ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২০ সফর ১৪৪৭

অন্যান্য

রেকর্ড আমদানি সত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট   | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৩৫, আগস্ট ১৫, ২০২৫
রেকর্ড আমদানি সত্ত্বেও খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশ

চাহিদা মেটাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ টন খাদ্য আমদানি করেছে সরকার। এই ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত রয়েছে।

সরকারের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেলেও খাদ্যশস্য আমদানির ব্যয় বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণ।  

এদিকে চলতি অর্থবছরে মূলত চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ ধান উৎপাদনকারী প্রধান অঞ্চলগুলোতে পরপর চার দফায় ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় এসব অঞ্চলের খাদ্যশস্য উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। ফলে চাহিদা মেটাতে খাদ্যশস্য আমদানি করে চলেছে সরকার। সংকট সামাল দিতে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্যের মজুত বাড়ানো হচ্ছে।  

বর্তমানে দেশে ২১ লাখ ৭৯ হাজার টন খাদ্য মজুত রয়েছে; যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে ১৭ আগস্ট থেকে। এবার সুবিধাভোগী পরিবার সংখ্যা ৫ লাখ বাড়িয়ে মোট ৫৫ লাখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আপদকালীন সময়ের জন্য সরকারি পর্যায়েও খাদ্যের মজুত বাড়ানো হচ্ছে।

অন্যদিকে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকা বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থানে আছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৫-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘের পাঁচটি সংস্থা মিলে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সংস্থাগুলো হলো এফএও, ইফাদ, ডব্লিউএফপি, ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ। সংস্থাগুলোর এই প্রতিবেদনকে সিরিয়াস হিসেবে আমলে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।  

এ জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর সঙ্গে আমদানিও বাড়ানো হচ্ছে। পাঁচ সংস্থার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধু খাদ্য নিরাপত্তার সংকটই নয়-স্বাস্থ্যকর বা সুষম খাদ্য গ্রহণের দিক থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। এ বিষয়ে গত সাত বছরে অনেকটা উন্নতি হলেও এখনো দেশের ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পায় না। দেশের ১০ শতাংশের বেশি মানুষ অপুষ্টির শিকার। এ অবস্থা থেকে বেরোনোর জন্য বাংলাদেশকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার ৬.৩৩ লাখ টন ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬.৮৩ লাখ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫.৭২ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করেছিল। সেখানে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে ১২ লাখ ৯৬ হাজার টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি ব্যবস্থায় কোনো চাল আমদানি হয়নি, তখন শুধু ৭ লাখ ৮৪ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছিল। তবে সে বছর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ লাখ টনের মতো চাল আমদানি করা হয়। হিসাবে গত কয়েক বছরে খাদ্যশস্য আমদানি দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। এ জন্য বেড়েছে খাদ্যশস্য আমদানির ব্যয়ও। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদনের পাশাপাশি আমদানি করেও চাহিদা মেটাচ্ছে সরকার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন  বলেন, খাদ্য সংকট একটা বৈশ্বিক সমস্যা। এখানে বাজার পরিস্থিতি, উৎপাদন, সরবরাহ, দাম এবং নিয়ন্ত্রণের ওপর প্রভাব থাকে প্রভাবশালী দেশগুলোর। যার ওপর নির্ভর করে বিশ্ববাজার। ফলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও অনেক দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।  

ব্র্যাকের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশে দৃশ্যমান ক্ষুধা হয়তো নেই, কিন্তু চাপা ক্ষুধা আছে। মানুষ স্বেচ্ছা কৃচ্ছ্রের মধ্যে চলে গেছে। সেটা বাধ্য হয়েই তারা করছে। এ জন্য দেশের মানুষের খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে সেটা আপনি সাদা চোখে দেখতে পাবেন না। এর জন্য মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে। মানুষের জীবন ধারণের স্টাইল খেয়াল করতে হবে। এর জন্য শুধু আমাদের ব্যবস্থাপনা নয়-আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীও দায়ী বলে তিনি মনে করেন।  

জাতিসংঘের পাঁচ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের ৫৩টি খাদ্য সংকট পীড়িত দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ২৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি রয়েছে। এর মধ্যে তীব্র খাদ্য অনিরাপত্তার শিকার মানুষের সংখ্যা অনুযায়ী শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে নাইজেরিয়া, সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়া।

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।