ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বিদেশি কোম্পানির দৌরাত্ম্যে বিপাকে পোল্ট্রি শিল্প

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
বিদেশি কোম্পানির দৌরাত্ম্যে বিপাকে পোল্ট্রি শিল্প

ঢাকা: বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের ব্যবসায় নিয়োজিত বিদেশি কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্যে বিপাকে পড়েছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প। বর্তমানে ৭টি বিদেশি কোম্পানি সরকারের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের ব্যবসা করছে। কিন্তু এই সাতটি বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারবে কিংবা কি পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়ে যেতে পারবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া বাজার দখলের কারণে দেশীয় কোম্পানিগুলো বাজার হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) বলছে, বাংলাদেশের পোল্ট্রি ব্যবসার ৪০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিদেশি ৭টি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বিদেশি সাতটি কোম্পানি হলো ভিএইচ গ্রুপ, গোদরেজ, সেগুনা, টাটা, অমৃত গ্রুপ, সিপি এবং নিউ হোপ।

কোম্পানিগুলোর কেউ বাচ্চা উৎপাদন, ডিম উৎপাদন কিংবা মুরগি উৎপাদনের অনুমতি নিয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিদেশি কোম্পানিগুলো বর্তমানে সবকিছুই করছে। ফলে দেশীয় কোম্পানিগুলো বাজার হারাচ্ছে। এছাড়া বিদেশি কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ কি পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারবে, মোট লভ্যাংশের কত শতাংশ নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারবে এবং কত শতাংশ এদেশে খরচ কিংবা বিনিয়োগ করতে পারবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই।

জানা যায়, বাংলাদেশে বেসরকারি উদ্যোগে পোল্ট্রি খামার শুরু হয় ১৯৬৬ সালের দিকে। বর্তমানে এ শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে ওঠা প্রথম পোল্ট্রি খামার ‘এগ অ্যান্ড হেনস লি.’ কিনে নেয় থাইল্যান্ডের সিপি কোম্পানি। বর্তমানে চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিরাজগঞ্জসহ দেশের ১৮টিরও অধিক স্থানে নিজস্ব খামার, হ্যাচারি ও ফিডমিল স্থাপন করেছে সিপি। সুগুনা কোম্পানি বিনিয়োগ করেছে ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলার রাজ পোল্ট্রি, গোল্ডেন চিকসসহ ১০টিরও অধিক খামারে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যে ১৫টিরও বেশি দেশীয় কোম্পানি লিজ নিয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিগুলোও তাদের ব্যবসা বড় করতে কাজ করে যাচ্ছে।  

এ বিষয়ে ব্রিডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাবু বাংলানিউজকে বলেন,  সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু ব্যবসা করার কোনো নীতিমালা নেই। পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে ৬০ লাখ মানুষ জড়িত। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিজেদের মতো করে বাচ্চা উৎপাদন করছে,ডিম বিক্রি করছে আবার মুরগিও বিক্রি করছে। কিন্তু বিদেশি কোম্পানিগুলোর সবকিছু করার অনুমতি নেই। আবার সরকার বিদেশি কোম্পানিগুলোর প্রতি নজরও রাখছে না। এছাড়া বিদেশি কোম্পানিগুলো ২-৩ শতাংশ হারে ব্যাংক ঋণ সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। অপরদিকে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে ১০-১২ শতাংশ হারে ব্যাংক ঋণ সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। বিদেশি কোম্পানিগুলো যেভাবে ব্যবসা করছে সেভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো পারছে না। ফলে পোল্ট্রি শিল্পের বাজার অনায়াসে দখল করে নিচ্ছে বিদেশি কোম্পানি।

এ বিষয়ে বিদেশি পোল্ট্রি কোম্পানি সিপি ও নিউহোপের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

বিদেশি পোল্ট্রি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা করতে কি কি অনুমতি নিয়েছে জানতে চাইলে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা.মো.আইনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, কয়টি বিদেশি কোম্পানি আছে সেটা জানি না। তবে বিদেশি কোম্পানি আছে। আর আমার পক্ষে বিদেশি কোম্পানিগুলোর কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।    

পোল্ট্রি শিল্পের ব্যবসা করা বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কতো বিনিয়োগ করতে পারবে কিংবা কি পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়ে যেতে পারবে জানতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে কয়টি বিদেশি কোম্পানি আছে জানি না। তারা কিভাবে এসেছে বা কাজ করছে সেটাও তিনি জানেন না। তাই এই মুহূর্তে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪,২০১৭
এসজে/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।