ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

হাড়িভাঙার মাতৃগাছ শতবর্ষেও ফল দেয়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৭
হাড়িভাঙার মাতৃগাছ শতবর্ষেও ফল দেয়! শতবর্ষী হাড়িভাঙা আম গাছ/ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর থেকে: ঐতিহ্যবাহী হাড়িভাঙা আমের উৎপত্তি সন্ধান করতে গিয়ে ধরা দিয়েছে সাফল্য। প্রথমে পাওয়া যায় একটি মাতৃগাছের সন্ধান। গাছটি থেকেই হাজার হাজার চারাগাছ এখন মাতাচ্ছে গোটা রংপুর অঞ্চল। নতুন নতুন গাছের ভিড়ে আলোচনায় না থাকলেও এ মাতৃগাছটি এখনও ফল দিচ্ছে অগোচরে।

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলায় মিলবে শতবর্ষী এ মাতৃগাছটি। উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানী মসজিদের পিছনে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি।

ফলও দিচ্ছে নিয়মিত।

হাড়িভাঙা আম উংপাদনের কেন্দ্রস্থল খোড়াগাছে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় গাছটির সন্ধান।

জানা যায়, হাড়িভাঙা আমের গোড়াপত্তন করেন তেকানী গ্রামের জনৈক কামার উদ্দীন। তিনি মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া ছড়ান এলাকা থেকে নিয়ে এসেছিলেন হাড়িভাঙা আমের চারাগাছটি। কামার উদ্দীন মারা গেছেন ৫-৬ যুগ আগে। পাওয়া গেলো তার নাতি আনসার আলীকে।

ষাটোর্ধ্ব আনসার আলী জানান, তারা যখন ছোট তখন তার দাদা হাড়িভাঙা আমের গল্প শোনাতেন। দাদা একটি চারাগাছ লাগিয়েছিলেন জঙ্গলের মধ্যে। মিষ্টি, সুস্বাদু- তাই নির্জন জায়গায় লোকচক্ষুর আড়ালে লাগানো হয়েছিল চারাগাছটি। আমের মৌসুমে ৬/৭ বছরে একদিন খোঁজ পেয়েছিলেন সেই গাছের। তখন গাছটি ফল দেয় নিয়মিত।

দাদার মুখের গল্প স্মৃতিচারণ করে আনসার আলী জানান, তার দাদার ছোটবেলায় ফলের চারা লাগানোর শখ ছিল। বালুয়া ছড়ানে গিয়ে একটি সুস্বাদু আমের সন্ধান পান তিনি। স্থানীয়রা চারা লাগানোর পরামর্শ দেন। পরে একটি ছোট চারাগাছের সঙ্গে জোড় কলম করেন। দুই ভাইয়ের মালিকানায় থাকা ওই গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে কয়েক দশক আগেই।

তবে তেকানী গ্রামের এ গাছটি এখন মাতৃগাছ হিসেবে পরিচিত। এ গাছ থেকে তৈরি হাজার হাজার চারাগাছ বিস্তার লাভ করেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

রোববার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছোট-মাঝারি অনেক গাছগাছালির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে গাছটি। ডালপালা বিস্তার করেছে চারদিকে। গাছটির গোঁড়াও পাঞ্জা করে ধরতে প্রয়োজন হবে দু’জন। গাছের ডাল-পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে আম। তবে গাছ পুরনো হওয়ায় আম ছোট ছোট।

তবুও অন্তত ১০-১৫ মণ আম পাওয়া যাবে বলে জানান স্থানীয়রা।

কামার উদ্দীনের ছেলে আফজালের জমিতে থাকা গাছটি সংরক্ষণের উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

শুধু মিঠাপুকুরই নয়, বদরগঞ্জ, সদর উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে বিস্তার লাভ করেছে হাড়িভাঙা চাষ। এখন আমচাষ চোখে পড়ার মতো।

হাড়িভাঙা নামকরণ প্রসঙ্গে আনসার আলী জানান, তার দাদা গল্প বলেছিলেন হাড়ির মধ্যে রাখা আম চারা হিসেবে বেড়ে ওঠে। হাড়ি ভেঙে গাছটি বের হয়েছিল বলে নাম 'হাড়িভাঙা'।

সেই হাড়িভাঙা আম এখন খ্যাতি কুড়িয়েছে সারাদেশ, সুস্বাদু গুণের কারণে হাড়িভাঙার চাহিদা এখন তুঙ্গে।

***রংপুরের ঐতিহ্য সুস্বাদু আম ‘হাড়ি ভাঙা’

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৬ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।