ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

দুর্নীতির আখড়ায় মৃতপ্রায় দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামার!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৬
দুর্নীতির আখড়ায় মৃতপ্রায় দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামার! দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামার

খাদ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত খাদ্য নেই। পরিমাণ মতো খাদ্য না পেয়ে হাড্ডিসার হয়ে পড়েছে প্রাণীগুলো।

বগুড়া: খাদ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত খাদ্য নেই।

পরিমাণ মতো খাদ্য না পেয়ে হাড্ডিসার হয়ে পড়েছে প্রাণীগুলো। অনাহারে-অর্ধাহারে অনেক প্রাণীর অবস্থা অত্যন্ত করুণ ও মৃতপ্রায়। নানা রোগেও জর্জরিত সেগুলো।  
 
মৃতপ্রায় একটি গাভিকে সেড থেকে কয়েকজন ধরাধরি করে বাইরে এনেছেন। পাশের একটি গাছতলায় শুইয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ সময় অনাহারে-অর্ধাহারে থাকায় গাভিটির এমন অবস্থা হয়েছে।   
 
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামারের চিত্র এটি। প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো থাকলেও প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২১ বছর পরও লাভের মুখ দেখতে পারেনি খামারটি।  
অভিযোগ উঠেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দায়িত্বহীনতায় খামারের অনুকূলে সরকারি বরাদ্দের সিংহভাগ টাকাই লুটপাট হচ্ছে। দুর্নীতির আ‍ঁখড়ায় পরিণত হয়ে প্রাণীগুলোর মতোই পুরো খামারটিই এখন মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে।  
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামারটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৯১ সালে। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পশ্চিমপাশ ঘেঁষে মহিপুর এলাকায় ৫৩ দশমিক ১ একর জমিতে ১৯৯৩ সালের ১৪ এপ্রিল খামারটি স্থাপিত হয়।  
 
১৯৯৫ সালের জুনে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত খামারটি উদ্বোধন করা হয়। ৬৮ জনের জনবল ও ২৩৩টি প্রাণী নিয়ে খামারটির যাত্রা শুরু হয়।  বর্তমানে কর্মকর্তা ও হাজিরা শ্রমিক মিলে মোট ৫৮ জন খামারে কর্মরত। দুধেল গাভিসহ প্রাণী রয়েছে ২৩১টি।  
সরকারি এ খামারের একটি গাভি থেকে গড়ে প্রতিদিন মাত্র চার থেকে সাড়ে চার লিটার দুধ পাওয়া যায়। অথচ ব্যক্তিগত খামারে একই ধরনের একটি গাভি থেকে ১৪-১৫ লিটার দুধ পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।  
 
এছাড়া খামারের ২৪একর জমিতে তিন জাতের ঘাষ চাষ করা হয়। এর মধ্যে দেড় একরে পারা, দুই একরে জার্মান ও বাকি জমিতে নেপিয়ার জাতের ঘাস রয়েছে।  
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৬০০ প্রাণী ধারণা ক্ষমতা সম্পন্ন খামারে রয়েছে ১০টি সেড। সিংহভাগ সেড ফাঁকা। মাত্র ৩-৪টি সেডে প্রাণী রয়েছে। সংখ্যাও অত্যন্ত নগণ্য। সে প্রাণীগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। হাড্ডিসার হয়ে যেন দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না। অনেক প্রাণী সেডের ভেতরেই শুয়ে আছে।  
খাবারের স্থানে খাবার নেই। ড্রেনের মধ্যে দেখা মেলে সামান্য পানির। সেখানে কিছু খড়ও পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাও শ্রমিকদের চলাচলের ড্রেনে। যেখানে প্রাণীর মুখ পৌঁছে না। ফলে প্রাণীগুলো তা খেতেও পারে না। যা আছে তাই চেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটানোর চেষ্টা করছিলো কিছু গাভি। বাকিরা শুয়ে এদিক-ওদিক তাকাতাকি করছিলো।  

পাশেই মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছিল একটি গাভি। যাকে সেবা দিতে ব্যস্ত ছিলেন খামারের কর্মচারীরা।  

এগুলো এ খামারের নিত্যদিনের দৃশ্য বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।   
  
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিটি দুধেল গাভিকে দিনে আড়াই কেজি খাদ্য খাওয়ানোর নিয়ম। এর মধ্যে রয়েছে গমের ভূষি, ভুট্টার ভূষি, ডালের ভূষি, ছোলা, তিলের খৈল, সরিষার খৈল ও বিভিন্ন কলাইয়ের ভূষি। কাগজে-কলমে এ খাদ্য তালিকা ঠিক থাকলেও বাস্তবে প্রাণীগুলোকে এ নিয়মে খাদ্য না খাওয়ানোর অভিযোগ রয়েছে।  
 
আবার খামারে তিন জাতের পর্যাপ্ত ঘাস চাষ করা হয়। কিন্তু খামারের প্রাণীগুলোর কপালে সেই ঘাষ জোটে না। ঘাষগুলো বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এভাবে গো-খাদ্য, ঘাষ ও দুধ বিক্রির টাকা দিনের পর দিন নানা কায়দায় লুটপাট চলছে এই খামারে। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই।  
 
দুগ্ধ ও গবাদি প্রাণী উন্নয়ন খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণী উৎপাদন কর্মকর্তা আলী রেজা আহমেদ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো সময়ের চেয়ে খামারটি ভালো চলছে। প্রাণীগুলোও অনেক ভালো আছে। নিয়মানুসারে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।  
 
তিনি আরো বলেন, যার প্রাণ আছে, তার রোগ হবেই। রোগাক্রান্ত প্রাণীগুলোকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। দুধ বিক্রিতে কোনো অনিয়ম করা হয় না। দরপত্র আহ্বান করে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে দুধ বিক্রি করা হয়। ঘাসও নিয়ম মেনেই বিক্রি করা হয় বলেও দাবি করেন খামারের এই কর্মকর্তা।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এমবিএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।