ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

পাইলট প্রকল্পে কুচিয়া-কাঁকড়ার চাষ

সুকুমার সরকার, সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৮ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
পাইলট প্রকল্পে কুচিয়া-কাঁকড়ার চাষ ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা: রফতানিতে বহুদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে চিংড়ি বা চিংড়ি শিল্প। এবার এর পাশে যুক্ত হচ্ছে কুচিয়া-কাঁকড়া।

দেশে-বিদেশে অন্যান্য মাছের তুলনায় কুচিয়া-কাঁকড়ার দাম অনেক বেশি। ফলে এর উৎপাদন বাড়িয়ে রফতানি করে বেশি আয় করা সম্ভব।

খাদ্য হিসেবে কুচিয়া মাছে আমিষের পরিমাণ বেশি। কুচিয়ায় হজম শক্তি বাড়ায়। ব্যাথা নাশ করে ও উচ্চ রক্তচাপ কমায়। সমতলের অধিকাংশ লোকেরা না খেলেও আদিবাসী মানুষের কাছে কুচিয়ার কদর ব্যাপক।

বাংলাদেশ আগে থেকেই বিদেশে সামুদ্রিক কাঁকড়া রফতানি করে আসেছে। তবে তার পরিমাণ খুবই অল্প। যে কারণে সরকার কুচিয়ার সঙ্গে কাঁকড়ার উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশে রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগী হয়েছেন। সরকারের লক্ষ্য একই জলাশয়ে কাঁকড়া ও কুচিয়ার চাষ করা।

কাঁকড়া ও কুচিয়ার চাষের জন্য সরকার দেশের পিছিয়ে থাকা আদিবাসীদের সম্পৃক্ত করার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। আর্থিকভাবে তাদের স্বচ্ছলতা এনে জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটানোর তাগিদ দিয়েছেন। যেন তাদের অন্যের অপর নির্ভর করতে না হয়।

কুচিয়া-কাঁকড়ার জন্য চিংড়ির মতো উপকূলবর্তী এলাকা বা বিশাল লবণাক্ত জলের প্রয়োজন পড়ে না। কাঁকড়া-কুচিয়ার চাষ পুকুর, ডোবা, নালা ও ধানক্ষেত ছাড়াও ঘরের পাশের ছোট পতিত জমিতে অনায়াসে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।

আগে দেশের প্রায় সব স্থানেই প্রচুর কাঁকড়া-কুচিয়ার দেখা মিলত। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে শিকার ও ক্রমান্বয়ে জলাশয় হ্রাস পাওয়ায় এই দু’টি মাছের প্রজাতি হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবে এখনও প্রতিদিন গোপালগঞ্জের বিস্তৃত বিল থেকে কুচিয়া আহরণ করতে দেখা যায়।

কাঁকড়া-কুচিয়া চাষাবাদের জন্য সরকার একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদফতরের ‘বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. বিনয় চক্রবর্তী।

বাংলানিউজকে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তারা অ্যাকুয়া কালচার পদ্ধতিতে দেশের নির্বাচিত ২৯ জেলার ৬৩টি উপজেলায় কুচিয়া-কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন।

বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কুচিয়া মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন কুচিয়া শিকার করে তাদের জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন বলেও জানান বিনয় চক্রবর্তী।

আদিবাসী এলাকায় অনেক ছোট পুকুর, জলাশয় ও ধানক্ষেত রয়েছে। যেগুলো মাছ চাষের আওতায় আসেনি। এসব জলাভূমিতে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটিয়ে আদিবাসী সমাজের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কুচিয়ার চাষ বাড়ানো যায়।

অপরদিকে, সমতলের লোকেরাও বিদেশে রফতানির লক্ষ্য রেখে কাঁকড়া-কুচিয়ার চাষ করে আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হতে পারেন।

‘বাংলাদেশের নির্বাচিত এলাকায় কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ এবং গবেষণা প্রকল্পাধীন জেলাগুলো হলো- গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, শেরপুর, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর, নওঁগা, বগুড়া, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষণবাড়ীয়া, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও নোয়াখালী।

কুচিয়ার সম্ভাব্য আবাসস্থল

পুকুর পাড় বা খামারের উঁচু জায়গায় ৯, ৫  কিংবা ৩ বর্গমিটার আয়তনের গর্ত করতে হবে। গর্তের আয়তন অনুযায়ী সমপরিমাণ আয়তনের পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর ত্রিপল বিছিয়ে দিতে হবে। তলদেশে প্রথম স্তর ১০ সেন্টিমিটার ঘনত্বে কাদা মাটি (এ‍ঁটেল ৮০ শতাংশ ও দোঁয়াশ ২০ শতাংশ) মিশ্রিত, দ্বিতীয় স্তর ১০ সেন্টিমিটার ঘনত্বে চুন, গোবর, কচুরিপানা ও খড়মিশ্রিত কমপোস্ট, তৃতীয় স্তর ২ সেন্টিমিটার ঘনত্বে ৭ দিনের শুকনো কলাপাতা এবং ওপরের চতুর্থ স্তর ১০ সেন্টিমিটার ঘনত্বে কাদা মাটি (এটেল ৮০ শতাংশ ও দোঁয়াশ ২০ শতাংশ মিশ্রিত) দিয়ে স্তরে-স্তরে সাজাতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৬
এসএস/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।