভ্রান্তি ছড়ানো কুচক্রী মহলের অপপ্রচারে কান না দিয়ে সংবিধান, সার্বভৌমত্ব ও সেনা মর্যাদার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ জানায়। সংগঠনটির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সাম্পতিক সময়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে কিছু কুচক্রী মহল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে জড়িত। এই অপতৎপরতা কোনোভাবেই দেশপ্রেমিক জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাসী সেনা সদস্যদের বিপথে নিতে পারবে না। ’
এ ছাড়া বলা হয়, ‘আমরা অপরাধীদের বিচারের পক্ষে, তবে সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে এবং সংবিধান ও মানবাধিকারের মূলনীতির আলোকে। একই সঙ্গে আমরা মনে করি কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার হরণ করা সংবিধানবিরোধী। রাষ্ট্র ও সংবিধান স্পষ্টভাবে বলেছে, কোনো ব্যক্তি চূড়ান্তভাবে অপরাধী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে অপরাধী বলা যাবে না এবং তিনি যদি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হন, তাহলে তাঁর চাকরি আইনগতভাবে বহাল থাকবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের মনোবল ভেঙে দেওয়া বা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুণ্ন করা কোনো দেশপ্রেমিকের কাজ হতে পারে না। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সামনে আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হবে এমন কোনো পরিস্থিতি আমরা মেনে নিতে পারি না। ’
এসআই