ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ব্লাস্ট আক্রমণে ব্রি-৬১ ও ব্রি-২৮ বন্ধের সুপারিশ খুবি’র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
ব্লাস্ট আক্রমণে ব্রি-৬১ ও ব্রি-২৮ বন্ধের সুপারিশ খুবি’র খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষ

খুলনা: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ধানে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণের কারণে ব্রি-৬১ ও ব্রি-২৮ নামক ধান বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এ দু’টি জাতের ধানকে সংবেদনশীল এবং এ অঞ্চলের জন্য অনুপযোগী উল্লেখ করে তা বন্ধের সুপারিশ করা হয়।

সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘ধানের ব্লাস্ট রোগের কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়।

বর্তমানে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বোরো ধানের ক্ষেত্রে ব্লাস্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন তার দায়িত্ববোধ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. রেজাউল ইসলাম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. বশির আহমেদ ও প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী।

উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. সরদার মো. শফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. ইয়াসিন আলী, প্রফেসর ড. মনিরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মাহাতালাত আহমেদ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পাইরিকুলারিয়া অরাইজী নামক ছত্রাক থেকে বীজ, বাতাস ও পোকার মাধ্যমে ধানে ব্লাস্ট আক্রমণ করছে। এ রোগ ধান গাছের তিনটি অংশে আক্রমণ করে। সে অনুযায়ী এ রোগকে পাতা ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও শিষ ব্লাস্ট বলা হয়ে থাকে।

পাতা ব্লাস্ট হলে চারা অবস্থায় ধানের পাতা আক্রান্ত হয়। প্রথমে পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতির দাগ সৃষ্টি করে। পরে এ দাগ দু’প্রান্তে লম্বা হয়ে চোখের আকৃতিধারণ করে। কয়েকটি দাগ একত্রে মিশে পাতাটিকে মেরে ফেলতে পারে। এভাবে পাতা আক্রান্ত হলে গাছটি ধীরে ধীরে ছাই রঙের হয়ে মরে যায়। গিট ব্লাস্টে ধানগাছে থোড় বের হওয়ার আগে থেকেই দেখা দেয়। এ অবস্থায় রোগ জীবাণু ছত্রাক ধান গাছের কাণ্ডের গিঁটে এবং খোল ও পাতার সংযোগস্থলে আক্রমণ করে কালো দাগ সৃষ্টি করে পচিয়ে ফেলে। সেখানে পরে সাদা সাদা ছত্রাক দেখা যায়। কালক্রমে আক্রান্ত গিঁটের ওপরের অংশ ভেঙে ঝুলে পড়ে।  

এছাড়া শিষ ব্লাস্ট শিষের গোড়ায় কালো দাগের সৃষ্টি করে গোড়া পচিয়ে ফেলে। ফলে শিষটি গোড়ার দিকে শুকিয়ে যায়। এতে বীজ চিটা বা অসুস্থ হয়। এটি মারাত্মক ক্ষতিকর। যার ফলে ৮০ শতাংশ ফলন কমে যেতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ধান আক্রমণপ্রবণ জাতের হলে, মাটি বেলে জাতীয় ও শুকনো হলে, মাটিতে পটাশ সার কম ও ইউরিয়া সার (নাইট্রোজেন) বেশি হলে এবং আবহাওয়া রোগের অনুকূলে হলে অর্থাৎ রাতে ঠাণ্ডা, দিনে গরম ও সকালে পাতায় শিশির পড়লে আক্রমণের আশংকা বেড়ে যায়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।  

এর মধ্যে বোরো মৌসুমে বিআর-৩, বিআর-১৪, বিআর-১৬ ও ব্রি ধান-৪৫, আউশ মৌসুমে বিআর-৩, বিআর-১৫, বিআর-২০, বিআর-২১, ব্রি ধান-৪৩, আমন মৌসুমে বিআর-৫, বিআর-১০, ব্রি ধান-৩২, ব্রি ধান-৩৩ এবং ব্রি ধান-৪৪ উল্লেখযোগ্য।

সংবাদ সম্মেলনে বীজতলা অথবা মাঠে রোগ দেখা মাত্র জমিতে পর্যাপ্ত পানি সংরক্ষণ, আক্রান্ত জমিতে হেক্টর প্রতি ৮শ’ মিলিলিটার (বিঘা প্রতি ১শ’ মিলিলিটার) হিনোসান অথবা হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ৫ কেজি (বিঘা প্রতি ৩শ’ গ্রাম) বেনলেট বা টপসিন এম স্প্রে করতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কৃষকদের সময়মতো রোগের অনুকূল আবহাওয়া সম্পর্কে অবহিত করা, কৃষকদের প্রশিক্ষণ এবং উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে আরও বেশি কৃষিবিদ ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নিয়োগের ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৭
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।