মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় পড়ে গেছে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের মূল্য। সেখানে ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পারুয়াবিল কৃষকরা মিষ্টিকুমড়া, লাউ, ফুলকপি, টমেটো, বেগুন, শসা ও মরিচসহ সবজি আবাদ করছেন। স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ার আশা নিয়ে রোপণ করা সবজি এখন লোকসানে ফেলেছেন কৃষকদের। ফলে বাধ্য হয়ে এসব সবজি গরুকে খাওয়াচ্ছেন অথবা জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
কমলগঞ্জ আদমপুর ইউনিয়নের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, আমরা পারিবারিকভাবেই কৃষক। প্রতিবছরই চাষাবাদ করি। এবারের মতো ধরা আগে কখনো খায়নি।
তিনি বলেন, গত বছর আড়াই কিয়ার (৭৫ শতাংশ) জায়গার মাঝে মিষ্টিকুমড়া চাষ করে ১০ লাখ টাকা আয় হয়েছে। এবছর আমার এই জায়গায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিক্রি করেছি এক লাখ টাকার মতো। ক্ষেতে আরও লাখ টাকার মিষ্টিকুমড়া আছে। কিন্তু এই লাভে কীভাবে চলবো। তাছাড়া একটি মিষ্টিকুমড়া বাজারে বিক্রি করতে গেলে ২৫-৫০ টাকা দাম পাই না কিন্তু কিনতে গেলে ৭০-৮০ টাকার নিচে কেনা যায় না। লাউয়ের দাম এত কম যে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। আবার লাউ খেলে গরুর ঠান্ডা লেগে যায়। তাই জমিতেই লাউসহ বিভিন্ন সবজি নষ্ট হচ্ছে।
এই ইউনিয়নের অপর কৃষক মুকেত মিয়া বলেন, প্রতিবছর শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে, দামও ভালো পেতাম। লাভের আশায় চলতি মৌসুমে অনেকেই সবজি চাষাবাদ করেছে। কিন্তু এ বছর নানা জাতের সবজিতে বাজার ভরে যাওয়ায় উৎপাদন ভালো হলেও মুনাফার অঙ্ক শূন্যের ঘরে। ভয়াবহ বন্যার কারণে আমাদের গতবারের ফলন খারাপ হয়েছে। এবার বাজারে দাম কম পাওয়ায় আমাদের সবজি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
উত্তরবাগ গ্রামের ফটিক মিয়া নামের এক কৃষক ও পাইকারি বিক্রেতা বলেন, আমরা সবাই কৃষক। আমাদের কৃষিপণ্য সারা দেশে যায়। কিন্তু প্রতিদিন আমাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছি। আমরা মিষ্টিকুমড়া আড়তে বিক্রি করতে গেলে ৩০-৬০ টাকার বেশি দাম পাই না। আমরা চাই কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাক। সরকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। সার ও কীটনাশকের দামও হু-হু করে বাড়ছে।
কমলগঞ্জ পৌর এলাকার চনর মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে দাম নেই, পাইকারী ব্যবসায়ীরাও আসছে না। তাই জমিতে নষ্ট হচ্ছে সবজি। এসব সবজি বিক্রি করে আমাদের পরিবহন ও শ্রমিক খরচও উঠছে না। বিশেষ করে ঋণ নিয়ে সবজি আবাদকারী কৃষকরা বেশি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়েন্ত কুমার রায় বলেন, কমলগঞ্জে এবছর ১৭শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার মাধবপুর, আদমপুর, রানীবাজার, ইসলামপুর এলাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়া মার্কেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেব যেন তারা ন্যায্যমূল্য পায় এবং ভোক্তাদেরও ক্ষতি না হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২৫
বিবিবি/এএটি