ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

নাটোরে কাঁচা মরিচের কেজি ৩২০ টাকা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২৩
নাটোরে কাঁচা মরিচের কেজি ৩২০ টাকা!

নাটোর: নাটোরে একদিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ১০০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন বাজারে ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ।

অথচ রোববার (২৫ জুন) প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। সঠিকভাবে বাজার মনিটরিং না করায় সিন্ডিকেটের কারণে মরিচের দাম এতো বেড়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ পড়েছেন বিপাকে। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশসহ মরিচের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তবে ভালো দাম পেয়ে বেশ খুশি কৃষকরা।

সোমবার (২৬ জুন) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের আলাইপুর কাঁচাবাজার, স্টেশন বাজার, মাদরাসামোড় বাজারসহ বিভিন্ন উপজেলা সদরে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে একই তথ্য পাওয়া যায়।

স্থানীয়দের দাবি, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একটি সিন্ডিকেট হঠাৎ করেই মরিচের দাম বাড়িয়েছে। অন্যদিকে কৃষি সংশ্লিষ্টদের দাবি, অতিরিক্ত খরার কারণে মরিচ গাছের ফুল ঝরে গেছে এবার।

এবার মরিচের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে আমদানি কমেছে। এজন্য চাহিদার তুলনায় বাজারে মরিচের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে একদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০০ টাকা বাড়া অস্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করেন তারা।

নাটোর শহরের স্টেশন বাজার এলাকার আড়তদার মো. আরিফ বাংলানিউজকে জানান, বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। তারা বিভিন্ন মোকাম থেকে ২৫০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা দরে কাঁচা মরিচ পাইকারি কিনে আনছেন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৭০ টাকা থেকে ২৮০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছেন। সেই মরিচ বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা কেজি। বাইরে থেকে আমদানি করতে তাদের খরচও বেশি পড়ে যাচ্ছে।  

একই কথা জানালেন বেলাল হোসেন, কোরবান আলীসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী।

নাটোর শহরের কাঁচা বাজারে আসা মাহমুদা আফরোজ নামে এক ক্রেতা জানান, গত এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা দরে কিনেছেন। গতকাল সেই মরিচ ২২০ টাকা দরে নিয়েছেন। আজ মরিচ কিনতে এসে দেখেন ৩২০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি হচ্ছে।  

কাঁচা মরিচের বাজার দর নিয়ে শুধু ক্রেতারা নন, বিক্রেতারাও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সাইফুল ইসলাম নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, মরিচের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হচ্ছে। এতে তিক্ততা বাড়ছে।  

এমন তিক্ততার কথা জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুর রহমান, আরিফুল ইসলাম, নিমা রহমানসহ অনেকে। তারা কাচা মরিচের দাম বাড়ার জন্য বাজার মনিটরিং না করাকে দায়ী করেছেন।

নলডাঙ্গা উপজেলার সেনভাগ গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত কিছু দিন আগেও মরিচের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে অতিরিক্ত খরার কারণে মরিচ গাছ থেকে ফুল ঝরে গেছে। ফলে এখন ফলনটা একটু কম হচ্ছে। তবে দাম ভালো পাওয়ায় তা পুষিয়ে যাচ্ছে।  

তিনি বলেন, এবার সোয়া এক বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। প্রথম দিকে ৭০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে মরিচ বিক্রি করলেও এখন আড়তে পাইকারি বিক্রি করছি ২৫০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা কেজি।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বাংলানিউজকে জানান, অতিরিক্ত খরা ও রোদের কারণে মরিচ গাছের ফুল কিছুটা ঝরে যাচ্ছে। এজন্য ফলন কম হচ্ছে। তবে সার্বিক উৎপাদনে তেমন একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে না। মরিচের উৎপাদন যেমন ভালো হয়েছে, কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে দাম বেড়েছে। এতো  দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই, কারণ বাজারে চাহিদা মাফিক মরিচের সরবরাহ থাকার কথা। বিষয়টি বাজার মনিটরিং কমিটির দেখা দরকার।

ডিডি বলেন, চলতি খরিফ মৌসুমে জেলায় ২০৯ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষাবাদ হয়েছে। ৪ হেক্টর জমি থেকে মরিচ উত্তোলন হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৩ মেট্রিক টন হারে ফলন হচ্ছে। এ হিসাবে এবার প্রায় ৬২৭ মেট্রিক টন মরিচ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র সরবরাহ করা সম্ভব এবং কৃষকরাও লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০২৩
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।